পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক

সরকারি আজিজুল হক কলেজ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রদলের নতুন কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকতে কলেজ কর্তৃপক্ষ নোটিশ জারি করেছে। অবশ্য পরে নোটিশটি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

বিষয়টিকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল’ বলে উল্লেখ করেছে কলেজ প্রশাসন। এ ঘটনায় দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির দুই সদস্য হলেন ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক টিপু সুলতান ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলজার হোসেন। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এ ঘটনার পর কলেজের অধ্যক্ষ মো. শওকত আলম মীরের পদত্যাগ দাবিতে আজ বুধবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সোহেল প্রমুখ।

জাকির হোসেন বলেন, বিশেষ কোনো ছাত্র সংগঠনের সাংগঠনিক কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারির মাধ্যমে সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ শওকত আলম মীর সরকারি চাকরির বিধিভঙ্গ ও শৃঙ্খলা পরিপিন্থী কাজ করেছেন। এ জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁর অপসারণ দাবি করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজ বেলা ১১টায় কলেজের মুক্তমঞ্চে ছাত্রদলের নতুন কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকার জন্য কলেজ অধ্যক্ষ গতকাল মঙ্গলবার একটি নোটিশ জারি করেন। অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত ওই নোটিশ উপাধ্যক্ষ, সব বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক পরিষদ ও উচ্চমাধ্যমিক শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়। পাশাপাশি কলেজের সম্মান ও উচ্চমাধ্যমিকের ক্যাম্পাসের বোর্ডে দেওয়া হয়। কলেজের ওয়েবসাইটেও এই নোটিশ আপলোড করা হয়। মুহূর্তেই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ একটি ছাত্রসংগঠনের নতুন কমিটির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকার জন্য নোটিশ জারি করায় কলেজ অধ্যক্ষের তুমুল সমালোচনা শুরু হয়।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এতদ্বারা সরকারি আজিজুল হক কলেজের সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো যাচ্ছে যে কলেজ শাখার নবগঠিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ২ জুলাই বুধবার বেলা ১১টায় মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীসহ সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’

বিষয়টি নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে ছাত্রদলের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার নোটিশটি প্রত্যাহার করে আজ কলেজ প্রশাসন একটি অফিস আদেশ জারি করেছে। অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত এই অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, ছাত্রদল কর্তৃক আয়োজিত নতুন কমিটির পরিচিতি সভা ও মিছিলের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। অনুমতি প্রদানের আদেশের স্থলে কলেজ কার্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর একটি আমন্ত্রণপত্র বিজ্ঞপ্তি আকারে কলেজের প্যাডে প্রস্তুত করেন, যা অন্য ফাইলের সঙ্গে দৃষ্টির অগোচরে অধ্যক্ষ স্বাক্ষর করেন এবং তা ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। বিষয়টি একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। অধ্যক্ষের দৃষ্টিগোচর হওয়ামাত্র সেটি ওয়েবসাইট থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। অনুমতির বদলে আমন্ত্রণপত্র নোটিশ আকারে জারির বিষয়টি উদ্‌ঘাটনের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রজিবুল ইসলাম ওরফে শাকিলকে আহ্বায়ক করে গত ৪ জুন কলেজ শাখা ছাত্রদলের ৫৪ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

এদিকে আজ মুক্তমঞ্চে ছাত্রদলের নতুন কমিটির পরিচিতি ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাবিবুর রশীদ সন্ধান। এর আগে আজ বেলা ১১টায় কলেজ ক্যাম্পাসে আনন্দমিছিল করা হয়।

ছাত্রদলের কলেজ শাখার আহ্বায়ক রজিবুল ইসলাম বলেন, ‘আজ কলেজ শাখার আনন্দমিছিল ও পরিচিতি সভার বিষয়ে নোটিশ জারির জন্য কোনো চাপ দেওয়া হয়নি। ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি চেয়ে অধ্যক্ষের কাছে সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কলেজ প্রশাসনের নোটিশ জারির বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ মো. শওকত আলম মীর বলেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কলেজ শাখা আজ আনন্দমিছিল ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। ভুলক্রমে তা বিজ্ঞপ্তি জারি করে নোটিশ বোর্ডে ও অনলাইনে দেওয়া হয়েছিল। সন্ধ্যায় ওই নোটিশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।