বীরগঞ্জে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বউমেলা
![]() |
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে গোলাপগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে মিলনমেলায় ঘুরছেন দর্শনার্থীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে শুক্রবার শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বউমেলা বা মিলনমেলা। উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে মেলার আয়োজন করা হয়। মেলায় জীবনসঙ্গীর দেখা পেতে আশপাশসহ দূরদূরান্তের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা এসে ঘুরে বেড়ান। নিজেদের আকর্ষণীয়ভাবে সাজিয়ে তারা দৃষ্টি কাড়তে চেষ্টা করেন।
স্থানীয়রা এই মেলাকে বউমেলা নামে চেনে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি এখন মিলনমেলা হিসেবেও পরিচিত। প্রায় ২০০ বছর ধরে শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর পরের দিন মেলা বসে। মেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা কেউ কাউকে পছন্দ করলে প্রথমে আলাপচারিতা করেন, পরে অভিভাবকদের জানান। সব ঠিক থাকলে বেজে ওঠে বিয়ের বাদ্য।
মেলা উপলক্ষে বিদ্যালয়ের মাঠ ও পুরো গোলাপগঞ্জ বাজার এলাকায় ভিড় জমেছে। মেলায় বিক্রেতারা বিভিন্ন পণ্যের দোকান সাজিয়েছেন। সেখানে রয়েছে জিলাপি, নিমকি, পিঠা, ফুচকা, চটপটি সহ নানা খাবার। এছাড়া মেয়েদের অলংকার, শিশুদের খেলনা, গৃহস্থালির জিনিসপত্র, তৈজসপত্র ও মাটির তৈরি সামগ্রী পাওয়া যায়।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে সঙ্গে এখন সব জাতি ও ধর্মের মানুষও মেলায় আসেন। তারা পসরা কেনাকাটা করেন এবং মেলার আনন্দ উপভোগ করেন।
![]() |
মেলায় অনুষ্ঠানে নাচছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
মেলা উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে ৪টায় নিজপাড়া-মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের এবং বীরগঞ্জ আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির যৌথ আয়োজনে স্কুলের মাঠে নাচ-গান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির নেতা যোসেফ হেমরমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি, বীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও দিনাজপুর-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আলহাজ মো. মনজুরুল ইসলাম মনজু। বিশেষ অতিথি ছিলেন নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান আনিস, মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান চৌধুরী শাহিন, কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক রবি মার্ডি এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহ্বায়ক মনোজ কুমার রায়।
অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা ঢোল, মন্দিরা, কাঁসর, কাড়া ও হারমোনিয়ামের তালে নাচ পরিবেশনের মাধ্যমে অতিথিদের স্বাগত জানান।
চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান আনিস বলেন, 'আগে মেলায় তরুণ-তরুণীরা পছন্দের মানুষ খুঁজে পেলে পরিবারের কাছে জানাতেন। পরের বছর মেলায় তাদের নাম-পরিচয় দিয়ে বিয়ের আয়োজন হতো। এখনো অনেকে হয়তো মেলায় জীবনসঙ্গী খুঁজে পেলে বিয়ে করেন। তবে বিয়েশাদির ধারা আগের মতো নেই। তবু আয়োজকেরা মেলার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।'
যোসেফ হেমরম জানান, 'মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ ছুটে আসেন। দিনাজপুর ছাড়াও পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, জয়পুরহাট ও নওগাঁ থেকে অনেক মানুষ মেলায় অংশ নেন।'
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন