সশস্ত্র বাহিনীর নতুন বেতন নির্ধারণে সরকার গঠন করল কমিটি
কমিটিকে জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫-এর সঙ্গে সমন্বয় এবং নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করতে বলা হয়েছে।![]() |
সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী |
সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের নতুন বেতনকাঠামো নির্ধারণে সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটি, ২০২৫ গঠন করেছে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. ফয়জুর রহমানকে সভাপতি করে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ৯ সদস্যের এই কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘প্রধান উপদেষ্টা প্রীত হয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের জন্য (বেসামরিক কর্মকর্তা/কর্মচারী ব্যতীত) ‘সশস্ত্র বাহিনী বেতন কমিটি, ২০২৫’ নামে একটি বেতন কমিটি গঠনের জন্য সদয় অনুমোদন প্রদান করেছেন।’
কমিটিকে জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫-এর সঙ্গে সমন্বয় এবং নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করতে বলা হয়েছে।
আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে তাদের সুপারিশের ২৫ কপি বই আকারে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে জমা দিতে বলা হয়েছে।
সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে সভাপতি করে গত ২৭ জুলাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতনকাঠামো নির্ধারণে ‘জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫’ গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বেতন কমিটিতে মেজর জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ, রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. জহির উদ্দিন, এয়ার ভাইস মার্শাল রুসাদ দীন আছাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং চ ছা মং, এয়ার কমডোর জামিল উদ্দিন আহম্মদ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মিলিয়া শারমিন এবং ক্যাপ্টেন মো. তৌহিদ সাগরকে সদস্য করা হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নিশাদুল ইসলাম খানকে কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কমিটিকে সশস্ত্র বাহিনীর আওতাভুক্ত সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের (এমওডিসি এবং ধর্মীয় পরামর্শদানকারী কর্মকর্তাসহ) বর্তমান বেতন-ভাতা, অবসর ভাতা ও পারিবারিক অবসর ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে সময়োপযোগী ও যথোপযুক্ত বেতনকাঠামো নির্ধারণে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।
এই কমিটিকে বিশেষায়িত চাকরিধারীদের বেতনকাঠামো নির্ধারণ; বেতন-ভাতার ওপর আরোপযোগ্য কর (আয়কর) জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্তৃক সরাসরি পরিশোধ করার ক্ষেত্রে বেতনকাঠামো স্থিরীকরণ; বেতনবহির্ভূত অন্যান্য সুবিধা যেমন—বাড়িভাড়া, চিকিৎসা, যাতায়াত, আপ্যায়ন, প্রেষণ, কার্যভার, মহার্ঘ, উৎসব এবং শ্রান্তি বিনোদন ভাতা নিরূপণ করতে বলা হয়েছে।
কমিটিকে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সমন্বয়ের পদ্ধতি নিরূপণ; যথোপযুক্ত বা সময়োপযোগী পেনশনসহ অবসর সুবিধা নির্ধারণ; কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজের মান নিরূপণ বা মূল্যায়ন করে বেতন-ভাতা কাঠামোয় প্রতিফলন; সরাসরি সেবা (টেলিফোন, গাড়ি, মোবাইল ফোন ইত্যাদি) সংক্রান্ত প্রাধিকার আর্থিক সুবিধায় নগদায়ন এবং রেশন সুবিধা যৌক্তিকীকরণের সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া উচ্চতর গ্রেড ও ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্তিতে বেতনক্রম নিরীক্ষায় কোনো অসংগতি পরিলক্ষিত হলে তা দূরীকরণের সুপারিশ; বেতনক্রমের বিদ্যমান অসংগতি পুনঃপরীক্ষাপূর্বক বাহিনীগুলোর মধ্যে বিরাজমান বেতন-ভাতার বৈষম্য (যদি থাকে) দূরীকরণের সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।
বেতন কমিটিকে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে জীবনবেগী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাকরির বিষয়ে পদমর্যাদা ও পদবিন্যাস নির্ধারণ; বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট গুচ্ছভুক্ত করার পদ্ধতি নিরূপণ; উচ্চতর স্তরে পদায়ন করতে গিয়ে প্রতিযোগিতার সুযোগ নির্ধারণ; জীবনবেগী চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতার গুরুত্ব নিরূপণ করতে বলা হয়েছে।
পিতা-মাতাসহ অনূর্ধ্ব ছয়জনের একটি পরিবারের জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে কমিশনকে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া অনূর্ধ্ব দুই সন্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়; দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সরকারের সম্পদ পরিস্থিতি, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তাব্যবস্থার জন্য সম্পদের প্রয়োজনীয়তা; সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের অবস্থা; দারিদ্র্য নিরসনের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সম্পদ জোগান ক্রমান্বয়ে স্বনির্ভরতা অর্জনের উপায়; মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ; কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা ও কর্মোদ্যোগ বাড়িয়ে সেবার মান উন্নয়ন; দেশের মৌলিক নীতিমালার সঙ্গে প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিশেষ সম্পর্ক; জীবনযাত্রার ব্যয়ভার ও মান; জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫-এর প্রস্তাবিত স্কেলের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা; মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা আকৃষ্ট করার প্রয়োজনীয়তা; সশস্ত্র বাহিনীর অতীত কীর্তি ও ভাবমূর্তি; শান্তি ও যুদ্ধকালে দেশ ও জাতির প্রতি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য; প্রশিক্ষণ ও চাকরিকালে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের বিপৎসংকুল অবস্থা, কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগী জীবন; পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন থেকে জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময় চাকরিতে ব্যয়; চাকরিজীবনে শারীরিক ও মানসিক যোগ্যতার আদর্শ মান বজায় রাখা; দায়িত্ব ও কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করণার্থে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকা; তুলনামূলক কম দীর্ঘ চাকরির কারণে অল্প বয়সে চাকরি হতে অবসর গ্রহণ; যুদ্ধাবস্থা ছাড়াও যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্তব্য পালনের বিষয়গুলো কমিটিকে বিবেচনায় রাখতে বলা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কমিটি সুপারিশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে নিজস্ব নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করবে। প্রয়োজনবোধে দেশের যে কোনো সংস্থার কাছে যে কোনো তথ্য চাইতে পারবে এবং যে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার সহায়তা নিতে পারবে।
এ ছাড়া কমিটি প্রয়োজনবোধে তিন বাহিনীর জন্য পৃথক পৃথক তিনটি সাব-কমিটি গঠন করে তাদের সুপারিশ বিবেচনা করতে পারবে। সশস্ত্র বাহিনীর যে কোনো সদস্যকে প্রয়োজনে এই কমিটি বা সাব-কমিটির সঙ্গে সংযোজন করতে পারবে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন