[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

নাটোরে ‘বিশ্বাসের তেল-পানি’ নিতে ভিড়, প্রতারণার আশঙ্কায় সতর্ক করলেন সিভিল সার্জন

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি নাটোর

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার চেঁউখালি বায়তুল নুর জামে মসজিদ চত্বরে ইমাম জাহিদুল ইসলামের ‘বিশ্বাসের তেল-পানি’ নেওয়ার জন্য হাজারো মানুষের ভিড়। ২৫ জুলাই দুপুরে তোলা  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার চেঁউখালি গ্রামের বায়তুল নুর জামে মসজিদ চত্বরে ‘বিশ্বাসের তেল-পানি’ দেওয়া-নেওয়া চলছে। শুক্রবার এলেই হাজারো মানুষ মসজিদটির পেশ ইমাম জাহিদুল ইসলামের (৩০) ‘ফুঁ’ দেওয়া পানি ও তেল নিতে আসছেন। ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনাও।

এ বিষয়ে নাটোরের সিভিল সার্জন মোহাম্মাদ মুক্তাদির আরেফীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্প্রতি ঘটনাটি আমি শুনেছি। স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠিয়ে আরও নিশ্চিত হতে হবে। এটা যেন কুসংস্কারের পর্যায়ে না যায়। মানুষ যেন প্রতারিত না হন। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

চেঁউখালি গ্রামের অন্তত ১২ জন বাসিন্দা জানিয়েছেন, জাহিদুল ইসলাম অনেক দিন ধরেই সুস্থতার জন্য তেল-পানিতে ‘ফুঁ’ দেন। কারও কারও উপকার হয়েছে, এমন বিশ্বাস থেকে লোকজনের মধ্যে বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তিন মাস ধরে প্রতি শুক্রবার সেখানে হাজারো মানুষের ভিড় হয়।

গত শুক্রবার বিকেলে চেঁউখালি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের প্রবেশমুখে যানজট। শত শত রিকশা, ভ্যান ও অটোরিকশা গ্রামের দিকে যাচ্ছে। মসজিদসংলগ্ন এলাকায় গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন নারী-পুরুষ। সবার হাতেই তেল-পানির কাচের বোতল। তাঁরা চেষ্টা করছিলেন ইমামের সঙ্গে কথা বলতে। চারপাশে চিৎকার-চেঁচামেচি, ঠেলাঠেলি। গরমে কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পড়েন। আশপাশে কাচের বোতল, গ্লাস বিক্রির পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ চা, পানি, বিস্কুট বিক্রির দোকান বসেছে।

নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার চেঁউখালি বায়তুল নুর জামে মসজিদের ইমাম জাহিদুল ইসলাম | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন    

ভিড়ের মধ্যেই কথা হয় এখানে আসা মজিবর রহমানের (৬৫) সঙ্গে। প্রায় ৫৫ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছেন তিনি। এত কষ্ট করে, হাসপাতাল-ক্লিনিক ছেড়ে কেন এখানে এসেছেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্বাসে অনেক কিছুই পাওয়া যায়। আমি সেই বিশ্বাস লিয়াই হুজুরের পানি পড়া লিতে আইছি। এর বিনিময়ে হুজুর তো কিছু লিচ্ছে না।’ ছাবিয়া বেগম (৫৩) নামের আরেকজন বলেন, ‘এখানে আমার এক আত্মীয়ের বাড়ি। তাঁর কাছ থেকে শুনছি, হুজুরের পানি পড়াতে সমস্যার সমাধান হয়। একবার লিয়া যায়া দেখি উপকার হয় কি না।’ বিশ্বাসের তেল মালিশ করে ব্যথা সারেনি—এমন একজন আগন্তুক ফরিদ উদ্দিন (৪৫)। তবু তিনি কেন আবার এসেছেন, জানতে চাইলে বলেন, ‘এবার অন্য অসুখের জন্য আইছি।’

তবে বিষয়টি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা। নলডাঙ্গা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ধরনের চর্চা এর আগেও আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখেছি। কোনো স্থানেই এই চর্চা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি প্রতারণা বলেই প্রমাণিত হয়েছে। নলডাঙ্গাতেও এর ব্যতিক্রম কিছু ঘটবে না।’

তিন মাস ধরে প্রতি শুক্রবার সেখানে হাজারো মানুষের ভিড় হয়। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন মসজিদ কমিটির সদস্যরা। ২৫ জুলাই দুপুরে তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন    

এ বিষয়ে ইমাম জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কাউকে তেল-পানি পড়িয়ে নেওয়ার জন্য দাওয়াত দিই না। টাকাও নিই না। যাঁরা আল্লাহর কালাম বিশ্বাস করেন, তাঁরা আমার কাছে আসেন। আমি আল্লাহর কালাম পড়ে তেল-পানিতে “ফুঁ” দিয়ে দিই।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন