প্রতিনিধি কিশোরগঞ্জ

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ওয়েবসাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান। শুক্রবার বেলা ১১টায় মসজিদ প্রাঙ্গণে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানা যাবে পাগলা মসজিদের ইতিহাস–ঐতিহ্য, নামাজের সময়সূচিসহ নানা বিষয়। এ ছাড়া এই সাইটের মাধ্যমে ঘরে বসেই পাগলা মসজিদে দান করা যাবে।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় মসজিদ প্রাঙ্গণে ওয়েবসাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পাগলা মসজিদ ও ইসলামিক কমপ্লেক্সের সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান। এ সময় জেলা প্রশাসক এই সাইটের মাধ্যমে মুঠোফোনে ৫ হাজার ৪০০ টাকা পাগলা মসজিদে দান করেন। ওয়েবসাইটটি হলো www.paglamosque.org । ওই ওয়েবসাইটে গিয়ে DONATE NOW-এ ক্লিক করলেই বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে পাগলা মসজিদে দান করা যাবে।

জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান বলেন, ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ শুধু কিশোরগঞ্জের নয়, সমগ্র দেশবাসীর কাছে একটি আবেগের জায়গা। এই মসজিদে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে দান করেন। মানুষের দানে উপচে পড়ে মসজিদের দানসিন্দুকগুলো। প্রতিবার দানসিন্দুকগুলো খুললেই পাওয়া যায় কোটি কোটি টাকা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দানের পরিমাণ বাড়ছে। এই কারণে জনগণের সুবিধার্থে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখন থেকে দেশ-বিদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঘরে বসেই ৫০, ১০০, ২০০, ৫০০, ১০০০ থেকে শুরু করে যেকোনো পরিমাণ টাকা ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে পাগলা মসজিদে দান করা যাবে।

ওয়েবসাইটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দোয়া পরিচালনা করেন পাগলা মসজিদের খতিব মাওলানা আশরাফ আলী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজাবে রহমত, মসজিদ কমিটির সদস্যসচিব ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ মিয়া, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও জেলা আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলী, আল-জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার মুহতামিম মাওলানা শাব্বির আহমাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি হাফেজ মাওলানা আলমগীর হোসাইন তালুকদার প্রমুখ।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মসজিদটি গড়ে ওঠে। কথিত আছে, খাস নিয়তে এ মসজিদে দান করলে মানুষের মনের আশা পূরণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করে থাকেন। মানুষ টাকাপয়সা ছাড়াও স্বর্ণালংকার দান করেন। এ ছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করা হয়।

ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে লোহার দানসিন্দুকগুলো তিন থেকে চার মাস পর খোলা হয়। সর্বশেষ খোলা হয়েছিল গত ১২ এপ্রিল। তখন পাগলা মসজিদের ১১টি দানসিন্দুক খুলে রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা পাওয়া যায়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ব্যাংকে পাগলা মসজিদের অ্যাকাউন্টে শুধু নগদ টাকা জমা আছে ৯০ কোটির মতো। এ ছাড়া সিন্দুকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রাসহ গরু, ছাগল ও অন্য জিনিসপত্রের নিলামের টাকা রয়েছে।

পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের বাকি টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এ থেকে জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি অসহায় ও জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তাও করা হয়ে থাকে।

মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, দানের অর্থ দিয়ে মসজিদের পাঁচ একর জায়গায় একটি দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এতে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। মূল মসজিদটি ছয়তলাবিশিষ্ট হবে। প্রতি তলায় একসঙ্গে পাঁচ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। পাশাপাশি আরও পাঁচ হাজার নারীর জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। সব মিলিয়ে ৪০ হাজার লোক যাতে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন, সে ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া থাকবে একাডেমিক ভবন ও অতিথিশালা। অতিথিশালায় রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অবস্থানের ব্যবস্থা থাকবে।