কেরানীগঞ্জে তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ না করার দাবিতে কৃষকদের মানববন্ধন
প্রতিনিধি কেরানীগঞ্জ
অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ঢাকার কেরানীগঞ্জে তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ চেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন কৃষক ও এলাকাবাসী। আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা-নবাবগঞ্জ মহাসড়কের কেরানীগঞ্জের নতুন সোনাকান্দা পেট্রলপাম্প সড়ক এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন ফসলি জমির কয়েক শ মালিক ও এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন।
সোনাকান্দা গ্রামের কৃষক আমানউল্লাহ বলেন, ‘আমি ৩৫ বছর ধরে কৃষিকাজ করছি। সোনাকান্দা মৌজায় আমার আট বিঘা তিন ফসলি জমি রয়েছে। বছরজুড়েই সেখানে ফসল ও শাকসবজি চাষ করি। আমাদের ওই সব ফসলি জমি অধিগ্রহণের পাঁয়তারা চলছে। যদি এই জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তাহলে পুরো কেরানীগঞ্জের ক্ষতি হবে। আমরা কেরানীগঞ্জবাসীর সবজির চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়ও বিক্রি করি। সেই আয় দিয়ে আমাদের ঘর–সংসার চলে। জমি চলে গেলে আমরা এই বয়সে কী করে খাব? এর আগেও বিসিক শিল্পনগরী ও কেমিক্যাল পার্কের নামে আমাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এভাবে কেরানীগঞ্জের ফসলি জমি হারিয়ে যাচ্ছে।’
আরেক কৃষক সোবহান আলী (৫৭) বলেন, ‘আমগো গ্রামের হগলতে চাষবাস কইরা খায়। ঢাকা থেইকা লুক আইসা আমগো জমির শাকসবজি কিনা লয়া যায়। জমি নিয়া (অধিগ্রহণ) গেলে আমরা সবাই না খাইয়া মরুম।’
সোনাকান্দা গ্রামের গৃহবধূ জুলেখা বেগম (৬৫) তাঁর দুই নাতিকে নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই গ্রামে আমাদের চার বিঘা জমি রয়েছে। আমার বাবা কৃষিকাজ করতেন। বিয়ের পর দেখেছি আমার স্বামীও কৃষিকাজ করেছেন। এখন আমার ছেলেও কৃষিকাজ করে খায়। আমার পরিবারের তিন পুরুষ এই গ্রামে কৃষিকাজ করে সংসার চালিয়েছে। আমাদের এলাকায় ফসলি জমি নষ্ট করে কোনো শিল্পকারখানা চাই না। আমাদের গ্রামের মাটি খুবই শক্তিশালী। সারা বছরই এখানে ফসল ফলে। আমরা আমাদের ভিটামাটি হারাতে চাই না।’
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, অতীতে সরকার ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, বিসিক শিল্পনগরী, পানগাঁও পোর্ট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কেরানীগঞ্জে বিশাল আকারের কৃষিজমি অধিগ্রহণ করেছে। এ অবস্থায় আবারও যদি জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তাহলে অনেকেই ভিটামাটি হারা হবেন।
সোনাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা কলেজশিক্ষক গোলাম হোসেন বলেন, ‘ঢাকার আশপাশে অনেক অনাবাদি জমি আছে। সেখানে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত। আমাদের অনুরোধ এই প্রকল্প কেরানীগঞ্জ ছাড়া অন্য কোথাও বাস্তবায়ন করা হোক।’
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেল সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাতুল মাওয়া জানান, কর্মসংস্থান, দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন ও পরিকল্পিত শিল্পায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অধীন কেরানীগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রস্তাবনা এসেছে। এই বিষয়ে আজ বিকেলে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কেরানীগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরীতে বৈঠক হয়। তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণ অনেক দূরের কথা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হয়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এতে গ্রামবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন