[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

মাগুরায় প্রামাণ্যচিত্রে ১০ শহীদের আত্মদানের গল্প

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি মাগুরা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মাগুরার ১০ শহীদের আত্মত্যাগ ও আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরা হয় প্রামাণ্যচিত্রে। আজ মঙ্গলবার সকালে মাগুরা জেলা মিলনায়তনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন   

মাগুরায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট কীভাবে গুলিবিদ্ধ হন ছাত্রদল নেতা মেহেদী হাসান রাব্বি? ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে কীভাবে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা কাছ থেকে আজমপুরের রাজু আহম্মেদকে গুলি করেন? ১৯ জুলাই রামপুরায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর বুকে বুলেট নিয়ে ৩৯ দিন বেঁচে থাকার পর কীভাবে হার মানেন শ্রীপুরের যুবক শোহান শাহ?

তাঁদের আত্মত্যাগের গল্প উঠে এসেছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত ‘মাগুরা: ইকোজ অব জুলাই আপরাইজিং’ (মাগুরা: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিধ্বনি) প্রামাণ্যচিত্রে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার সকালে শহরের নোমানী ময়দানে জেলা অডিটরিয়ামে ‘জুলাই শহীদ পরিবারের সম্মিলন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। সেখানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মাগুরার ১০ শহীদের আত্মত্যাগ ও আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরা হয় প্রামাণ্যচিত্রটিতে।

প্রামাণ্যচিত্রে দেখা যায়, গত বছরের ১৮ জুলাই প্রথম মাগুরার শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শ্রীপুর উপজেলার বরইচারা গ্রামের মো. মুত্তাকিন বিল্লাহ, নোহাটা গ্রামের আসিফ ইকবাল ও সদর উপজেলার আজমপুর গ্রামের রাজু আহম্মেদ। ২০ জুলাই তাঁদের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। সে সময় তাঁরা কী ধরনের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, সেই চিত্র উঠে আসে শহীদ পরিবারের স্বজনদের দেওয়া বয়ানে। প্রমাণ্যচিত্রে দেখানো হয়, ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে কাছ থেকে টেনে নিয়ে রাজুকে গুলি করার নির্মম দৃশ্য।

৪ আগস্ট দুপুরে মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালী ও ঢাকা রোড বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন মহাসড়কে আন্দোলনকারী, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মুখোমুখি অবস্থান উঠে এসেছে প্রামাণ্যচিত্রে। সেদিন জেলা ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা উঠে আসে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনদের বয়ানে।

প্রামাণ্যচিত্রে দেখানো হয়, ওই একই দিনে মোহাম্মদপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে কলেজছাত্র আহাদ আলী বিশ্বাস ও সুমন শেখের মৃত্যু হয়। পরদিন ৫ আগস্ট ঢাকার সাভারে গুলিবদ্ধ হয়ে মারা যান কলেজছাত্র মিঠু বিশ্বাস (আলাইপুর, মাগুরা সদর) ও হকার আল আমীন হোসেন (পৌরসভার বরুনাতৈল গ্রাম)। এ ছাড়া ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হওয়ার ৩৯ দিন পর ২৭ আগস্ট ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যাওয়া শোহান শাহের করুণ কাহিনি উঠে আসে তাঁর পরিবারের সদস্যদের বয়ানে।

জেলা প্রশাসক মো. অহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সকাল ১০টায় জেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন শহীদ পরিবারের সদস্য, আন্দোলনে আহত ব্যক্তিরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক ও সচেতন নাগরিকেরা। ১৬ মিনিট ২৬ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের প্রামাণ্যচিত্রটি প্রদর্শনের সময় পুরো মিলনায়তন নীরবতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী, সহযোদ্ধা ও স্বজনদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সেই উত্তাল সময় যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জেলা পরিষদের সৃজনশীল আইডিয়া প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুনিয়া হাসান, মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের মৃধা ফারিয়া সিদ্দিকী ও মাগুরা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের সাদমান সাকিব প্রান্ত নামের তিন শিক্ষার্থীর পরিকল্পনায় এই প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে।

আয়োজকেরা জানান, মাগুরার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস সংরক্ষণ ও শহীদদের আত্মত্যাগ যেন বিস্মৃত না হয়, সে উদ্দেশ্যে প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রদর্শনীর আগে সকালে শহীদদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের অনুভূতি প্রকাশ, আহতদের কথা শোনা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা দেওয়া হয়।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন