হাতকড়ার ঘটনায় মানবাধিকার হানি
![]() |
হাতকড়া | গ্রাফিক্স: পদ্মা ট্রিবিউন |
আসামিদের আদালতে আনা–নেওয়ার সময় হাতকড়া পরানো নিয়ে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে। সম্প্রতি রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের পিছমোড়া করে হাত বাঁধা অবস্থার ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—তারা কি এমন ভয়ঙ্কর আসামি, যাদের এভাবে আনতে হবে?
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, হাতকড়া দেওয়া আসলে শাস্তি দেওয়ার মতো আচরণ। এতে আসামির মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, শুধু পালানোর আশঙ্কা থাকলেই হাতকড়া ব্যবহার করা যায়, শাস্তি বা অপমানের জন্য নয়। জাতিসংঘও এটিকে অপমানজনক বলেছে।
আইনজীবীরা
মনে করিয়ে দেন, পুলিশ বিধিমালার ৩৩০ থেকে ৩৩২ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে—আসামির
চরিত্র ও ঝুঁকি বিবেচনায় পুলিশ চাইলে হাতকড়া ব্যবহার করতে পারে। তবে এ
নিয়ে মতভেদ আছে।
ঘটনার সূত্র ২৮ আগস্ট। রাজধানীর সেগুনবাগিচার
রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদে আয়োজিত এক
অনুষ্ঠানে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
হাফিজুর রহমান কার্জন ও সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাসহ ১৬ জনকে মারধর করে
আটকে রাখা হয়। পরে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। পরদিন তাদের
সবাইকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে আনা হয়। সাংবাদিক পান্নাকে নেওয়ার সময় পিছমোড়া
করে হাত বাঁধা হয়।
সাংবাদিকদের সামনে পান্না বলেন, 'আমার হাতে
হাতকড়া, দেখতেও দিচ্ছে না।' পুলিশ তখন তাকে বাধা দেয়। তিনি জোরে বলেন,
'হাতকড়া পরাবেন, কিন্তু দেখাতে দেবেন না—এ কেমন কথা?'
মানবাধিকারকর্মী
নূর খান লিটনের মতে, হাতকড়া আসলে এক ধরনের শাস্তি, যা বন্দির অধিকার
ক্ষুণ্ন করে। তার প্রশ্ন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা সাংবাদিকদের এভাবে
অপমানজনকভাবে কেন আদালতে আনা হবে? রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকের জন্মগত
অধিকার রক্ষা করা।'
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, আদালতে আসামিরা অনেক সময় স্লোগান দেয়, কাগজ ছুঁড়ে
মারে, হ্যান্ডশেকের নামে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। এতে আদালতের নিরাপত্তা ও
শৃঙ্খলা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। তাই হাত পিছমোড়া করে বাঁধা ছাড়া উপায় নেই।
সুপ্রিম
কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলছেন, 'এভাবে আদালতে তোলা আইনের
শাসনের পরিপন্থি। গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা ভেবেছিলাম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা
হবে। কিন্তু আসামিদের যেভাবে অপমানজনকভাবে আদালতে আনা হচ্ছে, তা থেকে বোঝা
যায় আমরা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেইনি। সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।'
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন