ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ
![]() |
| ঢাকা–সিলেট মহাসড়কে অবরোধের কারণে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। রোববার দুপুর একটার দিকে তোলা ছবি | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের অসন্তোষ জানিয়ে জেলার বিজয়নগর উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন এলাকাবাসী। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চান্দুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ‘সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ’–এর ব্যানারে উপজেলার লোকজন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন।
সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপির নেতা–কর্মীদের পাশাপাশি এনসিপি, জামায়াতে ইসলামসহ উপজেলার বিভিন্ন স্তরের লোকজন অংশ নেন। তাঁদের মহাসড়ক অবরোধে যান চলাচল বন্ধ হয়ে মহাসড়কের সরাইলের শাহবাজপুর থেকে বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুর বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন দূরদূরান্তের যাত্রী, পথচারী ও সাধারণ মানুষ।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সংসদের ৩৭টি নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণের চূড়ান্ত তালিকা (গেজেট) প্রকাশ করেছে। পুনর্নির্ধারিত চূড়ান্ত তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী ও চান্দুরা ইউনিয়ন দুটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ)–এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তী, চান্দুরা ও হরষপুর—এ তিন ইউনিয়ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করে সীমনা পুনর্নির্ধারণ করে ইসি একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করে। বিষয়টি নিয়ে ২৪ আগস্ট রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে শুনানি হয়। শুনানিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণের পক্ষে ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রুমিন ফারহানা। বিপক্ষে ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী খালেদ হোসেন মাহবুব (শ্যামল) এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ। শুনানিকালে রুমিন ফারহানার সঙ্গে হট্টগোল হয়।
আসন পুনর্নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশের পর থেকে বেশ উচ্ছ্বসিত রুমিন ফারহানার অনুসারীরা। তাঁরা আনন্দ উৎসব করছেন। তবে বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না বিরোধীরা।
উপজেলা সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে আয়োজিত আজকের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোকজন বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে উপজেলার চান্দুরা এলাকায় বেলা সাড়ে ১০টায় জড়ো হন। সেখানে তাঁরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিজয়নগরের দুটি ইউনিয়ন ব্রাহ্মণবাড়িয়া–২ আসনের পরিবর্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনে রাখার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা মহাসড়কে টায়ারে আগুন ধরিয়ে এবং সড়কের মাঝখানে দুটি ট্রাককে এলোমেলো করে দাঁড় করিয়ে বিক্ষোভ করে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে যানজট সৃষ্টি হয়ে ওই মহাসড়কে ব্যাপক জনভোগান্তি নেমে এসেছে।
সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ দিনে-রাতে চলবে। এক ব্যক্তির স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আমাদের দুর্ভোগে ফেলতে এ বিভাজন করা হয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ ও অখণ্ড বিজয়নগর চাই। আমাদের আগের মতো সদরের সঙ্গে রাখতে হবে।’
বিক্ষোভ-সমাবেশে জানানো হয়, বিজয়নগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ২টিতে প্রায় ৬০ হাজার ভোটার আছেন, যা উপজেলার এক–চতুর্থাংশ ভোটারের সমান। দুই লক্ষাধিক ভোটারবিশিষ্ট বিজয়নগর উপজেলা একক সংসদীয় আসনের উপযুক্ত হলেও বছরের পর বছর ধরে এটিকে একবার সদর, একবার সরাইল, আবার কখনো নাসিরনগরের সঙ্গে যুক্ত করে অবহেলার শিকারে পরিণত করা হচ্ছে। বক্তারা জানান, তাঁরা সরাইলে নয়, সদর উপজেলায় থাকতে চান। ঠিকানা যেমন আছে, তেমনই রাখতে হবে। বিজয়নগরকে নিয়ে রাজনৈতিক খেলা বন্ধের আহ্বান জানান তাঁরা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন