রাজশাহীতে বাদীর পর আসামিরাও সংবাদ সম্মেলনে
![]() |
চারঘাট থানা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জামিনে থাকা আট আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন বুধবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাজশাহীর চারঘাটে ১৬ বছর আগের এক হত্যা মামলা নিয়ে শুরু হয়েছে দোষারোপের লড়াই। মামলার বাদী ও আসামিরা এখন পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করছেন। আসামি বিএনপির আট নেতা–কর্মীর দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাঁদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আর বাদী বলছেন, এটি রাজনৈতিক মামলা নয়; টাকার বিনিময়ে মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। আসামিদের অব্যাহতির জন্য তিনি সুপারিশ করেছেন।
আজ বুধবার সকালে চারঘাট থানা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জামিনে থাকা আট আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। লিখিত বক্তব্যে মামলার ১৪ নম্বর আসামি ও রায়পুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাজদার রহমান বলেন, ‘২০০৯ সালের ৬ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডে দু–একজন জড়িত থাকলেও রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে ২২ জনকে আসামি করা হয়। আমরা আটজন বিএনপি করার অপরাধে তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের নির্দেশে আসামি হই। মামলার বাদী ও সাক্ষীরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী।’
সাজদার রহমান দাবি করেন, ঘটনার দিন তিনি স্কুলেই ছিলেন। তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আবু সাঈদ চাঁদ বিষয়টি জানেন। অসহায় নেতা–কর্মীদের বাঁচাতে গ্রামবাসীর অনুরোধে তিনি অব্যাহতির সুপারিশ করেছেন। এখানে কোনো টাকার লেনদেন হয়নি। একটি মহল এখন চাঁদকে জড়িয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
মামলার আরেক আসামি, ডাকরা ডিগ্রি কলেজের পিয়ন ও বিএনপি কর্মী ইমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘এই মিথ্যা মামলার কারণে আমার সংসার ধ্বংস হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে আমি ভয়ে কলেজেও ঢুকতে পারিনি।’
২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর চারঘাটের রায়পুর বাজারে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন মামলার বাদী রঞ্জু আহমেদ। তাঁর চিৎকার শুনে ভাই মনিরুল ইসলাম, মো. মন্টু ও বাবা শামসুল হক এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা তাঁদের ওপর চড়াও হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত মন্টু হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। ওই দিনই রঞ্জু বাদী হয়ে ২২ জনকে আসামি করে চারঘাট থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি এখন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৩ আদালতে বিচারাধীন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আগামী ১৪ অক্টোবর যুক্তিতর্কের দিন ধার্য আছে।
আসামিদের সংবাদ সম্মেলনের দুদিন আগে, গত সোমবার রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন মামলার বাদী রঞ্জু আহমেদ। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডটি দুটি পরিবারের মধ্যে পূর্বশত্রুতার জের। এজাহার বা অভিযোগপত্রে রাজনৈতিক কোনো বিষয় উল্লেখ নেই। মামলাটি নিষ্পত্তির পথে থাকতেই আসামিরা এটিকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে তুলে ধরার অপচেষ্টা করছে। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ প্রত্যেক আসামির আবেদনপত্রে ‘জোর সুপারিশ করছি’ লিখে স্বাক্ষর করেছেন।
নিজেকে ও পরিবারকে বিএনপির সমর্থক দাবি করে রঞ্জু বলেন, ‘প্রথমে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত এক ইউপি চেয়ারম্যান ৯ বিঘা জমির বিনিময়ে আপসের প্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় সম্প্রতি আবু সাঈদ নিজে আমাদের বাড়িতে এসে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নিতে চাপ দেন।’
রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘যে আটজনের জন্য সুপারিশ করেছি, তাঁরা বিএনপি করেন। ওই হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁরা নিজ নিজ কর্মস্থলে ছিলেন। এটা আমিসহ এলাকার সবাই জানি। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে তাঁদের মামলায় আসামি করা হয়েছে।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন