প্রতিনিধি পঞ্চগড়

মারধর করা হচ্ছে এলজিইডির কার্য সহকারী জাহিদুল ইসলামকে। শনিবার পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ধনীপাড়া এলাকায় | ছবি : ভিডিও থেকে নেওয়া

চলছিল সড়ক পাকাকরণের কাজ। হাত দিতেই কার্পেটিং উঠে যাওয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ করেন স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। কাজ বন্ধও করে দেন তাঁরা। খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহ করতে যান সেখানে। সাংবাদিকদের বক্তব্য দেওয়ার সময় ‘অনিয়মের কিছুই নেই’ বলতেই উপস্থিত লোকজনের মারধরের শিকার হয়েছেন জাহিদুল ইসলাম নামের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) একজন কার্য সহকারী। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

শনিবার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের ধনীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার জাহিদুল ইসলাম এলজিইডির বোদা উপজেলা কার্যালয়ের কার্য সহকারী।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের ধনীপাড়া এলাকার পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক সংযুক্ত ধনীপাড়া থেকে দক্ষিণ গাইঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজ পায় একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর আগে সড়কটির পাকাকরণের কাজ শুরুর পর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। এরপর বেশ কিছুদিন থেকে কাজ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি আবারও এই সড়ক পাকাকরণ কাজ শুরু হয়। কাজ শুরুর পর স্থানীয় লোকজন অনিয়মের অভিযোগ তুললে তাঁদের ভয়ভীতি দেখান এলজিইডি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শনিবার স্থানীয় লোকজন কাজ বন্ধ করে দেন। পরে তাঁরা বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং গণমাধ্যমকর্মীসহ বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে অভিযোগ করেন।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিচ্ছেন কার্য সহকারী জাহিদুল ইসলাম। এ সময় তাঁকে একজন প্রশ্ন করছেন, ‘আপনি বলেন এখানে কাজের কোনো অনিয়ম হচ্ছে কি না, হ্যাঁ বা না?’ পাশ থেকে একজন বলছিলেন, ‘এটা অনিয়ম হচ্ছে কি না, এটা বলেন?’ এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদুল বলেন, ‘এখানে অনিয়মের কিছুই নেই।’ কাজ ভালো হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই পাশ থেকে একজন ‘এই ব্যাটা কাজ ভালো হচে?’ বলেই জাহিদুলকে ধাক্কা দিয়ে মারধর শুরু করেন। একপর্যাায়ে নিজেকে বাঁচাতে তিনি পাশের আমন ধানখেতে নেমে দৌড়ে পালাতে থাকেন। এ সময় তাঁর পিছু নিয়ে এক তরুণ কাছে গিয়ে কিলঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় জাহিদুল মারধর থেকে বাঁচতে নিজের হাত দিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছিলেন।

ঘটনার সময় ময়দানদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বেলাল হোসেন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দুদিন ধরে স্থানীয় লোকজন ফোন করে কাজের অনিয়মের কথা জানাচ্ছিলেন উল্লেখ করে বেলাল হোসেন বলেন, ‘সে জন্য আমি শনিবার দুপুরে সেখানে গেছি। সেখানে দেখি ঠিকমতো পরিষ্কার না করেই (ঝাড়ু না দিয়ে) বিটুমিন দেওয়া হচ্ছিল। বিটুমিন কম দেওয়া হচ্ছিল। কাজের মান খারাপ হওয়ায় স্থানীয় লোকজন কাজ বন্ধ করে দিয়ে হাত দিয়ে কার্পেট তুলে আমাকে দেখাচ্ছিলেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত এলজিইডির একজন কর্মকর্তা স্থানীয় লোকজনকে মোবাইলে ভিডিও করছিলেন। এ জন্য লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। পরে আমি বোদা উপজেলার ইউএনও, সেনা ক্যাম্প ও সাংবাদিকদের খবর দিই।

সাংবাদিকেরা বক্তব্য নেওয়ার সময় এলজিইডির কার্য সহকারীর কাছে অনিয়ম হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি “এখানে অনিয়মের কিছুই নেই” বলতেই উপস্থিত লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে (কার্য সহকারী জাহিদুল ইসলাম) ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। পরে আমি স্থানীয় লোকজনের হাত থেকে তাঁকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে তুলে দিই।’

এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে জাহিদুল ইসলামকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। একপর্যায়ে মুঠোফোনের সংযোগ বন্ধ করে দেন। এ বিষয়ে জানতে এলজিইডির বোদা উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনিও ফোন ধরেননি।

বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিম উদ্দিন বলেন, ‘ধনীপাড়া এলাকায় রাস্তার কাজের অনিয়ম নিয়ে লোকজন উত্তেজিত হয়েছে, এমন খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে মারধরের ঘটনা ঘটেছে কি না, সেটা আমাদের কেউ জানায়নি। পুলিশ চলে আসার পর এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। এ ধরনের কোনো অভিযোগ কেউ করেনি।’