ডিশ ব্যবসার সংঘর্ষে নরসিংদীতে যুবক নিহত
প্রতিনিধি নরসিংদী
![]() |
নিহত মিনহাজুল আবেদীন রিজভী | ছবি: সংগৃহীত |
নরসিংদীতে ডিশ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মিনহাজুল আবেদীন ওরফে রিজভী (৩২) নামে এক যুবককে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের পূর্ব ব্রাহ্মন্দী এলাকার একটি ভাড়াবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মিনহাজুল আবেদীন নরসিংদীর শহরের পূর্ব ব্রাহ্মন্দীর বীরপুর মসজিদসংলগ্ন এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীনের ছেলে।
তবে কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছেন তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। যে বাসায় হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেটি সম্প্রতি তৈয়বুর রহমান নামের এক যুবক ভাড়া নিয়েছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিনের দুই বন্ধু মিনহাজুল আবেদীন এবং তৈয়বুর রহমানের বাড়ি রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের হাসনাবাদ এলাকায় খলাপাড়া গ্রামে। ওই এলাকায় ডিশের ব্যবসা একসময় যৌথভাবে করতেন দুজন। একপর্যায়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে তৈয়বকে ব্যবসা থেকে বের করে দেন মিনহাজুল। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মিনহাজুলকে সরিয়ে ওই ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেন তৈয়ব। মিনহাজুল ওই ব্যবসায় আবার ফিরতে চাইলে আলোচনার নামে গতকাল রাতে তৈয়বের ওই ভাড়ার বাসায় তাঁকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। মিনহাজুল ও তৈয়বের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে।
![]() |
নরসিংদী শহরের পূর্ব ব্রাহ্মন্দী এলাকার এই গলিতে পড়ে থাকে মিনহাজুল আবেদীন রিজভীর লাশ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিহতের স্বজন, বাড়িটির বাসিন্দা ও স্থানীয় লোকজন জানান, মিনহাজুল গতকাল রাতে তৈয়বের ওই ভাড়া বাসায় যান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসাটিতে ঢোকার পরপরই কে বা কারা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করে। মিনহাজুল দৌড়ে পালাতে গেলে তারাও পিছু নেয় ও উপর্যুপরি কোপায়। একপর্যায়ে তাঁর কোমর ও মাথায় গুলি করা হয়। বাসাটি থেকে ২০ গজ দূরত্বে গলিতে লুটিয়ে পড়ে মিনহাজুলের রক্তাক্ত শরীর। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে নরসিংদী মডেল থানার উপপরিদর্শক বেলাল আহমেদ ঘটনাস্থলে গিয়ে গলিতে পড়ে থাকা রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেন। পরে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। বেলাল আহমেদ বলেন, নিহত ব্যক্তির কোমর ও মাথায় গুলি করা হয়েছে। তাঁর ডান কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু চামড়ার অংশ লেগে ছিল; আর বাঁ হাতের তালুতে ধারালো অস্ত্রের গভীর আঘাতের ক্ষত ছিল।
রাতে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভাড়াবাসাটির বারান্দার কয়েক জায়গায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে। বাসার ফটকসহ ওই গলির কয়েক জায়গায় রক্ত ছড়িয়ে আছে। ঘটনাস্থলে জড়ো হয়েছেন কয়েক শ মানুষ। ওই ভাড়া বাসায় অবস্থান করছিলেন তৈয়বের মা, বোন ও ভাবি।
তৈয়বের বোন শাকিলা আক্তারের দাবি, রাতে তৈয়ব সেখানে ছিলেনই না, মিনহাজুলকেও সেখানে কেউ ডেকে আনেনি; বরং মিনহাজুলই তাঁর দলবল নিয়ে বাসায় এসে চিৎকার করে সবাইকে বের হয়ে আসতে বলছিল। ওই সময় তাঁরা দরজা বন্ধ করে ঘরে অবস্থান করছিলেন। তাহলে মিনহাজুলকে কে বা কারা হত্যা করল—পুলিশের এ প্রশ্নের জবাবে অসংলগ্ন উত্তর দিচ্ছিলেন তিনি।
নিহতের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন অভিযোগ করেন, মিনহাজুলকে হত্যা করার জন্যই সম্প্রতি বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন তৈয়ব। রাতে কথা বলার নামে তাঁকে ডেকে আনা হয়েছিল। নির্মমভাবে তাঁকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ছেলে হত্যার বিচার চান।
রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সুজন চন্দ্র দাস, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন ও নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক। ওসি বলেন, রায়পুরার হাসনাবাদের ডিশের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কে বা কারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন