[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ঢাকা শহরে নতুন বাস চালু-রুট পারমিটকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব

প্রকাশঃ
অ+ অ-
রাজধানীর একটি রুটে ২০২১ সালে চালু হওয়া ঢাকা নগর পরিবহন যাত্রীদের ভালো লেগেছিল। কিন্তু কিছু কারণে বন্ধ হয়ে গেছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

ঢাকা মহানগর এলাকায় নতুন বাস চালানো এবং রুট পারমিট দেওয়ার দায়িত্ব বর্তমানে ঢাকা মেট্রো যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটির। কমিটির প্রধান পদে রয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার।
 
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিভিত্তিক বাস পরিষেবা চালু হলে কমিটির ক্ষমতা প্রায় শেষ হয়ে যাবে। অর্থাৎ ঢাকায় নতুন বাস নামানো বা রুট পারমিট দেয়ার ক্ষমতা পুলিশের হাতে থাকানো সুবিধা হারাবে। পুলিশের অনাগ্রহের পেছনে এ কারণটিই প্রধান বলে অভিযোগ উঠেছে। 
 
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালে ‘বাস পরিবহন সেবা পরিচালনা ও বিশেষ অধিকার বিধিমালা’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে ডিএমপি বিধিমালার বিরুদ্ধে মতামত দেয়। তাদের চাওয়ায় কমিটির ক্ষমতা বজায় রেখে বিধিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত বিধিমালাটি অনুমোদিত হয়নি।


অতীতে পুলিশের কিছু কর্মকর্তার নামে পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে আলোচিত উদাহরণ সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তার স্ত্রী আফরোজা জামান মৌমিতা ‘ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড’ এবং গুলশান চাকা নামে দুটি পরিবহন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দায়িত্বকালীন সময়ে তার স্ত্রী ঢাকায় ব্যবসা চালাতেন। এছাড়া পুলিশের বিভিন্ন স্তরের অনেক কর্মকর্তার নাম-বেনামে পরিবহন খাতে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, রুট পারমিট পুলিশের হাতে থাকায় সংস্থার সদস্যরা ব্যবসায় সুবিধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। নতুন বাস চালানোর বা রুট পারমিট দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ লেনদেনের বিষয়ও বহু বছর ধরে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে এ সুবিধা পুলিশের কাছেও পৌঁছায়। এ কারণে কিছু কর্মকর্তা কমিটির ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে চাচ্ছেন এবং বাস রুট র‍্যাশনালাইজেশনের বিরোধিতা করছেন।

ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. জিললুর রহমান বলেন, 'এসব অভিযোগ সত্য নয়। বাস রুট র‍্যাশনালাইজেশন নিয়ে শীঘ্রই একটি সভা হবে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করব।' 

এদিকে ২০১৮ সালে ডিটিসিএ গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং কোম্পানিভিত্তিক বাস চালু করার জন্য নতুন রুট পারমিট দেওয়া বন্ধ করে। তবে সম্প্রতি ২১টি রুটে ২ হাজার ৬১৫টি বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ডিটিসিএর কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের কিছু কার্যক্রম কোম্পানিভিত্তিক বাস পরিষেবার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরিবহন মালিক সমিতি ‘গোলাপি বাস সার্ভিস’ চালু করে। উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।

ডিটিসিএর এক কর্মকর্তা বলেন, 'কোম্পানিভিত্তিক বাস প্রবর্তনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ চলছে। একাধিক রুটে পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা চালানো হয়েছে। কিন্তু আলাদাভাবে বাস রুট করার উদ্যোগ কাজের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে।' 

কোম্পানিভিত্তিক বাস প্রবর্তনের সুপারিশ প্রথমবার করা হয় ২০০৫ সালে। ২০১৫ সালে তৎকালীন মেয়র আনিসুল হক উদ্যোগ নেন। ২০১৮ সালে কমিটি গঠিত হয়। ২০২১ সালে ডিটিসিএ কারিগরি সহায়তা প্রকল্প নেয়। তবে মালিকদের আপত্তি ও পুলিশের অনাগ্রহের কারণে প্রকল্প ধীরে এগোচ্ছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন বলেন, 'মালিকরা এখন বাস রুট র‍্যাশনালাইজেশনের প্রতি আন্তরিক। পুলিশও সহযোগিতা করছে। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব এখনও পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদিত হয়নি, পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠানো হচ্ছে।' 

তিনি আরও বলেন, 'ঢাকার পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামোর দায়িত্ব অনেক সংস্থার হাতে। চার-পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করা কঠিন। সবকিছু এক মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকলে কাজ সহজ হবে।' 

বুয়েটের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক বলেন, 'গণপরিবহনের রুট পারমিট দেয়ার আগে চাহিদা, স্টপেজ, বাসের সময়সূচি-সবই বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ধারণ করা হয়। পৃথিবীর কোথাও এ কাজ পেশাদারদের মাধ্যমে হয়। আমাদের দেশে পুলিশ ও কিছু মালিক-রাজনীতিক কাজ করছে, যা সমস্যার কারণ।' 

তিনি আরও বলেন, 'রুট পারমিট দেয়ার কোনো মডেল পুলিশের কাছে নেই। পুরোপুরি অবৈজ্ঞানিকভাবে তারা পারমিট দেয়। স্বার্থ জড়িত থাকার কারণে পুলিশ কাজ ছাড়তে চাচ্ছে না। কোম্পানির ব্যানার কেনাবেচাও এ ব্যবসার অংশ।' 

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, 'জনগণ সেবা গ্রহণ করছে। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের অংশগ্রহণ নেই। কোন রুটে কত পরিবহন প্রয়োজন তা জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে নির্ধারণ করা সহজ হবে।' 

ঢাকায় কোম্পানিভিত্তিক বাস পরিষেবা চালু করার জন্য ডিটিসিএ একটি কারিগরি সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছিল, তবে অনুমোদিত হয়নি। ঢাকায় বাস রুট র‍্যাশনালাইজেশনের জন্য ২০১৮ সালে গঠিত কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন