[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ঠিকাদারের হস্তান্তরের আগেই মধুমতীর তীর সংরক্ষণ বাঁধে ধস

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি ফরিদপুর

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার চর আজমপুর গ্রামে মধুমতি নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ ধসে পড়েছে। গতকাল সোমবার বেলা একটার দিকে তোলা হয় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন   

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর ডান তীর সংরক্ষণ বাঁধের ৩০ মিটার অংশ ধসে পড়েছে। গতকাল সোমবার ভোর থেকে বাঁধের ব্লকগুলো খসে পড়া শুরু করে। ভাঙন রোধে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ ধসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে উপজেলার গোপালপুর ও টগরবন্দ ইউনিয়নের মিলনস্থল চর আজমপুর এলাকায়। এতে নদীর তীরে বসবাসরত শতাধিক পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ওই এলাকার ডান তীর রক্ষায় (পূর্ব পাশ) ৩০০ মিটার বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে এটি এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।

২০২৩ সালের ৬ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ফরিদপুর ও মাগুরা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ‘মধুমতি নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ শিরোনামে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এটি ২৮টি প্যাকেজে আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী এলাকার সাড়ে সাত কিলোমিটার এলাকায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮১ কোটি ১০ লাখ টাকা; তত্ত্বাবধানে পাউবো।
পাউবোর ফরিদপুর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মধুমতি নদীর ডান তীর রক্ষায় ২ নম্বর প্যাকেজের আওতায় আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর এলাকায় ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য কাজ পায় মেসার্স লিটন মল্লিক নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে আনুমানিক ১২ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে এ কাজ শুরু হয়। গত ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, কাজের তদারকি ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় এবং যথাযথ ডাম্পিং না করে সিসি ব্লক বসানোর কারণে নদীর স্রোতে বাঁধের অংশ বিশেষ ধসে পড়েছে।

চর আজমপুর এলাকার বাসিন্দা হান্নান শরীফ (৬২) বলেন, নদীভাঙন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হলে তাঁরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু কাজ শেষ না হতেই বাঁধ ধসে পড়েছে। কাজ নিম্নমানের হয়েছে বলেই এ ঘটনা ঘটেছে। দ্রুত তীর সংরক্ষণ বাঁধ মেরামত না করা হলে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর বিলীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

আরেক বাসিন্দা শেফালী বেগম (৫৫) বলেন, ‘স্থায়ী বাঁধ হওয়ার কারণে গত দুই মাস আগে ধারদেনা করে বাড়িতে একখান ঘর দিয়েছি। কিন্তু সেই বাঁধও নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের এখন কী হবে? ঘরবাড়ি ভেঙে গেলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব?’

চর আজমপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাহীন শেখ বলেন, গতকাল দুপুরে তিনি বাঁধ ধসে পড়ার খবর জানতে পারেন। তিনি বলেন, নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এটি পাউবোর কাছে হস্তান্তর করেনি। বাঁধের মেরামত দ্রুত না করা গেলে ওই এলাকা নদীভাঙনের কবলে পড়বে।

চর আজমপুর এলাকায় বাঁধ নির্মাণের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লিটন মল্লিক। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক জিয়াউর রহমান বলেন, নদীতে অতিরিক্ত পানির চাপে বাঁধের কিছু অংশ ধসে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ওই অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হবে। পরে নদীর পানি কমলে ব্লক স্থাপন করে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করে দেওয়া হবে।

ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব হোসেন বলেন, বাঁধের অংশ বিশেষ ধসে পড়ার খবর শুনে গতকাল বিকেলেই পাউবোর একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় দায়িত্ব তাদের। বাঁধের ধসে যাওয়া অংশের কাজ পুনরায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলতে শুরু করেছে। পানি কমলে ব্লক বসানো হবে।

কাজের তদারকি সঠিকভাবে হয়নি, এলাকাবাসীর এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘ঢালাও অভিযোগ সঠিক নয়। আমাদের চলমান অন্যান্য প্যাকেজের থেকে ওই কাজ বেশি ভালো হয়েছে।’ বাঁধ ধসের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, নদীর স্রোতধারার পরিবর্তনের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন