{getBlock} $results={3} $label={ছবি} $type={headermagazine}

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মাহাত্ম্য অস্বীকারের প্রচেষ্টা চলছে: ফরহাদ মজহার

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ফরহাদ মজহার | ফাইল ছবি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের কোনো তাৎপর্য নেই—এমন চেতনা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবেশের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কোনো পরিবর্তন নেই। প্রশাসনিক ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। অর্থনৈতিকভাবে ভাবার নতুন কোনো চিন্তা নেই।

শুক্রবার বেসরকারি নীতি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস (দায়রা) আয়োজিত বেঙ্গল ডেলটা কনফারেন্সের এক অধিবেশনে ফরহাদ মজহার এ কথা বলেন। শুক্রবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে দুই দিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে।

অধিবেশনে ফরহাদ মজহার বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান একটা ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, দক্ষিণ এশিয়া এবং একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী একটা নতুন ঘটনা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বার্তা হচ্ছে—পুরোনো রাষ্ট্রের ধারণা দিয়ে বাংলাদেশকে নতুনভাবে গঠন করতে যাবে না। বাঙালি, ইসলামিসহ নানা বিভাজনের জাতীয়তাবাদের ধারণা বাদ দিয়ে রাজনৈতিক কমিউনিটি আকারের একটি ধারণা শিখতে হবে। যেখানে বিভিন্ন মত, পথ এবং বিশ্বাস থাকবে। রাজনৈতিক জনগোষ্ঠীর ধারণা সকল প্রকার জাতিবাদ থেকে মুক্তি দিতে পারে।

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, এই গণ-অভ্যুত্থান শুধু শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বা ফ্যাসিস্ট শক্তি বা ব্যক্তি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছিল না; একই সঙ্গে এটা ছিল দিল্লির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের অভ্যুত্থানও। তিনি বলেন, নিজেদের দলীয় পরিচয় পেছনে ফেলে ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কারণে গণ-অভ্যুত্থান হয়।

গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর সবাই যার যার দলীয় জায়গায় ফিরে গিয়ে নানা মতবাদী হয়ে গেল। বামরা ইসলামিদের গালি দিচ্ছে, ইসলামিরা বামদের গালি দিচ্ছে। আবার মারপিট হচ্ছে। ইসলামিক শক্তির হাতে যখন ক্ষমতা এল, সে প্রথম মাজার ভাঙা শুরু করে। সে যে ক্ষমতাটুকু পেয়েছে, তা প্রয়োগ করল তাদের বিরুদ্ধে, যারা সবচেয়ে নিরীহ এবং যাদের দ্বারা এ দেশে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে। এ ধরনের পরিচয়বাদী রাজনীতি বাংলাদেশের জনগণকে একটা রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিগঠিত হতে দিচ্ছে না।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নেই, এটা ভেবে অনেকে হয়তো শান্তিতে আছেন জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, এটি ভুল। শেখ হাসিনা পুরো মাত্রায় আছেন। তাঁর সংবিধান আছে, আইন আছে, আদালত আছে, পুলিশ আছে, সেনাবাহিনী আছে।

নির্বাচন প্রসঙ্গে ফরহাদ মজহার বলেন, লুটেরা মাফিয়া শ্রেণি যারা ক্ষমতায় যেতে চায়, তারা নির্বাচনের কথা বলে। যাদের কাছে কোটি কোটি টাকা আছে, তারাই নির্বাচনের কথা বলছে। তরুণ ছাত্ররাও বিভ্রান্ত হয়ে মনে করেছে যে নির্বাচনী ধারাতে তারা বাংলাদেশকে পরিবর্তন করতে পারবে। নতুনভাবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হলে প্রথাগত ঔপনিবেশিক ধারণা বাদ দিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমতা দিতে হবে।

ফরহাদ মজহার আরও বলেন, ‘ছাত্রদের বিরুদ্ধে একটি প্রচার হচ্ছে যে তারা বিশৃঙ্খলা চায়। তারা কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চায় না। ৫ আগস্টে বাংলাদেশ যে রাজনীতির জন্ম দিয়েছে, এই রাজনীতি ঐতিহাসিকভাবে নতুন ধরনের রাজনীতি। এই রাজনীতি বলছে, গাঁথুনিক রাজনীতি, পুরোনো সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই।’

নারীর অধিকার প্রসঙ্গে ফরহাদ মজহার বলেন, যে অধিকার নারীকে সমাজের অত্যন্ত সামনের সারিতে নিয়ে আসার জন্য যে ধরনের পারিবারিক আইন, সামাজিক আইন দরকার, তা সবাই মিলে একত্রে বসে ঠিক করতে হবে।

অধিবেশনে আরও অংশ নেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। তিনি বলেন, এরশাদ সরকার ও শেখ হাসিনা সরকারের মধ্যে একটা মিল হচ্ছে, তারা উভয়েই একটা উপমহাদেশীয় পরাশক্তি বা ফ্যাসিবাদের দুর্গ দিল্লির প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশকে শাসন করেছিল। তাই দুবারই গণ-অভ্যুত্থান ভারতবিরোধী হয়ে পড়ে।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের সঞ্চালনায় অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রুনেই দারুসসালামের সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার ইকবাল।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন