প্রতিনিধি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সরাইল
![]() |
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দীর্ঘ যানজটে আটকে আছে শত শত যানবাহন। সোমবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
পণ্যবাহী ট্রাক গর্তে আটকে পড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সরাইল উপজেলার বেড়তলা থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় ও কুট্টাপাড়া মোড় হয়ে শাহবাজপুর সেতু পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই যানজট চলছে। এর মধ্যে বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহনের হাজারো যাত্রী।
হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে দুপুর ১২টা থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড়ের দুই দিকে নিত্যদিনের মতো ৪–৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট চলছিল। বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের পশ্চিম অংশে পণ্যবাহী (ধান) একটি ট্রাক গর্তে পড়ে আটকে যায়। এর পর থেকে যানজট বাড়তে থাকে। রাত আটটার দিকে যানজট মহাসড়কের সরাইল উপজেলার বেড়তলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাজপুর সেতু পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ যানজট বাড়ছেই।
সড়ক ও জনপথ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে ধীরগতিতে। ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজটি করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ৭–৮ বছর ধরে তারা ধীরগতিতে কাজটি করছিল। নানা কারণে একাধিকবার কাজ বন্ধও হয়েছে। মহাসড়কের এক পাশের কাজ প্রায় শেষ হলেও বিভিন্ন স্থানে গর্তের কারণে সড়কটি যানচলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
![]() |
যানজটের মধ্যে বৃষ্টিতে মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্বরোড় মোড় গোলচত্বরের চারপাশে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দূরপাল্লার যানবাহন মহাসড়কের গোলচত্বর এলাকায় এসে চলতে হচ্ছে ১ থেকে ৫ কিলোমিটার গতিতে। এসব গর্ত অতিক্রম করতে পণ্যবাহী যানবাহনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর এসব গর্তে যানবাহন আটকে যাচ্ছে। আবার গোলচত্বরের পশ্চিম-দক্ষিণ ও পশ্চিম–উত্তর পাশে উঁচু করে পাকাকরণ কাজ চলমান রয়েছে। এতে গোলচত্বরের তিন–চতুর্থাংশ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গোলচত্বর অতিক্রম করার জন্য যানবাহকে থেমে যেতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যানজট কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ও সরাইল-নাসিরনগর-লাকাই আঞ্চলিক মহাসড়কে ছড়িয়ে পড়েতে দেখা গেছে। শত শত নারী-পুরুষ হেঁটে গন্তব্যে ছুটছেন। জেলার অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার যানবাহনের হাজারো যাত্রীকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সিলেট থেকে ঢাকাগামী পণ্যবাহী ট্রাকচালক আজম মিয়া সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, শাবাজপুর থেকে এখানে কুট্টপাড়া মোড় (৮ কিলোমিটার) আসতে ২ ঘণ্টা সময় লাগছে। সামনের অংশে যেতে আরও বেশি সময় লাগবে।
ঢাকা থেকে মৌলভীবাজারগামী ব্যক্তিগত গাড়ির যাত্রী আলম খান বলেন, ‘অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা শেষে ভাড়া করে গাড়ি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলাম, এইখানে আইসাই সন্ধ্যা হইয়া গেছে। মা অসুস্থ অইয়া যাইতেছে। বাকি পথ যাইমু কেমনে।’
মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সরাইল থানার পুলিশ ও হাইওয়ে থানার পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাজ করছেন।
সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর আলম রাত সাড়ে ৮টার দিকে বলেন, বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের গর্তে পড়ে পণ্যবাহী একটি ট্রাক আটকে গেছে। এটি উদ্ধারের জন্য পুলিশের রেকার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। বৃষ্টি থামলে ট্রাক থেকে মাল অনলোড করা হবে। এরপর ট্রাক সরাতে হবে।