[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

১৮৫৩ গাছ 'পানির দামে' বিক্রি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অস্থায়ী কার্যালয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৮৫৩টি গাছ আজ সোমবার নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। তবে এক চক্রের বিরুদ্ধে অন্য দরদাতাদের দরপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।

নিলামে রোমিন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় গাছগুলো কেনার জন্য দর দিয়েছে। এই দরেই তারা গাছগুলো পেয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, রোমিন এন্টারপ্রাইজ অন্যদের দরপত্র জমা দিতে বাধা দিয়েছিল। ফলে তারা তুলনামূলক কম দামে গাছগুলো কিনতে সক্ষম হয়েছে।

রাজশাহী শহরের কাছে বাজেসিলিন্ডা মৌজায় ২০৫ বিঘা জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হচ্ছে। এজন্য সম্প্রতি সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির ১ হাজার ৮৫৩টি গাছ বিক্রির নিলামের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্প কার্যালয়ে দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা, আর দরপত্র খোলা হয় বেলা দেড়টায়।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিয়েছে। সর্বোচ্চ ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা দর দিয়েছে রোমিন এন্টারপ্রাইজ। অন্য চারটি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে ১৮ লাখ ৪৮ হাজার, ১৮ লাখ, ৮ লাখ ও ৬ লাখ টাকা দর দিয়েছে। অভিযোগ আছে, ওই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান মিলে সিন্ডিকেট করে দরপত্র জমা দিয়েছে এবং অন্য কোনো ব্যক্তিকে দরপত্র জমা দিতে দেয়নি।

এ বিষয়ে সোমবারই শুকুর শেখ, ফারজানা ববি, জাকারিয়া হোসেনসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের দাবি, দরপত্রে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো একটি চক্র, যা অন্যদের দরপত্র জমা দিতে বাধা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করেছে। এ চক্রের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্তারা জড়িত বলে অভিযোগও এসেছে।

দরপত্র জমা দিতে না পারা ঠিকাদার চান সওদাগর বলেন, 'আমরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এসেছি। আমাদের ম্যানেজারকে ধাক্কাধাক্কি করেন রাব্বুল নামের একজন। তিনি আমাদের দরপত্র জমা দিতে দেননি। তারা (দরপত্র জমা দেওয়া পাঁচ প্রতিষ্ঠান) মিলে কম টাকায় গাছ নিয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। এটা যেন আবার নিলাম করা হয়, সে জন্য আমরা উপাচার্যের কাছে আবেদন করেছি। আবার নিলাম না হলে আমরা থানায় অভিযোগ করব।' 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, ১ হাজার ৮৫৩টি গাছের মধ্যে কাঠ ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৬৪০ ঘনফুট, বল্লির সংখ্যা ২২৭টি এবং জ্বালানি কাঠ ৭ হাজার ১৯ ঘনফুট। একজন পেশাদার কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি কিউবিক ফিট কাঠের দাম ৭০০ টাকা ধরলে মোট দাম দাঁড়ায় ৩৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। জ্বালানি কাঠের দাম প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, আর বল্লির দাম প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে গাছগুলোর মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৪২ লাখ ২১ হাজার টাকা। অথচ সেই গাছ দরপত্রের ‘সিন্ডিকেট’ মাত্র ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কিনেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত রোমিন এন্টারপ্রাইজের মালিক আল মামুন (রাব্বুল) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটও নিয়ন্ত্রণ করেন। গাছ নিলামে সিন্ডিকেট করার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। দরপত্র জমা দিতে অন্য ঠিকাদারদের বাধা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আল মামুন বলেন, 'আমি যাইনি। আমার লাইসেন্স সর্বোচ্চ দর দিয়ে কাজ পেয়েছে। এলাকার বিএনপির ছোট ভাই-বড় ভাইরা আমার লাইসেন্স নিয়ে দরপত্র জমা দিয়েছিল। আমি কাউকে বাধা দিইনি। অন্যরা অভিযোগ করলে করুক, অসুবিধা নেই।' 

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহা. জাওয়াদুল হককে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। সেকশন অফিসার রেজাউল উদ্দিন বলেন, 'আমরা অফিসে ছিলাম। বাইরে কী হয়েছে বলতে পারব না। তবে দরপত্রে বাধা দেওয়ার বিষয়ে কয়েকজন ঠিকাদারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ এসেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এটা দেখবে।' 

রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন