[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বাংলাদেশ ব্যাংকের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সঞ্চয়পত্রের টাকা আত্মসাৎ

প্রকাশঃ
অ+ অ-
বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রাফিকস:পদ্মা ট্রিবিউন

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের এনএসসি সিস্টেম জালিয়াতি করে একটি চক্র অন্যের সঞ্চয়পত্র ভেঙে অর্থ তুলে নিয়েছে। মেয়াদপূর্তির আগেই সঞ্চয়পত্র ভেঙে তারা নিজ ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তর করেছে। সব মিলিয়ে ২৫ লাখ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এভাবে আরও প্রায় ৫০ লাখ টাকা তুলতে গেলে তা আটকে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে কেনা সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রেই এই জালিয়াতি ধরা পড়ে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, মতিঝিল কার্যালয়ের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই এই জালিয়াতি করা হয়।

এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, যাঁদের হিসাবে অর্থ গেছে এবং যাঁরা জালিয়াতিতে জড়িত, তাঁদের চিহ্নিত করে মামলা করা হবে। সঞ্চয়পত্রের সিস্টেম যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁদের কারও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এই জালিয়াতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। এ নিয়ে মতিঝিল থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো গ্রাহক সঞ্চয়পত্র কেনার সময় যে ব্যাংক হিসাবের তথ্য দেন, সেই হিসাবেই মুনাফা ও আসল টাকা দেওয়া হয়। আবার যে অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা হয়, কোনো তথ্য পরিবর্তন বা সুদ ও আসল নেওয়ার জন্য অবশ্যই সেই অফিসে আবেদন করতে হয়। আবেদন পাওয়ার পর গ্রাহকের মোবাইলে একটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পাঠানো হয়। গ্রাহক সেই ওটিপি উপস্থিত কর্মীকে দেখানোর পর নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে তথ্য পরিবর্তন করা হয়। সব ক্ষেত্রেই সার্ভারে এর ডিজিটাল প্রমাণ থাকে।

তবে দেড় বছর ধরে অনেক গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারছেন না। অভিযোগ আছে, এসব ব্যাংকে প্রবাসী আয় বা সঞ্চয়পত্রের টাকা এলেও তা তুলতে পারছেন না গ্রাহকেরা। এই কারণে অনেকে সম্প্রতি ব্যাংক পরিবর্তনের আবেদন করেছেন। গ্রাহকের সুবিধার কথা ভেবে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক পরিবর্তনের সুযোগ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই সুযোগেরই অপব্যবহার করে কেউ জালিয়াতি করে থাকতে পারেন।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয় থেকে একজন ব্যক্তি ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। তার ব্যাংক হিসাব আছে অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায়। চার দিনের মধ্যে গত সোমবার এই সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হয় এবং টাকা নেওয়া হয় এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখার অন্য একজনের হিসাবে। ওই টাকা কিছু সময়ের মধ্যে ব্যাংকের রাজধানীর শ্যামলী শাখা থেকে তুলে নেওয়া হয়।

একই দিনে একই প্রক্রিয়ায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে ৩০ লাখ ও এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে টাকা তোলার চেষ্টা করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সময়মতো নজর দেওয়ায় তা আটকানো যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংক তিনটি ঘটনায় সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। গ্রাহকরা জানিয়েছেন, তাঁরা সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর জন্য আবেদন করেননি, তাই তাদের মোবাইলে কোনো ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) যায়নি। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন কর্মকর্তার কাছে থাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রির পাসওয়ার্ড প্রত্যাহার করে নতুন তিন জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই এই জালিয়াতি হয়েছে। যাঁদের কাছে পাসওয়ার্ড ছিল, তাঁদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া বাইরের আরও কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকসহ অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের তিন লাখ ৪০ হাজার ৭১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি ও বেসরকারি সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিস মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার শাখা থেকে এসব সঞ্চয়পত্র কেনা ও ভাঙানো হয়।

এনআরবিসি ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তৌহিদুল আলম খান বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা ডিএমডির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটি কাজ শুরু করেছে, এরপর বিস্তারিত জানা যাবে।’ 

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন