[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

৪০ বছর পর প্রাণ ফিরে পেল গোমস্তাপুরের ওঁরাওদের কারাম উৎসব

প্রকাশঃ
অ+ অ-

গ্রামের আখড়ায় (বড় খোলা উঠান) কারাম ডালকে ঘিরে চলছে নাচ-গান। বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের শেরপুর কোঠাডাঙ্গা গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
গ্রামের আখড়ায় (বড় খোলা উঠান) কারাম ডালকে ঘিরে চলছে নাচ-গান। বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের শেরপুর কোঠাডাঙ্গা গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রায় ৪০ বছর পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের শেরপুর কোঠাডাঙ্গা গ্রামে শুরু হয়েছে ওঁরাও সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব বা ডালপূজা। গ্রামের নারীদের উদ্যোগে আবার চালু হওয়া এ উৎসব ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে সম্প্রীতি, আনন্দ আর নাচ–গানের আবহ।

গত বুধবার সন্ধ্যায় আখড়ায় কারামগাছের ডাল পুঁতে পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসব। রাতভর চলে নাচ-গান। বৃহস্পতিবার বিকেলে আখড়া থেকে কারাম ডাল তোলা হয়। এরপর মাদল-বাঁশির তালে নেচে-গেয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরিয়ে পুকুরে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দুই দিনব্যাপী উৎসব। তবে সেদিনও গভীর রাত পর্যন্ত নারী-পুরুষ ও শিশুরা গান ও নাচে অংশ নেন।

বুধবার গোধূলিবেলায় দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির তিন কিশোরী স্নান শেষে ভেজা কাপড়ে ধানগাছ, দূর্বাঘাস, কাদো ফুল ও সুতা দিয়ে কারাম ডাল সাজাচ্ছে। আগের রাত থেকে তারা নির্জলা উপোসে ছিল। অন্যদিকে তিন কিশোর দূরের গ্রাম থেকে খিলকদমের ডাল কেটে নিয়ে আসে। তারাও উপোস করেছিল। নতুন ধুতি পরে তারা ডাল নিয়ে এলে কিশোরীরা ফুল ছিটিয়ে বরণ করে। এরপর নারীদের সঙ্গে নেচে গেয়ে আখড়ায় তিনটি ডাল পাশাপাশি পুঁতে দেওয়া হয়। পূজা শেষে কিশোর-কিশোরীরা বাড়ি গিয়ে উপোস ভেঙে সেজেগুজে আখড়ায় ফিরে আসে।

বুধবার গোধূলিবেলায় দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির তিন কিশোরী স্নান শেষে ভেজা কাপড়ে ধানগাছ, দূর্বাঘাস, কাদো ফুল ও সুতা দিয়ে কারাম ডাল সাজাচ্ছে। আগের রাত থেকে তারা নির্জলা উপোসে ছিল। অন্যদিকে তিন কিশোর দূরের গ্রাম থেকে খিলকদমের ডাল কেটে নিয়ে আসে। তারাও উপোস করেছিল। নতুন ধুতি পরে তারা ডাল নিয়ে এলে কিশোরীরা ফুল ছিটিয়ে বরণ করে। এরপর নারীদের সঙ্গে নেচে গেয়ে আখড়ায় তিনটি ডাল পাশাপাশি পুঁতে দেওয়া হয়। পূজা শেষে কিশোর-কিশোরীরা বাড়ি গিয়ে উপোস ভেঙে সেজেগুজে আখড়ায় ফিরে আসে।

বরণ করার পরে নেচে-গেয়ে গ্রামে আখড়ায় নিয়ে আসছে কারাম ডাল। বুধবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের শেরপুর কোঠাডঙ্গা গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
বরণ করার পরে নেচে-গেয়ে গ্রামে আখড়ায় নিয়ে আসছে কারাম ডাল। বুধবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের শেরপুর কোঠাডঙ্গা গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

গ্রামের মোড়ল ভোলা খালকো (৭৮) আখড়ায় বসে নারী-পুরুষ ও শিশুদের কারাম দেবতা ও পূজার সূচনার কাহিনি শোনান। এর পরই শুরু হয় নাচ-গান, যা চলে সারা রাত।

কারাম উৎসব আবার চালু করার মূল ভূমিকা রাখেন গ্রামের গৃহবধূ মিনতি বাকলা (৪০)। তিনি বলেন, ‘গ্রাম থেকে কারাম উৎসব বা ডালপূজা হারিয়ে গিয়েছিল। সনাতন, বৈষ্ণব, অনুকূল ঠাকুরের অনুসারীরা নিজেদের আদি পালাপার্বণ উদ্‌যাপনে আগ্রহী ছিল না। অথচ আমাদের সবচেয়ে আনন্দের উৎসব ছিল কারাম। প্রায় ৪০ বছর আগে আমার শ্বশুর-দাদাশ্বশুরেরা পূজা করতেন। খরচ আর আগ্রহের অভাবে উৎসব বন্ধ হয়ে যায়। ভেবে দেখলাম, আমাদের আত্মপরিচয় হারিয়ে যাচ্ছে। তাই দুই বছর আগে আবারও কারাম চালু করেছি।’

নেচে-গেয়ে কারাম ডাল বিসর্জন দিতে যাচ্ছেন গ্রামের মেয়েরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
নেচে-গেয়ে কারাম ডাল বিসর্জন দিতে যাচ্ছেন গ্রামের মেয়েরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

গ্রামের নারী বিসরি এক্কা (৬০) বলেন, ‘আখড়ায় লাচতে গেছিনু, কিন্তুক জামাইকে দেখে শরমে লাচতে পারিনি। তেবে সবার নাচ-গান দেখে ভালো লাগিছে। সামনের বচ্ছর আর শরম করবো না।’ বয়স্ক নারী মুঙলি কুজুর, সোহাগী টপ্প্য ও বিশাখা কুজুর জানান, বিয়েশাদি ছাড়া আর কোথাও নাচ-গান করার সুযোগ মেলে না। তাঁরা বলেন, দুই বছর ধরে কারাম উৎসব ফিরিয়ে আনার ফলে নতুন করে আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন। কিশোরী সুবর্ণা কিসপটটা বলে, ‘কারাম পূজা সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা ছিল না। গ্রামে কারাম ফিরে আসায় খুব ভালো লাগছে। আনন্দ হচ্ছে। উপোসটা ঠিকঠাক করতে পেরেছি বলে তৃপ্তি পাচ্ছি।’

পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে কারাম ডাল। বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের শেরপুর কোঠাডঙ্গা গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে কারাম ডাল। বৃহস্পতিবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের শেরপুর কোঠাডঙ্গা গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ওঁরাও সম্প্রদায়ের নেতা বঙ্গপাল সরদার বলেন, ‘আদিবাসীদের সব উৎসব, পালাপার্বণ প্রকৃতিকে ঘিরে। কারাম ডাল যেমন ভ্রাতৃত্বের প্রতীক, তেমনি নতুন ফসল বপনের আচার প্রকৃতির সঙ্গে জীবনের অটুট সম্পর্কের প্রতীক। উৎসব মানুষকে মনে করিয়ে দেয়, একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, সহযোগিতা ও ঐক্যের বন্ধনই সমাজকে টিকিয়ে রাখে। আধুনিকতার ঝড় যতই আসুক, ঐতিহ্যের এই উৎসব আমাদের জীবন ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকবে।’

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন