[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

কুমিল্লায় প্রবাসীর স্ত্রীকে মারধর, সালিসে ‘তালাক’ ও আরেক পুরুষের সঙ্গে বিয়ে

প্রকাশঃ
অ+ অ-
নারী নির্যাতন | প্রতীকী ছবি

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে প্রবাসীর স্ত্রীকে হাত বেঁধে মারধর করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য। উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটেছে পাঁচ দিন আগে। মঙ্গলবার রাতেই ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রবাসীর স্ত্রীকে নির্যাতনের পরপরই গত শুক্রবার ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে স্থানীয়ভাবে সালিস বসে। সেখানে প্রবাসীর সঙ্গে ওই নারীর ‘বিবাহবিচ্ছেদ’ ঘটানো হয় এবং তাঁকে আরেক পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়।

ইউপি সদস্য বজলুর রহমান ওই ঘটনার সাথে যুক্ত। তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউপির সদস্য। সালিসে নির্যাতনের শিকার নারীকে বিল্লাল হোসেন (৪২) নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিল্লালের প্রথম স্ত্রীর চার মেয়ে আছে। আর নির্যাতনের শিকার ওই নারীর দুই ছেলে রয়েছে, যার মধ্যে ছোটটির বয়স তিন বছর।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, দুই হাত বেঁধে ওই প্রবাসীর স্ত্রীকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন বজলুর রহমান। লাঠির আঘাতে নারী চিৎকার করছেন এবং বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন। একপর্যায় তাঁর চুলও ধরে টানাহেঁচড়া করা হয়। এ সময় তাঁকে বিভিন্নভাবে গালমন্দ করা হয়। একই সময়ে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে আটক ব্যক্তি পাশেই বসে ছিলেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১৬ অক্টোবর রাত একটার দিকে প্রবাসীর ঘরে ওই নারী ও বিল্লাল হোসেনকে আটক করা হয়। এরপর বিল্লালকে স্থানীয়রা মারধর করে আটকে রাখেন। একপর্যায় সেখানে উপস্থিত ইউপি সদস্য বজলুর রহমান ওই নারীর হাত বেঁধে মারধর শুরু করেন। পরদিন গ্রামবাসীকে নিয়ে সালিস বৈঠক বসানো হয়।

সালিসে প্রথমে প্রবাসীর সঙ্গে ‘বিবাহবিচ্ছেদ’ ঘটানো হয়। পরে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে আটক থাকা বিল্লালের সঙ্গে ওই নারীকে বিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বলেন, 'ওই নারী আমার ভাতিজার স্ত্রী। প্রায় আট বছর ধরে তাঁদের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক চলছিল। গত বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে গ্রামের লোকজন তাদের হাতেনাতে ধরেন। রাত দেড়টার দিকে আমি সেখানে পৌঁছে চরম উত্তেজনা দেখি। এর মধ্যে গ্রামের লোকজন আটক হওয়া বিল্লালকে মারধর করেন। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে ভাতিজার স্ত্রীকে একটি চিকন লাঠি দিয়ে চার থেকে পাঁচটি আঘাত করি। তখন আমার প্রতিপক্ষ কেউ ভিডিও করে। আজ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।' 

বজলুর রহমান আরও বলেন, 'ঘটনার পরদিন শুক্রবার সকালে গ্রামে প্রায় ৩০০ মানুষ সালিসে বসে। সকলের সিদ্ধান্তে ওই নারীর স্বামীর সঙ্গে তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটানো হয়। এরপর পাঁচ লাখ টাকা কাবিনে, যার সঙ্গে ওই নারীকে হাতেনাতে ধরা হয়েছিল, তার সঙ্গে তাঁকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।' 

নির্যাতনের শিকার ওই নারীকে জানতে চাওয়া হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'ঘটনাটি কয়েক দিন আগের। গতকাল রাতে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তবে ভুক্তভোগী নারী বা তাঁর পক্ষে কেউ এ ঘটনায় অভিযোগ করতে রাজি হচ্ছেন না। এরপরও পুলিশ ঘটনায় জড়িত ইউপি সদস্য বজলুর রহমানকে আটক করার চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন