রাষ্ট্র মানে গ্রামীণ ব্যাংক চালানো নয়, ড. ইউনূসকে ফরহাদ মজহার
প্রকাশঃ
![]() |
| কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
গণ-অভ্যুত্থানের পর পতিত সরকারের সংবিধান ও আমলাতন্ত্র অক্ষুণ্ন রাখায় তীব্র সমালোচনা করেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। তাঁর মতে, বর্তমান সরকারের বৈধতা নিশ্চিত না করে রাষ্ট্র চালানো ও নির্বাচন আয়োজন এক ধরনের ভ্রান্তি। তিনি বলেন, 'রাষ্ট্র মানে কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক চালানো নয়।'
আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজ আয়োজিত ‘ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে মুক্ত না হলে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা অর্থহীন। উপদেষ্টাদের উদ্দেশ করে তিনি মন্তব্য করেন, 'আপনি তো গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এসেছেন, কিন্তু আপনি গণ-অভ্যুত্থানের কেউ নন। এখানে ভুল বোঝার কোনো সুযোগ নেই। এখানে যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের অনেকে সরাসরি রাস্তায় ছিলেন, বুক পেতে দিয়েছেন। আমরা বছরের পর বছর নির্যাতিত হয়েছি, কথা বলতে পারিনি।'
তিনি আরও বলেন, ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সবাই মেনে নিয়েছেন, কেউ প্রকাশ্যে বিরোধিতা করছেন না। তবে ফরহাদ মজহারের অভিযোগ, ইউনূস গণ-অভ্যুত্থানের মূল অভিপ্রায় বুঝতে পারেননি। তাঁর ভাষায়, 'ইউনূস এখন যে জায়গায় আছেন, সেটা বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক। তাঁর প্রথম ভুল ছিল তরুণ শিক্ষার্থীদের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে আখ্যা দেওয়া। অথচ গণ-অভ্যুত্থানের সত্তা কোনো ব্যক্তির নয়, জনগণের। সবাই মিলে এই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে।'
ফরহাদ মজহার বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর প্রথম কাজ হওয়া উচিত ছিল ফ্যাসিস্ট সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থা উৎখাত করা। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, এই অভ্যুত্থানে অনেকে শহীদ হয়েছেন, অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রতি তিনি প্রশ্ন করেন, 'এত বড় আত্মত্যাগের পর আপনি কিসের ভিত্তিতে নির্বাচনের কথা বলছেন?'
নির্বাচন সফলভাবে আয়োজন নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'সফল নির্বাচনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আপনি কিসের ভিত্তিতে নির্বাচন আয়োজন করছেন? দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবেন না। আপনার জনপ্রিয়তা কমেছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।'
ফরহাদ মজহার আরও বলেন, 'বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল বলে কিছু নেই। রাজনৈতিক দল মানে হলো জনগণের সেবা করা, জাতিকে পথ দেখানো, নতুন কথা বলা। কিন্তু এখানে যা আছে, তা হলো লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের আধিপত্য। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, কিন্তু জনগণের সঙ্গে নয়।'
ফরহাদ মজহার শেখ হাসিনার সংবিধান রেখে শপথ নেওয়া ও সেই সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্র পরিচালনার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, 'আপনি একটা অবৈধ সরকার। তবে অবৈধ সরকার বলার মানে এই নয় যে আপনাকে আমরা চাই না। এর মানে হলো, আপনার প্রথম কাজ হলো নিজের বৈধতা নিশ্চিত করা।'
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, 'আমরা অপেক্ষা করেছি যেন আপনার মতি হয়। রাজনীতি কাকে বলে, আইন কাকে বলে, এটা যেন আপনি বুঝেন। রাষ্ট্র মানে কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক চালানো নয়।'
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের প্রসঙ্গেও তিনি মন্তব্য করেন, 'জনগণ কি চায়, নতুন গঠনতন্ত্র চায় কি না—এটা বাদ দিয়ে মাফিয়া শ্রেণির সঙ্গে কথা হচ্ছে। বিদেশ থেকে লোক এনে বসানো হয়েছে, যারা মূলত করপোরেট স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করেছেন।'
তরুণদের মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার বিষয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, 'কিছু তরুণকে মন্ত্রণালয়ে নিয়েছেন, এটা ভালো। কিন্তু তারা মন্ত্রণালয় চালাতে পারেনি। তরুণরা দেশ চালাবে—এটাই আমাদের স্বপ্ন। কিন্তু শেখ হাসিনার আমলাতন্ত্র থাকায় তাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়েছে।'
তিনি একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীকে দলের নাম পরিবর্তনের কথা বলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, 'জামায়াতের অনেক ইতিবাচক ভূমিকা আছে। কিন্তু এক কালো দাগের কারণে ইসলামের নতুন পুনর্জাগরণও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।'
সভায় জামায়াতে ইসলামের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ডাকসুর মতো নির্বাচনে উপদেষ্টাদের যুক্ত হওয়া প্রয়োজন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, '৩০০ আসনে নির্বাচন হলে কী হবে?' এছাড়া কল রেকর্ড ফাঁসের ভয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ফোনে কথা না বলে সরাসরি দেখা করে কথা বলার বিষয়ক সমালোচনা করেন।
সভায় আরও বক্তব্য দেন সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সাদেক রহমানের সঞ্চালনায় সাবেক সচিব ও কূটনীতিক আবদুল্লাহ আল মামুন, আইনজীবী আবু হেনা রাজ্জাক, জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মজুমদার প্রমুখ।
.jpg)
Comments
Comments