[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

দুস্থদের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশঃ
অ+ অ-

বাঁ পাশের বাড়িটি জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের বড়তারা গ্রামের সেলিনা খাতুনের। ডানপাশের বাড়িটি একই গ্রামের হালিমা খাতুনের। সেলিনা ভিডাব্লিউবি প্রকল্পের আওতায় সরকার থেকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল পান। তবে হালিমা কিছুই পান না। ছবি দুটি মঙ্গলবারের | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ইটের বাড়ি, গরু ও ইজিবাইক—সবই আছে স্বপ্না খাতুনের পরিবারের। তবু তিনি ভিডাব্লিউবি (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট) কর্মসূচির সুবিধাভোগীর তালিকায় জায়গা পেয়েছেন। প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে সরকারি সহায়তার চাল পাচ্ছেন তিনি। অথচ তাঁর বাড়ির সামনেই ভাঙাচোরা মাটির ঘরে থাকেন দিনমজুর পরিবারের হালিমা খাতুন। কিন্তু তাঁর নাম ওঠেনি সুবিধাভোগীর তালিকায়।

স্বপ্না খাতুন নিজেও স্বীকার করেছেন, হালিমা খাতুনের তুলনায় তাঁদের আর্থিক অবস্থা অনেক ভালো। শুধু তিনিই নন—জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে অনেক সচ্ছল পরিবারের নারীর নাম উঠেছে ভিডাব্লিউবি সুবিধাভোগীর তালিকায়। তাঁদের বেশির ভাগই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যের আত্মীয়।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্যরা স্বজনপ্রীতি ও ঘুষের মাধ্যমে তালিকা করেছেন। এতে প্রকৃত দুস্থ নারীরা বঞ্চিত হয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন প্রকাশ্যে যাচাই-বাছাই করে তালিকা করলেও তাতে সচ্ছল ও প্রভাবশালী পরিবারের নাম ওঠায় সে উদ্যোগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

ভিডাব্লিউবি হলো মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের বাস্তবায়িত একটি সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কর্মসূচি, যা আগে ভিজিডি নামে পরিচিত ছিল। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করতে সহায়তা করা, যেখানে উপকারভোগীরা খাদ্য বা আর্থিক সহায়তা পান।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় ও ইউপি সূত্রে জানা যায়, বড়তারা ইউনিয়নে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভিডাব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় ১ হাজার ২৭ জন নারী আবেদন করেন। তিনজন কর্মকর্তা প্রকাশ্যে যাচাই-বাছাই করে ৪৪০ জনকে নির্বাচিত করেন। এর মধ্যে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৩ জন নারী সুবিধাভোগী তালিকায় আছেন। ২৯ সেপ্টেম্বর চাল বিতরণের পরই জানা যায়, ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামের আত্মীয়স্বজন ও সচ্ছল পরিবারের সদস্যদের নামও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

ওই ওয়ার্ডের তালিকায় ১৯১ নম্বরে রাজিয়া সুলতানা, ২০৬ নম্বরে হাবিবা খাতুন, ২০৯ নম্বরে স্বপ্না খাতুন, ২১০ নম্বরে খোতেজা বিবি, ২১৬ নম্বরে আলেয়া বেগম, ২১৭ নম্বরে আমেনা বিবি, ২২৪ নম্বরে মোছা. ফারহানা আক্তার ও ২৩০ নম্বরে মোছা. সেলিনা বেগমের নাম আছে।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে বড়তারা মধ্যপাড়া গ্রামের হাবিবা খাতুনের বাড়ি। তিনি ভিডাব্লিউবির সুবিধাভোগী। ছবিটি মঙ্গলবারের | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁদের মধ্যে রাজিয়া সুলতানা ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলামের চাচাতো ভাই মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী। হাবিবা খাতুনের পাকা বাড়ি আছে, স্বামী মৎস্যচাষি। ইজিবাইক ও জমিজমাও রয়েছে তাঁদের। স্বপ্না খাতুনের ইটের বাড়ি ও লাখ টাকার গরু আছে। খোতেজা বিবির স্বামীর ইলেকট্রনিকস ও অটো ভ্যানের ব্যবসা। আমেনা বিবি ইউপি সদস্যের চাচি; তাঁরও জমিজমা ও বাড়িঘর আছে। সেলিনা খাতুন ইউপি সদস্যের ভাইয়ের স্ত্রী, তাঁদেরও পাকা বাড়ি রয়েছে।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের বড়তারা মধ্যপাড়া গ্রামের স্বপ্না খাতুনের বাড়ি। তিনি ভিডাব্লিউবি কর্মসূচির ৩০ কেজির সরকারি সহায়তার চাল পাচ্ছেন। ছবিটি মঙ্গলবারের | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

গ্রামের অন্তত ১২ জন সুবিধাবঞ্চিত নারী অভিযোগ করেছেন, টাকা বা প্রভাব ছাড়া কারও নাম তালিকায় ওঠেনি। ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম আত্মীয় ও সচ্ছল পরিবারের সদস্যদের নাম দিয়েছেন, আর যাঁরা টাকা দিয়েছেন, তাঁদেরও সুযোগ করে দিয়েছেন। এতে প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের কিছু কর্মচারীর যোগসাজশ আছে বলে তাঁদের অভিযোগ।

হালিমা খাতুন বলেন, ‘বড় লোকেরা ৩০ কেজি চাউলের কার্ড পাইছে। মোর কিছু নাই, মোক কার্ড দ্যাইনি। লাইনত দাঁড়াইছিলাম, মোক বাদ দিছে।’ একই গ্রামের সকিমা বিবি বলেন, ‘মোরা গরিব মানুষ। মুর কাছে টাকা নাই, কার্ডও নাই।’

ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় যাচাই-বাছাই করে তালিকা করেছে। এখানে আমার কোনো হাত নেই।’ আত্মীয়দের নাম তালিকায় থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আত্মীয়স্বজনেরা যদি পাওয়ার যোগ্য হয়, তাহলে পাবে না কেন?’

জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের বড়তারা মধ্যপাড়া গ্রামের হালিমা খাতুনের বাড়ি। হতদরিদ্র হয়েও ভিডাব্লিউবি সুবিধাভোগীর তালিকায় তাঁর নাম নেই। ছবিটি মঙ্গলবারের | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের নিয়োজিত কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করে তালিকা করেছেন। আমরা শুধু তাঁদের সহযোগিতা করেছি। আমার বিরুদ্ধে যে কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো ঠিক নয়। তবে কিছু সচ্ছল ব্যক্তির নাম সুবিধাভোগীর তালিকায় আছে। মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা লায়লা নাসরিন জাহান বলেন, ‘ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাঁর কয়েকজন স্বাবলম্বী আত্মীয়ের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আমরা তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। সেই নামগুলো উপজেলা কমিটিতে উপস্থাপন করা হবে। উপজেলা কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।’ তিনি আরও জানান, আরও কয়েকটি ইউনিয়নেও একই ধরনের অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আল জিনাত বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী তালিকা করা হয়েছে। কোনো ব্যত্যয় হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন