[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

পদ্মায় বিলীন বিদ্যালয়, এক মাসেও চালুর কোনো উদ্যোগ নেই

প্রকাশঃ
অ+ অ-
ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা ইউনিয়নের উত্তর মাথাভাঙা আবদুল মান্নান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গত ১৪ সেপ্টেম্বর পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের ১৫১ নম্বর উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন গত ১৪ সেপ্টেম্বর পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এর পর থেকে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।


বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষককে পাশের একটি বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করেছে শিক্ষা কার্যালয়। এর ফলে দিশাহারা অভিভাবকরা আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ও পাশের জেলার বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় সন্তানদের ভর্তি করছেন।

ভেদরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, কাচিকাটা ইউনিয়ন পদ্মা নদীর চরে অবস্থিত। ইউনিয়নের একদিকে মুন্সিগঞ্জ ও অন্যদিকে চাঁদপুর জেলা। এলাকার চারদিক দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মাথাভাঙা চরবানিয়াল গ্রামে ৪০০ পরিবার বসবাস করে। তারা নদীতে মাছ শিকার ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পড়ালেখার প্রতি তাদের আগ্রহ কম।

গ্রামে আগে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না। ২০১৭ সালে সরকার একটি বিদ্যালয় স্থাপন করে এবং ২০১৮ সাল থেকে পাঠদান শুরু হয়। একতলা পাকা ভবনের চারটি কক্ষে পাঠদান চলছিল।

বিদ্যালয় ভবন ভাঙনের মুখে পড়লে গত ৪ সেপ্টেম্বর পাঠদান বন্ধ করা হয়। দুই দিন পর বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর ভবনটি নদীতে ভেঙে যায়। ধীরে ধীরে একতলা পাকা ভবন নদীতে তলিয়ে যায় এবং বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ জমি বিলীন হয়ে যায়।

উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি গত ১৪ সেপ্টেম্বর পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এক মাস ধরে শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিকল্প স্থানে বিদ্যালয় চালু করার জন্য জমি খুঁজতে থাকেন। কিন্তু জমি না পেয়ে আর বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করতে পারেননি।

এক মাস ধরে শিক্ষা কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিকল্প স্থানে বিদ্যালয় চালু করার জন্য জমি খুঁজে আসছেন। কিন্তু জমি না পাওয়ায় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়নি। তাই ওই বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষককে পাশের চরজিংকিং এলাকায় অবস্থিত ৪০ নম্বর ছয়ানি দুলারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মৌখিকভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে।

উত্তর মাথাভাঙা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, এ বছর নদীভাঙনে ওই গ্রামের ৩০টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়া আরও ৪৫টি পরিবার বাড়ি সরিয়ে নিয়েছে। এসব পরিবারের সন্তানরা আগে উত্তর মাথাভাঙা মান্নান সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ত। নদীভাঙনে বিদ্যালয় ও অনেকের বসতবাড়ি বিলীন হওয়ায় অনেকে এলাকা ছেড়ে মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকায় চলে গেছেন। সেখানে সন্তানদের স্কুল ও মাদ্রাসায় ভর্তি করছেন।

উত্তর মাথাভাঙা গ্রামের বাসিন্দা মকবুল দেওয়ানের ৩ একর ফসলি জমি ছিল। সেই জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর দুই ছেলে বিদ্যালয়ে পড়ত। নদীতে মকবুলের ফসলি জমি ও বাড়ি বিলীন হয়েছে। পরিবার নিয়ে তিনি মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ির দীঘির পাড়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

মকবুল দেওয়ান বলেন, 'পাশের জেলার একটি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছি। সেখানেই দুটি ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করেছি। তবে সংসারের খরচ কিভাবে চালাব, তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছি।' 

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছামিয়া পড়ালেখায় ভালো ছিল। পদ্মায় বিদ্যালয় বিলীন হওয়ার পর পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় পরিবারের সদস্যরা তাকে মুন্সিগঞ্জের একটি আবাসিক মাদ্রাসায় ভর্তি করেছেন। ছামিয়ার বাবা ইউসুফ সরকার বলেন, 'এ এলাকায় পড়াশোনার বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় মেয়েকে পাশের জেলার আবাসিক মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি।' 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, '২০২৩ সাল থেকে বিদ্যালয় নদীভাঙনের কবলে পড়ে। তখন থেকেই শিক্ষার্থী কমতে শুরু করে। এ বছর শিক্ষার্থী ছিল ৫৩ জন। বিদ্যালয়ের সব জমি ও ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষার্থীর বাড়িও নদীতে বিলীন হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আশপাশের বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে, অনেকে পরিবারের সঙ্গে এলাকা ছেড়েছে। যারা জমি দিয়েছিলেন, তারা এখনও দিতে রাজি, কিন্তু তা ৫-৬ কিলোমিটার দূরে। একটি নদী পার হয়ে যাতায়াত করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে আমরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছি।' 

সহজ যাতায়াত হবে, এমন বিকল্প স্থানে জমি খুঁজছি। এ বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী ছিল, তাদের আশপাশের বিদ্যালয়ে ভর্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ছোবহান মুন্সি, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, ভেদরগঞ্জ

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছোবহান মুন্সি বলেন, 'বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হওয়ার পর থেকে আমরা এটি পুনরায় চালু করার চেষ্টা করছি। চরাঞ্চলে একটি জমির সন্ধান পেয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে জনবসতি কম। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেখানে যাতায়াত কষ্টসাধ্য হবে। আমরা এমন জায়গায় জমি খুঁজছি, যেখানে সহজ যাতায়াত সম্ভব। এই বিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী ছিল, তাদের আশপাশের বিদ্যালয়ে ভর্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষককে পাশের একটি বিদ্যালয়ে মৌখিক আদেশে সংযুক্ত করা হয়েছে।' 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন