নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই চিন্তিত পুলিশ
১ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯–এ ফোন করে জানানো হয়, শ্যামলী হাউজিং এলাকায় এক যুবককে আটকে রাখা হয়েছে। খবর পেয়ে আদাবর থানার চার সদস্যের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে যায়।
পুলিশ যখন ওই যুবককে উদ্ধারের চেষ্টা করে, তখন ৮-১০ জনের একটি দল তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় কনস্টেবল আল-আমিন দা–এর কোপে আহত হন এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
এরপর থেকে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জরুরি ফোনকল পেলেও অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে সেখানে যেতে চাইছেন না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আদাবরের ঘটনার পর এখন আলোচনা হচ্ছে, জরুরি কলের ক্ষেত্রে কীভাবে কাজ করা হবে। কারণ সবার ভেতরে ভয় কাজ করছে। টহল টিম সাধারণত চার-পাঁচজনের বেশি হয় না। যদি আবার এমন ঘটনা ঘটে, আমাদের নিরাপত্তা দেবে কে?'
গত বছরের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে পুলিশ প্রায়ই জনরোষের মুখে পড়ছে। বিশেষ করে আন্দোলনে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে থানার কর্মকর্তারা অনেক সময় জনগণের ক্ষোভের শিকার হচ্ছেন।
ডিএমপির আরেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, '৯৯৯ থেকে কল পেলে আমরা বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি। কিন্তু কোথাও ভিড় বা ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকলে সেখানে সরাসরি যেতে চাই না। সেক্ষেত্রে অন্তত দুটি টহল দল পাঠানোর চেষ্টা করি।'
ঢাকা জেলার এক উপপরিদর্শক বলেন, 'শহরে ঘটনাস্থলে যাওয়া তুলনামূলক সহজ। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায়, যেখানে মানুষ কম থাকে, সেখানে নিরাপত্তার ঝুঁকি বেশি।'
এমনই এক ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীর শিবপুরে। গত ১২ জুলাই এক পরিবারের সঙ্গে বিরোধের পর রিনা বেগম ও তাঁর দুই আত্মীয়ের ওপর হামলা হয়। তারা সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯–এ ফোন করেন। কিন্তু পুলিশ যায়নি। পরে তারা গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, থানায় গিয়ে সাহায্য চাইতেও ব্যর্থ হন।
আরও অভিযোগ আছে, কোথাও কোথাও পুলিশ টাকা দাবি করেছে কিংবা সরাসরি না গিয়ে ফোনেই সমাধানের চেষ্টা করেছে।
গত ১৮ জুলাই গাইবান্ধার সাঘাটায় এক ঘটনায় সুমাইয়া বখত বারবার ৯৯৯–এ ফোন করে মেয়েকে উদ্ধারের অনুরোধ জানান। তিন ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও তিনি অভিযোগ করেন, সদস্যরা দুই হাজার টাকা নিয়েছেন। যদিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
জাতীয় জরুরি সেবা মিডিয়া শাখার পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার বলেন, 'আমরা প্রতিটি কলের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করি এবং তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় থানায় জানাই। তবে অনেক সময় পরিবহন বা জনবল সমস্যার কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হয়।'
তিনি আরও বলেন, 'একটি টহল দলকে যদি একসঙ্গে একাধিক ঘটনার দায়িত্ব নিতে হয়, তখন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করা হয়। সে কারণেও অনেক সময় বিলম্ব হয়।'
অভিযোগের বিষয়ে তিনি জানান, 'আমাদের একটি অনুসন্ধান টিম আছে। কোনো অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখা হয়। এ ধরনের ঘটনা খুবই সীমিত।'
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৯৯৯ হেল্পলাইনে এসেছে প্রায় ৬ কোটি ২৩ লাখ ফোনকল। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ৭২ লাখ কলকারীকে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন