[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

জেন–জিদের প্রতিবাদ: নেপালে ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, নিহত অন্তত ১৯

প্রকাশঃ
অ+ অ-

নেপালের পার্লামেন্ট ভবনের কাছে বিক্ষোভকারীরা। কাঠমান্ডু, নেপাল, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ছবি: রয়টার্স 

নেপালে দুর্নীতি বন্ধের দাবি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে তরুণদের নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানী কাঠমান্ডুসহ দেশটির অন্তত সাতটি শহরে বিক্ষোভ হয়।

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত এবং তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে কাঠমান্ডুতে। সেখানে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা এক পর্যায়ে পুলিশের প্রতিবন্ধকতা ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টাও করেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি করে সরকার। মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। নতুন নিয়মনীতি মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্ম ও বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন নেপাল সরকার। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও এক্স। নিয়ম মানায় টিকটকসহ শুধু পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বিধিনিষেধের আওতার বাইরে রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এর ফলে ব্যবসা ও পর্যটন খাত মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে। তা ছাড়া প্রবাসে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায় নাগরিকদের।

এ নিয়ে ক্ষোভ-হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটে গতকাল রাজধানী কাঠমান্ডুর রাজপথে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী, যাঁদের বড় অংশই তরুণ। এই বিক্ষোভের পেছনে সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষও কাজ করেছে। সুবানা বুদাথোকি নামের এক বিক্ষোভকারী বিবিসিকে বলেন, ‘আমি মনে করি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের চেয়ে সবার মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছে দুর্নীতি। আমরা আমাদের দেশকে ফিরে পেতে পাই, আমি এসেছি দুর্নীতি বন্ধ করতে।’

বিক্ষোভকারীরা পুলিশের প্রতিবন্ধকতা ভেঙে পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। একপর্যায়ে গুলিও চালানো হয়।

বিক্ষোভকারীদের লক্ষ করে কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করছেন একজন পুলিশ সদস্য। কাঠমান্ডু, নেপাল, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ছবি: রয়টার্স 

রাজধানীতে সংঘর্ষে অন্তত ১৭ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে জানায় নেপালের সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট। সংঘর্ষের পর পার্লামেন্ট ভবনসহ কাঠমান্ডুর বিভিন্ন এলাকায় গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে সরকার। পরে শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় সভা–সমাবেশ ও লোকজন জড়ো হওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

গতকাল কাঠমান্ডুর বাইরে পোখারা, ভুটওয়াল, ভাইরাহাওয়া, ভরতপুর, ইতাহারি ও দামাক শহরে বিক্ষোভ করেছেন তরুণেরা। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় ইতাহারি শহরে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়। ওই শহরের প্রধান চত্বরের আশপাশের এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। দামাক শহরে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিক্ষোভকারীরা। সেখানে ফাঁকা গুলি ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। দেশজুড়ে সহিংসতায় আহত ৩৪৭ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে।

পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে সংঘর্ষের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। কাঠমান্ডু, নেপাল, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ছবি: এপি  

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনার পর গতকাল রাতে পদত্যাগ করেন নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর নেপালে সহিংসতায় প্রাণহানির দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত চেয়েছে। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।

গতকালের বিক্ষোভ যেভাবে

ক্ষোভকারীরা তাঁদের অসন্তোষের কথা তুলে ধরতে গতকাল সকাল ৯টায় কাঠমান্ডুর মাইতিঘর এলাকায় সমবেত হন। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ‘হামি নেপাল’ নামের একটি সংগঠন গতকাল এই সমাবেশের আয়োজন করে। এ জন্য তারা আগেই অনুমোদন চেয়েছিল। এই সংগঠনের চেয়ারপারসন সুধান গুরুং বলেন, সরকারের পদক্ষেপ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁরা এই বিক্ষোভের আয়োজন করেন। একই ধরনের সমাবেশ দেশের অন্যান্য জায়গায়ও আয়োজন করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রতিবাদে জাতীয় পতাকা হাতে নেপালের পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে সমবেত হয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। কাঠমান্ডু, নেপাল, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ছবি: এএফপি
 
সংকটের শুরু যেখান থেকে
সম্প্রতি আদালতের একটি আদেশের পর নেপালের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে নিবন্ধনের জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দেয়। ওই সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধন না করায় ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, মূলত বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, ভুয়া খবর ও অনলাইন অপরাধ দমনের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর ওপর নতুন নিয়মনীতি কার্যকর করা হয়েছে।

এই নিষেধাজ্ঞার পর থেকে টিকটকে সাধারণ নেপালিদের ধুঁকতে থাকা জীবনের বিপরীতে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল পণ্যের প্রদর্শন এবং ব্যয়বহুল অবকাশযাপনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষে আহত একজনকে সরিয়ে নিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। কাঠমান্ডু, নেপাল, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ছবি: এএফপি 

 সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে রোববার একদল সাংবাদিক রাজধানীতে সমাবেশ করেন। তবে সমালোচনাকারীদের প্রতি অসন্তোষ জানান প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। রোববার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘কিছু ব্যক্তির কাজ হারানোর চেয়ে দেশের স্বাধীনতা বড়। আইনকে উপেক্ষা, সংবিধান অবমাননা এবং জাতীয় মর্যাদা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অসম্মান কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?’

কে পি শর্মা অলি সরকার আমলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে বলে সমালোচকেরা বলছেন। এর আগে ২০২৩ সালে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও সাইবার অপরাধ ঠেকানো নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে ৯ মাস টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে। পরে টিকটক কর্তৃপক্ষ সরকারের নিয়ম মেনে নিবন্ধন নেওয়ার পর তাদের আবার কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হয়।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন