ময়মনসিংহে এনসিপি ও শ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে বাস চলাচল বন্ধ
ময়মনসিংহে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মী ও পরিবহনশ্রমিকদের পাল্টাপাল্টি অবস্থান কর্মসূচির কারণে শহরের সব সড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
পরিবহনশ্রমিকেরা আবু রায়হান নামের এক ‘জুলাইযোদ্ধাকে’ লাঞ্ছিত করার অভিযোগে এনসিপি নেতা-কর্মীরা মাসকান্দা বাস টার্মিনালে অবস্থান নেন। পাল্টা অবস্থান নিয়েছেন পরিবহনশ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের দীঘারকান্দা বাইপাস এলাকায়।
হালুয়াঘাটের বাসিন্দা আবু রায়হান ‘সি’ ক্যাটাগরির জুলাইযোদ্ধা। তিনি বলেন, 'গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দুটি টিকিট কেটে বাসে উঠতে গেলে স্টাফের সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়। যাত্রীরা ধমক দিলে স্টাফ বাস থেকে নেমে যায়। পরে আমরা সিটে বসার ১০-১৫ মিনিট পর স্টাফ এসে আমার কলার চেপে ধরেন, গালাগাল করেন ও বুকে ধাক্কা দেন। অভিযোগ করতে গিয়ে বাস চলে যায়।'
রায়হান আরও বলেন, 'ঘটনার পর মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা নাম প্রকাশে অনীহা করে। পরে ফেসবুকে লাইভ করলে সহযোদ্ধারা এসে দাঁড়ান, তখন মালিক হিসেবে শামীম সাহেবের নাম জানা যায়। তিনি সাগর হত্যার এজাহারভুক্ত। এখন পর্যন্ত তার বাসগুলো কীভাবে চলে, সেই প্রতিবাদে আমরা অবস্থান কর্মসূচি করছি।'
![]() |
ময়মনসিংহ নগরের মাসকান্দা বাস টার্মিনালে চার দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এনসিপি ও জুলাই আন্দোলনকারীরা। শনিবার দুপুরে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
শহরের মাসকান্দা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল করে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, এই ঘটনার পর গতকাল রাত ৮টা থেকে এনসিপির নেতা–কর্মী ও জুলাইযোদ্ধারা ইউনাইটেড গাড়ির কাউন্টারে তালা দিয়ে অবস্থান নেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ গিয়ে আলোচনা করে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেন। ওই সময় জুলাইযোদ্ধার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা এক শ্রমিককে পুলিশ আটক করে। এরপরও চার দফা দাবিতে অবস্থান চালিয়ে যান এনসিপির নেতা–কর্মী ও জুলাইযোদ্ধারা।
আজ বেলা পৌনে একটার দিকে মাসকান্দা বাস টার্মিনালের ঢাকাগামী ইউনাইটেড বাস কাউন্টারের সামনে এনসিপি নেতা–কর্মী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক নেতাদের অবস্থান কর্মসূচি দেখা যায়। পেছনে ব্যানারে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক ও জুলাই আন্দোলনের শহীদ রিদোয়ান হোসেন সাগরের ছবি। ব্যানারে লেখা ছিল, শহীদ সাগর হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও ময়মনসিংহের আত্মস্বীকৃত গডফাদার আমিনুল হক (শামীম)-এর মালিকানাধীন সব পরিবহন বন্ধসহ অবিলম্বে গ্রেপ্তার দাবি।
![]() |
ময়মনসিংহে এনসিপির অবস্থান কর্মসূচির প্রতিবাদে শ্রমিকেরা দীঘারকান্দা বাইপাস এলাকায় সড়ক অবরোধ করছে। শহর থেকে সব রুটে বাস চালচল বন্ধ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
অবস্থান কর্মসূচিতে জেলা এনসিপির নেতাদের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। জেলা এনসিপির সদস্য এ টি এম মাহবুবুল আলম গত রাতের ঘটনায় চার দফা দাবির কথা জানান। তাঁদের দাবিগুলো হলো—শামীমের সব গাড়ি তৎক্ষণাত বন্ধ করে জব্দ করা; মাসকান্দা বাসট্যান্ডে এখনো কর্মরত ফ্যাসিস্ট কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা; শহীদ সাগর হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ময়মনসিংহের সব ফ্যাসিস্টকে গ্রেপ্তার করা; যাত্রীদের প্রতি সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা; এবং বিশেষ করে ঈদ-পূজা ও অন্যান্য উৎসবে গাড়ির ভাড়া বাড়ানো যাবে না।
মাহবুবুল আলম বলেন, চার দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
এদিকে আজ দুপুর ১২টা থেকে ময়মনসিংহ-ঢাকা সড়কের দীঘারকান্দা বাইপাস এলাকায় পরিবহনশ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। এতে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইখতিয়ার আহমেদ জানান, মাসকান্দায় কিছু ব্যক্তি ইউনাইটেড পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে, আর এর প্রতিবাদে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেছেন।
বেলা ১টার দিকে এনসিপির নেতারা বাস টার্মিনালে মাইকিং করে বাস চালানোর জন্য অনুরোধ করলেও কোনো বাস ছাড়েনি। এতে যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অনুপ কুমার সাহা বলেন, আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর অ্যাসাইনমেন্ট আছে, কিন্তু বাস না পেয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে শেরপুরের ঝিনাইগাতি যাওয়ার পথে আবদুল কাদের বাস থামায় নামতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, ‘আত্মীয়ের জানাজায় যাচ্ছিলাম। কিন্তু চুরখাই এলাকা পর্যন্ত আসার পর বাস আর চলে না। হেঁটে এ পর্যন্ত এসেছি, কীভাবে পৌঁছাব জানি না।’
জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর মাহমুদ আলম জানান, ডিসি ও এসপি গিয়ে আলোচনা করেছেন। এনসিপির দাবির বেশিরভাগ বিষয় মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাঁরা বাস জব্দ করে ডাম্পিংয়ে পাঠানোর দাবি করছেন।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম বলেন, পরিবহন মালিক সমিতি এনসিপির দাবির বেশিরভাগ মানতে রাজি হয়েছিল। তারা ১৬টি বাস ময়মনসিংহ রোডে চলাচল বন্ধ রাখবে। যেসব ফ্যাসিস্ট কর্মচারী রয়েছেন, তাদের সরানো হবে। তবে জেলা প্রশাসক আদালতের নির্দেশ ছাড়া গাড়ি জব্দ করতে পারবেন না।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ‘আইনের বাইরে আমরা কিছু করতে পারি না। এনসিপি তাদের দাবিগুলো ঠিকভাবে বুঝছে না। আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন