[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ময়মনসিংহে বাড়ি ভাড়া-জমি বিক্রিতে ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

প্রকাশঃ
অ+ অ-
প্রতারণা | প্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহ নগরে সম্প্রতি বাড়ি ভাড়া দেওয়ার বিজ্ঞাপন, জমি বিক্রির প্রলোভন কিংবা মুঠোফোনে সম্পর্ক তৈরি করে মানুষকে ফাঁদে ফেলার ঘটনা বেড়ে চলেছে। আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাসায় গেলে জোরপূর্বক নারীদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলে ‘ব্ল্যাকমেল’ করা হয়। একপর্যায় টাকাপয়সা হাতিয়ে নেওয়া হয়।

ময়মনসিংহে এমন চারটি ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ ইতিমধ্যে একাধিক চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে।

ময়মনসিংহ মহানগর সুজনের সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, 'বর্তমান সময়ে শহরে একটি আলোচিত অপরাধের নাম হানি ট্র্যাপ। এই অপরাধে তরুণীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে কাদের দেওয়া হচ্ছে, কারা আসছে, কারা যাচ্ছে—এই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে না। প্রশাসনেরও তদারকি নেই। এটি ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আগে প্রশাসন ও অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।' 

ফেসবুকে ‘টু-লেট’ বিজ্ঞাপন দেখে ১১ সেপ্টেম্বর নগরের গুলকিবাড়ী এলাকার ফখরুজ্জামান টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় গিয়েছিলেন আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্র নাজমুল হাসান। সেখানে পৌঁছাতেই চার তরুণী ও চার তরুণ অস্ত্রের মুখে তাঁকে আটক করেন। এরপর মারধর করে তার সম্পদ লুট করা হয়, অভিযোগ করেছেন নাজমুল। মামলার পর পুলিশ সাদিয়া জাহান ওরফে মেঘলা এবং ফারিয়া আক্তার ওরফে পায়েল নামে দুই তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত ২ জুন নগরের মাসকান্দা এলাকা থেকে প্রাইভেট কারচালক স্বপন মিয়া চাকু দেখিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে নগরের আকুয়া গরুখোঁয়াড় মোড়ের একটি ফ্ল্যাটে রাখা হয়। সেখানে একটি কক্ষে এক নারীর সঙ্গে তার ছবি ও ভিডিও নেওয়া হয়। পরে সেসব ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। স্বপন মিয়া শেষ পর্যন্ত স্ত্রীকে ফোন করে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা এনে দেন এবং ছাড়া পান। মামলায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। পুলিশ জানায়, সেই মামলার ৫ নম্বর আসামি ছিলেন মো. নূর উদ্দিন আকন্দ (৩৮)। তিনি আকুয়া এলাকায় নিজের সিন্ডিকেট গড়ে তুলে মাদক, অপহরণ ও হানি ট্র্যাপের ঘটনা পরিচালনা করতেন।

গত ৮ এপ্রিল ময়মনসিংহে এসে অপহরণের শিকার হন সিলেটের জকিগঞ্জের জাকির হোসেন। ৯ এপ্রিল থানায় মামলা হলে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ নূর উদ্দিন আকন্দকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রমাণ পান। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর নূর উদ্দিনকে দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

ময়মনসিংহ ৩ নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবুল হোসেন বলেন, 'নূর উদ্দিন আকন্দের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণসহ ১৭টি মামলা আছে। মেয়েদের সঙ্গে ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করা, অপহরণ এবং পরিবার ও বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায়—সবই তার চক্রের কাজ। মূল হোতা নূর উদ্দিনই।'  

‘হানি ট্র্যাপের’ মাধ্যমে প্রতারণা আগে থেকেই চলছিল বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, এ ধরনের ফাঁদে একজন নারীকে ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞাপন দেখে যাঁরা মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন, অধিকাংশই ভিকটিম হন। পরে তাদের ঘরে নিয়ে বিভিন্নভাবে ছবি তোলা হয়, মারধর করা হয় এবং ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করা হয়। বিভিন্ন ঘটনা যাচাই করে দেখা গেছে, প্রতারণার কাজে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রীদেরও ব্যবহার করা হয়েছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সম্প্রতি কিছু ঘটনা সামনে আসায় শহরের বাসার মালিকদের বলা হয়েছে, নতুন কোনো ভাড়াটে উঠলে অবশ্যই পুলিশকে জানাতে হবে। এর মাধ্যমে প্রতারক চক্রের কাজ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং মানুষের ভোগান্তি কমানো সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন। 

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন