‘প্রতিটি ভোটের মূল্যায়নে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের বিকল্প নেই’
![]() |
পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনসহ বিভিন্ন দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিল। আজ শুক্রবার বিকেলে বরিশাল নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনসহ বিভিন্ন দাবিতে বরিশালে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। শুক্রবার বিকেলে বরিশাল নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ে জামায়াত ও সদর রোডের অশ্বিনীকুমার হল চত্বরে ইসলামী আন্দোলন সমাবেশের পর বিক্ষোভ-মিছিল বের করে। কর্মসূচিতে দল দুটির বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকেলে বরিশাল মহানগর জামায়াতে ইসলামী বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউয়ের এই সমাবেশে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
সমাবেশে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, প্রতিটি ভোটের মূল্যায়নে পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, দেশের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভোটের কোনো বিকল্প নেই। দেশের মানুষ এমন একটি নির্বাচন চায়, যাতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এ জন্যই প্রয়োজন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন।
সমাবেশ উপলক্ষে বরিশাল মহানগর ও আশপাশের এলাকা থেকে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। তাঁদের হাতে ছিল ব্যানার ও বিভিন্ন স্লোগান লেখা ফেস্টুন।
মুজিবুর রহমান বলেন, ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের আর এ দেশে কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না। প্রশাসনের মধ্যে এখনো ফ্যাসিস্টদের দোসরেরা ঘাপটি মেরে আছে। তাদের সরিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। জাতীয় পার্টিসহ যেসব দল ফ্যাসিবাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনা জরুরি। তাদের বিচার করতে হবে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও বরিশাল মহানগরের আমির জহির উদ্দিন মু. বাবর। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ আতিকুল্লাহ। আরও বক্তব্য দেন বরিশাল মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির মাহমুদ হোসাইন, মহানগর সেক্রেটারি মাওলানা মতিউর রহমান, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাহমুদুন্নবী তালুকদার, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি মিজানুর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি নগরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
![]() |
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও পিআর পদ্ধতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিক্ষোভ। শুক্রবার বিকেলে বরিশাল নগরের সদর রোডে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
এদিকে ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে বক্তারা বলেন, পিআর পদ্ধতিতে ভোটাররা ব্যক্তি প্রার্থী নয়, বরং দলকে ভোট দেন। তাঁরা বলেন, অনেকেই দাবি করছেন, এতে ভোটাররা তাঁদের আসনে সংসদ সদস্য কে হবেন, তা জানতে পারবেন না; কিন্তু এটা সঠিক নয়। কেননা প্রতিটি দলই আগে থেকে তাদের প্রার্থী তালিকা তৈরি করে রাখে। ফলে আসনভিত্তিক জনপ্রিয় প্রার্থীরাই নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে ভোটের প্রকৃত মূল্যায়ন সম্ভব হবে।
ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল নগর সভাপতি অধ্যাপক মো. লোকমান হাকীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিলে সঞ্চালনা করেন নগর সেক্রেটারি মাওলানা আবুল খায়ের এবং জেলা সেক্রেটারি মাওলানা হাফিজুর রহমান।
লোকমান হাকীম বলেন, ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন হওয়া আর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এক বিষয় নয়। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ইতালিতে প্রায়ই সরকার বদল হলেও দেশটি রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল নয়। আবার বাংলাদেশে ১৯৮১ সাল থেকে সরকারগুলো প্রায় পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেছে। কিন্তু তাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসেনি। কারণ, এখানে দলগত বিভাজনই মুখ্য সমস্যা। সেই বিভাজন নিয়েই জোট-মহাজোটের সরকারও দেশ পরিচালনা করেছে। ফলে পিআর পদ্ধতি চালু হলে সরকার অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে—এ ধারণা অমূলক।
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) উপাধ্যক্ষ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, যারা ৩৩ থেকে ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রায় শতভাগ ক্ষমতা ভোগের সুবিধা নিতে চায়, তারাই পিআর পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। যারা দেশের রাজনীতিকে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও পেশিশক্তির পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত রাখতে চায়, বিদেশে সম্পদ পাচার করে সুবিধা নেয়, তারাই এ পদ্ধতির বিপক্ষে কথা বলে। মূলত ৫৪ বছরের পুরোনো ব্যবস্থার ক্ষতিকর ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থেই তারা সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল নগর সহসভাপতি সৈয়দ নাছির আহমাদ, জেলা সহসভাপতি মুহাম্মাদ শেখ শামসুল আলম, নগর সহসভাপতি ইদ্রিস আলী, নগর জয়েন্ট সেক্রেটারি আজিজুল হক, নগর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুফতি নাসির উদ্দিন প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে নগরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন