ডাকসু–জাকসু–চাকসুর পর রাকসুতেও শিবিরের জয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের ভিপি পদে মোস্তাকুর রহমান জাহিদ এবং জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য’ প্যানেলের সালাউদ্দিন আম্মার জয়ী হয়েছেন।
সাড়ে তিন দশক পর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ৭২ বছরে এটি রাকসুর ১৭তম নির্বাচন। ১৯৯০ সালের পর দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি।
আজ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন।
রাকসু নির্বাচনে ২৩টি পদের মধ্যে ২০টিতেই জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে। সেখানে অধিকাংশ পদে জয়ী হয়েছিল ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল। রাকসুতেও তারই ধারাবাহিকতা দেখা গেল।
নির্বাচনে মোস্তাকুর রহমান জাহিদ ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট পেয়ে ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল–সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন (আবির) পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৯৭ ভোট।
জিএস পদে সালাউদ্দিন আম্মা বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তিনি ১১ হাজার ৪৯৭ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা পেয়েছেন ৫ হাজার ৭২৭ ভোট। আম্মা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক। ফাহিম রেজাও সাবেক সমন্বয়ক।
শীর্ষ তিন পদের তৃতীয় পদ এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে শিবির–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী এস এম সালমান সাব্বির নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ৬ হাজার ৯৭৫ ভোট পেয়েছেন। তাঁর নিকটতম ছাত্রদল–সমর্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী জাহিন বিশ্বাস (এষা) পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৫১ ভোট।
বেসরকারিভাবে হলগুলোর ফলাফল ঘোষণার পর আজ সকালে নির্বাচন কমিশনার ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের মঞ্চে বসেন। সকাল ৯টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা শুরু করেন। এর আগে তিনি বলেন, ‘কঠোর ও দৃঢ় সিদ্ধান্তের কারণে এ নির্বাচন সম্ভব হয়েছে। প্রশাসন কীভাবে সহযোগিতা করেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। উপাচার্য মহোদয় বলেছিলেন, নির্বাচন হতেই হবে। এই নির্বাচনের সাফল্য একান্তই শিক্ষার্থীদের জন্য। ৩৫ বছর বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন ও ফলাফল আমার প্রিয় শিক্ষার্থীদের উৎসর্গ করলাম।’
এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন খান ও ফরিদ উদ্দিন খান, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলীম এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আমীরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে ১৭ হলের শিক্ষার্থী ভোট দেন। দিনভর পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে বিকেলে ভোট গ্রহণ শেষ হয়। এর সাড়ে চার ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ৮টায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ভোট গণনা শুরু হয়। পরে রাত সাড়ে ১০টায় নারী হলে ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়।
নির্বাচনে ১০টি প্যানেলসহ রাকসুর ২৩ পদে ২৪৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। হল সংসদের ১৫ পদে ১৭টি হলে ৫৯৭ জন প্রার্থী ছিলেন। সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫ পদে ৫৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাকসুতে ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন এবং এজিএস পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১। এর মধ্যে ছাত্রী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন এবং ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন। ভোট পড়েছে ৬৯.৮৩ শতাংশ। ছয়টি নারী হলে ভোট পড়ার হার ৬৩.২৪ শতাংশ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন