[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

রাজশাহীতে ডিএপি সারের কৃত্রিম সংকট, কৃষকের খরচ বেড়েছে

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ধানখেতে সার ছিটাচ্ছেন কৃষক | ফাইল ছবি

চাষিদের ডিএপি (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার ব্যবহারে উৎসাহিত করছে কৃষি বিভাগ। কিন্তু রাজশাহীতে সরকার অনুমোদিত ডিলারদের কাছে গেলেও প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না কৃষকেরা। কৃষি বিভাগ বলছে, পর্যাপ্ত সরবরাহ আছে। তবে কৃষকের অভিযোগ—চাহিদা বাড়ায় কৃত্রিম সংকট তৈরি করে খুচরা দোকানে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সার।

মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর বিভিন্ন খুচরা দোকানে ‘বাংলা ডিএপি’র ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। আবার বেসরকারিভাবে আমদানি করা ‘ডিকে ব্র্যান্ডের’ ডিএপি ১ হাজার ৭০০ টাকা এবং বিএডিসির ডিএপি ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা বস্তা হিসেবে কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। অথচ নির্ধারিত মূল্য যেকোনো ডিএপির জন্যই ১ হাজার ৫০ টাকা।

কৃষকেরা বলছেন, ডিলাররা সার খুচরা ব্যবসায়ী ও কীটনাশকের দোকানে সরবরাহ করে দিচ্ছেন। সেখানে গিয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে তাঁদের। আবার অনেক সময় ডিলাররা বলছেন, ‘সরবরাহ শেষ’। তখন চাষিদের আগামী মাসে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং অধিশাখার নথি অনুযায়ী, রাজশাহীর জন্য সেপ্টেম্বর মাসে ডিএপি সারের চাহিদা ছিল ২ হাজার ৫২১ মেট্রিক টন। গত ১৮ আগস্ট একই পরিমাণ সার বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে স্পষ্ট করে বলা হয়, নির্ধারিত মূল্যে কৃষক পর্যায়ে সার পৌঁছে দিতে হবে।

মাঠপর্যায়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে চারঘাট উপজেলার ভায়া লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চকলক্ষ্মীপুরে আকাশ এন্টারপ্রাইজ নামের এক ডিলারের গুদামে ২০ বস্তা ডিএপি মজুত ছিল। প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারী রনি হোসাইন জানান, চলতি মাসে তাঁরা ২৭০ বস্তা সার পেয়েছিলেন। এর মধ্যে প্রায় সব শেষ হয়ে গেছে। কৃষকদের টিএসপির পরিবর্তে ডিএপি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করার কারণে চাহিদা বেড়েছে। এখন আর সবার প্রয়োজনমতো দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সেখানে কথা বলার সময় স্থানীয় এক কলেজশিক্ষক সার নিতে ফোন করলে তাঁকেও বলা হয়, হাতে অল্প কিছু বস্তা আছে, এখন না নিলে পরে নাও মিলতে পারে।

ফেরার পথে পরিবেশকের দোকানের দেয়ালে কৃষি বিভাগের একটি লিফলেট চোখে পড়ে। সেখানে ছবি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে—এক বস্তা ডিএপি সার ব্যবহার করলে এক বস্তা টিএসপি সারের সমপরিমাণ ফসফেট পাওয়া যায়, পাশাপাশি অতিরিক্ত ২০ কেজি ইউরিয়ার সমতুল্য গুণও মেলে। অর্থাৎ কোনো জমিতে যদি ৩০ কেজি ইউরিয়া ও ৫০ কেজি ফসফেটের প্রয়োজন হয়, সেখানে এক বস্তা ডিএপি ব্যবহার করলেই ফসফেটের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে এবং ইউরিয়ার ঘাটতি থাকবে মাত্র ১০ কেজি।

জেলার মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি গ্রামের পানচাষি আফসার আলী তাঁর বরজের জন্য এক বস্তা বাংলা ডিএপি সার কিনেছেন। তিনি বলেন, গ্রামের এক খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে তাঁকে ১ হাজার ৮০০ টাকা বস্তা দরে সার কিনতে হয়েছে।

অন্যদিকে জেলার তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নে বিএডিসির ডিলার সুলতান আহমেদের দোকান দেখাশোনা করেন তাঁর ছেলে সাখাওয়াত হোসেন। ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে এক কৃষক ডিএপি সার চাইলে সাখাওয়াত জানান, তাঁদের দোকানে তখন শুধু ইউরিয়া সার আছে, অন্য কোনো সার নেই।

সংকটের খবর শুনে সন্ধ্যায় তানোরের কলমা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ডিলার সুলতান আহমেদের ছেলে সাখাওয়াত হোসেনের দোকান বন্ধ। ফোন করলে তিনি বাড়ি থেকে এসে গুদাম খোলেন। সেখানে ডিএপি সার মজুত থাকলেও শুরুতে তিনি বলেন, সব ধরনের সারই রয়েছে। তাঁর দাবি, সেপ্টেম্বরে ২৬ মেট্রিক টন ডিএপি বরাদ্দ পেয়েছিলেন, যার মধ্যে সাড়ে ১২ মেট্রিক টন এখনো গুদামে মজুত আছে।

কিন্তু কৃষকেরা ভিন্ন কথা বলছেন। গত বুধবার সকালে চন্দনকোঠা গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম সার নিতে গিয়েও ফেরত আসেন। তিনি  জানান, সাখাওয়াত তাঁকে সরাসরি বলেছেন—'ইউরিয়া ছাড়া আর কোনো সার নেই।' 

পরে মুঠোফোনে কথা হলে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'আসলে ওই কৃষকদের এখন ডিএপি সারের দরকার নেই। তারা সার কিনে মজুত করে রাখবে। তাই দেওয়া হয়নি। আগামী মাসে আলু রোপণের সময় তাদের দেওয়া হবে।'

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে সালমা বুধবার বিকেলে বলেন, কোথাও বেশি দামে সার বিক্রির সুযোগ নেই। পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। তাঁর ক্ষোভ, 'কোথাও সার না পেলে বা কেউ বেশি দাম চাইলে কৃষকেরা সরাসরি কৃষি অফিসে অভিযোগ করবেন। সাংবাদিকের কাছে কেন যাচ্ছেন? এটা কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?' 

তবে কৃষকেরা বলছেন, বাস্তবে মাঠে গিয়ে তাঁরা সারের সংকটে পড়ছেন। তানোরের শংকরপুর গ্রামের কৃষক মো. বাবলু বলেন, তাঁর কিছু নিচু জমিতে ধানের বয়স এখন ২০ থেকে ২৫ দিন। এই সময়েই ডিএপি সার দেওয়ার দরকার। কিন্তু পরিবেশকের কাছ থেকে পাচ্ছেন না।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন