বিএনপি নেতাকে মালা দিয়ে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের দোকান দখল
![]() |
সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে ফুলের তোড়া দিচ্ছেন আশিকুল আলম (বাঁয়ে)। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বিএনপি নেতা মাঈনুল হককে ফুলের মালা পরিয়ে দিচ্ছেন আশিকুল আলম | ছবি: সংগৃহীত |
রাজশাহীর জনকল্যাণমূলক সংগঠন রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন ভবনের দোকান দখল করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংগঠনটির ভবনের দোকান ও ভেতরের জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়ার এই অভিযোগ উঠেছে আশিকুল আলম ওরফে লিটুর বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশিকুল আলম আওয়ামী লীগের সময়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। একটি ছবিতে দেখা যায়, আশিকুল আলমের মুখে মিষ্টি তুলে দিচ্ছেন মেয়র লিটন। আরেকটিতে দেখা যাচ্ছে আশিকুল আলম মেয়রকে ফুলের তোড়া উপহার দিচ্ছেন। আরেকটি ছবিতে দেখা যায় আশিকুল আলম মেয়রের ছবিসংবলিত পোস্টার লাগাচ্ছেন। তবে ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তিনি বিএনপি নেতা মাঈনুল হকের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। তাকে ফুলের মালা পরানোর ছবিও ঘুরে বেড়াচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, আশিকুল আলম ভবনের এক নম্বর দোকান দখল করে চেম্বার বানিয়েছেন এবং আন্ডারগ্রাউন্ডে টিন দিয়ে জায়গা ঘিরে রংমিস্ত্রিদের ভাড়া দিয়েছেন। এমনকি ভবনের বিদ্যুতের লাইন বাইরে দোকানে দিয়ে ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভবনটি পরিদর্শন করা হয়েছে।
রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭২ সালের ২১ জুলাই নগরের অলকার মোড়ে। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমথনাথ রায়বাহাদুর এবং প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন করচমাড়িয়ার জমিদার রাজকুমার সরকার (ঐতিহাসিক স্যার যদুনাথ সরকারের বাবা)। সংগঠনটি রাজশাহীর জনকল্যাণমূলক নানা উদ্যোগে অবদান রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজশাহী টাউন হল স্থাপন, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা, বসন্তকুমার কৃষি ইনস্টিটিউট (১৯৩৬) প্রতিষ্ঠা এবং শহরে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের উদ্যোগ। সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা রয়েছে। ১৮৯২ সালে এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন। ১৯২৮ সালে কাজী নজরুল ইসলামও এ হলেই বক্তৃতা করেন। বর্তমানে পুরোনো টাউন হল ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। নিচতলা ও দোতলার দোকান ভাড়া দেওয়া হয়।
![]() |
রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের ভবনের দোকান দখল ও ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে টিন দিয়ে ঘর করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, এক নম্বর দোকানটি আগে মনোয়ারা বেগম নামের একজনের বরাদ্দ ছিল। দীর্ঘদিন ভাড়া না দেওয়ায় সেটি এখন অ্যাসোসিয়েশনের মালিকানায়। এই দোকান ভাড়া দেওয়ার এখতিয়ার কেবল অ্যাসোসিয়েশনের। তবে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, আশিকুল আলম জোর করেই দোকানটি দখল করেছেন এবং মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদও দখল করেছেন।
যোগাযোগ করা হলে আশিকুল আলম দাবি করেন, তিনি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা হিসেবে এক নম্বর দোকানে চেম্বার করেছেন। এটি কোনো দলীয় কার্যালয় নয়, মালিকের কাছ থেকে লিখিতভাবে নেওয়া হয়েছে। তার কাছে দলিল আছে। আন্ডারগ্রাউন্ডের জায়গায় ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানিয়েছেন, ভাড়া রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের তহবিলেই জমা হবে। বিএনপি নেতার শেল্টারে যাওয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শিক্ষাবিদ তসিকুল ইসলাম বলেন, এক নম্বর দোকানের মালিক এখন রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন। এটি কাউকে ভাড়া দেওয়া হয়নি। নিচের জায়গাও কাউকে ঘর করতে দেওয়া হয়নি। রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, অভিযোগ পেয়ে তাঁরা অ্যাসোসিয়েশন ভবন পরিদর্শন করেছেন এবং এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন