{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

চাঁদা না পেয়ে তাঁতী দলের নেতার মারধর, গ্রেপ্তারের দাবিতে থানায় গ্রামবাসীর বিক্ষোভ

প্রকাশঃ
অ+ অ-
চাঁদাবাজি ও মারধরের ঘটনায় তাঁতী দলের এক নেতার গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে থানা প্রাঙ্গণে গ্রামবাসীর অবস্থান। মঙ্গলবার দুপুর রাজশাহীর বাগমারা থানা প্রাঙ্গণে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

রাজশাহীর বাগমারায় চাঁদা না পেয়ে এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন তাঁতী দলের এক নেতার বিরুদ্ধে। মারধরে আহত নারায়ণ ভবানী (৫৫) নামের ওই ব্যক্তি বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পর গ্রামের লোকজন তাঁতী দলের নেতাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে থানা চত্বরে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে তাঁরা থানা ত্যাগ করেন।

অভিযুক্ত নবাব হোসেন ওরফে বাচ্চু (৩০) জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বাড়ি উপজেলার গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের চাঁইসাড়া গ্রামে। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ আছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা।

সে (নবাব হোসেন) খুবই খারাপ, হাতে সব সময় অস্ত্র থাকে। মামলা করতেও ভয় পাচ্ছি।
নারায়ণ ভবানী
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের চাঁইসাড়া গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণ ভবানীর কাছে সপ্তাহখানেক আগে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন নবাব হোসেন। তখন হুমকি দিয়ে নবাব বলেন, চাঁইসাড়া গ্রামে নারায়ণকে থাকতে হলে তাঁকে টাকা দিতে হবে, না দিলে সমস্যা হবে। তখন টাকা দিতে অপারগতা জানান নারায়ণ ভবানী। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে নারায়ণ ভবানী গ্রামের একটি চালকল থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে তাঁর গতি রোধ করেন নবাব হোসেন। তাঁকে কেন পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়নি, এ নিয়ে কৈফিয়ত চান। একপর্যায়ে নবাব হোসেন ক্ষুব্ধ হয়ে সেখানেই নারায়ণ ভবানীকে মারধর করে ফেলে চলে যান। পরে লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
হাসপাতালের শয্যায় নারায়ণ ভবানী। মঙ্গলবার বিকেলে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন
 
নারায়ণ ভবানী কৃষিকাজ করেন। ছেলেকে শহরে রেখে লেখাপড়া করান। তাঁর ভাষ্য, গ্রামে সচ্ছল হওয়ায় নবাব হোসেনের চাঁদার টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল শয্যায় ব্যথায় কাতরাচ্ছেন আহত নারায়ণ ভবানী। নবাব হোসেন রড দিয়ে পিটিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সে (নবাব হোসেন) খুবই খারাপ, হাতে সব সময় অস্ত্র থাকে। মামলা করতেও ভয় পাচ্ছি।’

ঘটনাটি জানাজানি হলে চাইসাঁড়া গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের শতাধিক নারী ও পুরুষ ২০ কিলোমিটার দূরে বাগমারা থানায় এসে প্রতিবাদ জানান। তাঁরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, নবাব হোসেনকে গ্রেপ্তার ও নিজেদের নিরাপত্তার দাবি জানান। এ বিষয়ে মামলা গ্রহণ, জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার ও নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে বেলা আড়াইটায় তাঁরা থানা চত্বর ত্যাগ করেন।

বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পুলিশ মামলা গ্রহণ করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। নবাবের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ তাঁকে আটকের চেষ্টা করছে। চাঁইসাড়া গ্রামের লোকজনের নিরাপত্তার বিষয়ও দেখবে পুলিশ।

চাঁইসাড়া গ্রামের বাসিন্দা বিজয় কুমার, গন্ধব রানী, সুলেখা রানীসহ ২০ থেকে ২৫ জন বাসিন্দা বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁতী দলের নেতা নবাব হোসেন চাঁইসাড়া হিন্দুপাড়ায় চাঁদাবাজি করে আসছেন। টাকা ছাড়াও তাঁকে ধান ও চাল চাঁদা দিতে হয়। অনেককে আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁদের কাছ থেকে টাকা দাবি করা হয়। নবাব হোসেন সব সময় ধারালো অস্ত্র নিয়ে চলাফেরার কারণে কেউ প্রতিবাদ করতেও ভয় পান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে গত বছরের ১৪ অক্টোবর নবাব হোসেনকে মব তৈরির সময় রামদাসহ ধরে লোকজন সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছিল। কিছুদিন পর তিনি ছাড়া পান।
 
ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করে গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপির উপজেলা শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান বলেন, নবাবের বিরুদ্ধে এ ধরনের অনেক অভিযোগ রয়েছে।

চাঁদাবাজি ও স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে নবাব হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

তাঁতী দলের বাগমারা উপজেলার আহ্বায়ক মামুনুর রশিদ মামুন  বলেন, ‘গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি। নবাবের অপরাধের দায় বিএনপি বা কোনো সহযোগী সংগঠন নেবে না। সে যে অপরাধ করেছে, এর কোনো ক্ষমা নাই।’
 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন