প্রতিনিধি রাজশাহী
![]() |
ন্যায্য দামে সার না পেয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাটে কৃষকদের বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ন্যায্য দামে সার না পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহীর কাঁকনহাটের কৃষকেরা। সমাবেশ থেকে কাঁকনহাটের বিসিআইসি ডিলার ‘মেসার্স জি কে ট্রেডার্সের’ লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানানো হয়। কৃষকদের অভিযোগ, ডিলার বেশি টাকা না দিলে সার দিচ্ছেন না। ওই সার তিনি অন্য উপজেলায় পাচার করছেন।
বৃহস্পতিবার কৃষকেরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এদিকে অভিযোগের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগ তদন্ত করেছে। তদন্ত কমিটি উভয় পক্ষের কথা শুনেছেন। এখন তাঁরা প্রতিবেদন দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন। ডিলারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকেরা জানান, সরকার নির্ধারিত এক বস্তা ডিএপি সারের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা। কিন্তু ডিলার নেন ১ হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। টিএসপির দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা হলেও নেওয়া হচ্ছে দেড় হাজার টাকা। এ ছাড়া ১ হাজার টাকার পটাশের দাম ১ হাজার ২০০ টাকা নিচ্ছে। প্রায় দুই বছর ধরে ডিলার তুহীনা আক্তার কৃষকদের জিম্মি করে বাড়তি টাকা নিচ্ছেন। তাঁরা দাবি করেন, বাড়তি টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করলে নারী নির্যাতন মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। ফলে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা কাঁকনহাট বাজারে সড়ক অবরোধ করেন। এতে পৌর শহরে তীব্র যানজট শুরু হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করে কর্মসূচি শেষ করেন। সমাবেশে কাঁকনহাট ও আশপাশ এলাকার দুই শতাধিক কৃষক অংশ নেন।
সমাবেশে এলাকার কৃষক মেহেদী হাসান বলেন, জি কে ট্রেডার্স পরিচালনা করেন তুহীনা আক্তার নামের এক নারী। তিনি বাড়তি টাকা ছাড়া সার দেন না। বাড়তি টাকা নেওয়ায় তিনি সার বিক্রির কোনো রসিদ দেন না। বাধ্য হয়ে কৃষকদের সার নিতে হয়। আবার পাঁচ বস্তা সার চাইলে তিনি ১০ কেজি দিয়ে ফিরিয়ে দেন। আবার অনেককে সার না দিয়েই ফিরিয়ে দেন। আটকে রাখা সার তিনি তানোর উপজেলায় বেশি দামে সরবরাহ করেন।
মিনারুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘আমি নিজে চাষাবাদের পাশাপাশি ট্রাক থেকে মাল নামাই। নিজে শত শত বস্তা সার তুহীনা আক্তারের গুদামে ঢোকাই। কিন্তু দুদিন পরই তিনি বলতে থাকেন, কোনো সার নেই। তিনি নাকি বাইরে থেকে বেশি দামে সার আনেন। এ কথা বলে তিনি কৃষকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করেন।’
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলেন তুহীনা আক্তারের বাবা তাহাসেন আলী। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁরা ন্যায্য দামেই কৃষকদের কাছে সার বিক্রি করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ বলেন, গত সপ্তাহে জি কে ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে কৃষকদের লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। এরপর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে দেন। তদন্ত কমিটি গতকাল শুনানি করেছে। উভয় পক্ষের বক্তব্য নিয়েছে। এর ভিত্তিতে কমিটি প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।