[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা: কমছে এজেন্ট আউটলেট, ঋণের গতিও কম

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতীকী ছবি 

২০১৪ সালে ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে সীমিত আকারে চালু হওয়া এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা প্রথম ১০ বছরে দেশজুড়ে বিস্তৃত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো এই সেবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে এজেন্ট ব্যাংকিং। এখন এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার গতি কিছুটা কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ছয় মাস ধরে এই সেবায় এজেন্ট ও আউটলেট কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ নতুন যে পরিমাণ এজেন্ট ও আউটলেট হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি বন্ধ হয়ে গেছে। এই সেবায় আমানত বাড়লেও ঋণ তেমন বাড়ছে না। ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণ কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার গতি কমে গেছে।

উদ্ধৃতি — গত বছরের আগস্টে দেশে যে পরিবর্তন হয়েছে, তার ধাক্কা কিছুটা এই সেবায়ও লেগেছে। এ জন্য সার্বিকভাবে সেবাটির গতি কমে এসেছে। এখন আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, সেবাটি আরও বিস্তৃতি ঘটানোর পাশাপাশি নতুন কিছু করা।—

— সোহেল আর কে হুসেইন, এমডি, ব্যাংক এশিয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি দেশের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার আওতায় প্রায় আড়াই কোটি গ্রাহক হিসাব খোলা হয়েছে। দেশজুড়ে ২১ হাজার কেন্দ্রের মাধ্যমে এই সেবা দেওয়া হচ্ছে। এজেন্টদের মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়া, ঋণ নেওয়া, পরিষেবা বিল পরিশোধ, প্রবাসী আয় গ্রহণসহ নানা ধরনের সেবা প্রদান করা হয়। গত মার্চ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার আওতায় আমানত জমা হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। তার বিপরীতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।

একাধিক ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আমানত সংগ্রহ করতে অনেক ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা বেছে নিয়েছে। এই সেবার মাধ্যমে কোনো কোনো ব্যাংক গ্রাম থেকে আমানত সংগ্রহ করে করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়।

কমেছে এজেন্ট-আউটলেট

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের ৩১টি ব্যাংক এই সেবার সঙ্গে যুক্ত। ২০২৪ সালের জুনে দেশজুড়ে এসব ব্যাংকের এজেন্ট ছিল ১৫ হাজার ৯৯১টি, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে ১৬ হাজার ২৬টিতে উন্নীত হয়। কিন্তু গত ডিসেম্বরে এজেন্টের সংখ্যা কমে হয় ১৬ হাজার ১৯। আর চলতি বছরের মার্চে সংখ্যাটি আরও কমে হয় ১৫ হাজার ৮৩৮। সেই হিসাবে গত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৬ মাসে এজেন্টের সংখ্যা কমেছে ১৮৮।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি এজেন্টের এক বা একাধিক আউটলেট থাকতে পারে। গত বছরের জুনে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় আউটলেট ছিল ২১ হাজার ৪৭৩টি, যা মার্চে কমে হয় ২১ হাজার ২৩টি। অর্থাৎ ৯ মাসে এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা ৪৫০টি কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিটি এজেন্টের একটি চলতি হিসাব থাকতে হয়। এ সেবার মাধ্যমে অর্থ জমা ও উত্তোলন করা যায়। পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্থানীয় মুদ্রায় বিতরণ, ছোট অঙ্কের ঋণ প্রদান ও আদায় এবং এককালীন জমার কাজও করে এজেন্টরা। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিষেবার বিল পরিশোধের পাশাপাশি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর অর্থও উত্তোলন করা যায়। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ আবেদন, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নথিপত্র সংগ্রহ করতে পারে এজেন্টরা। ব্যাংকের শাখার মতো শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) সুপরিসর ও ছিমছাম কক্ষ ব্যবহার না করে এজেন্টরা নিজেদের ছোট দোকানঘরেও এই সেবা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এজেন্ট আউটলেটে দেশে শীর্ষে আছে ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক। গত মার্চের শেষে তাদের এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৬২৫। এরপরের অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক এশিয়া। মার্চ শেষে দেশজুড়ে তাদের এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৩৬। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক। তাদের এজেন্ট আউটলেট ২ হাজার ৭৯০। চতুর্থ অবস্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা ১ হাজার ১২৩। আর একই সময়ে পঞ্চম অবস্থানে থাকা মধুমতি ব্যাংকের এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা ৬৪৫।

— দেশে ২০১৪ সালে প্রথম ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার যাত্রা শুরু হয়। — দেশজুড়ে ২১ হাজার কেন্দ্রের মাধ্যমে এই সেবা দেওয়া হচ্ছে। — মার্চ পর্যন্ত এই সেবার আওতায় আমানত জমা হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। তার বিপরীতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। — বর্তমানে দেশের ৩১টি ব্যাংক এই সেবার সঙ্গে যুক্ত। এজেন্ট সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৩৮।

আমানত যতটা বেড়েছে, ঋণ তত বাড়েনি

ব্যাংকাররা বলছেন, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা একবারে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় আমানত সংগ্রহ করা সহজ হয়েছে। মার্চের শেষে এই সেবায় আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে আমানত ছিল ৪১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। গত বছরের জুন ও সেপ্টেম্বরের শেষে আমানত ছিল যথাক্রমে ৩৯ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা ও ৩৯ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আমানত কমতে শুরু করেছিল, যা পরে আবার বাড়ে। মূলত ইসলামি ধারাসহ মোট ১৪ বেসরকারি ব্যাংকের মালিকানা ও কিছু ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের কারণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে আমানত তুলে নেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্চ শেষে সবচেয়ে বেশি আমানত পেয়েছে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্টরা। ব্যাংকটির এই সেবার আমানত মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংক। মার্চ শেষে ব্যাংকটির এজেন্ট সেবার অধীন আমানত দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। এরপর ব্যাংক এশিয়ার ৫ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের ৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের ২ হাজার ৬৩ কোটি টাকা ও ইউসিবি ব্যাংকের ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। ডিসেম্বরের তুলনায় মার্চে ব্র্যাক ব্যাংক, আল-আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের আমানত কমলেও অন্য চার ব্যাংকের বেড়েছে।

এ ছাড়া ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ঋণের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ১১ কোটি টাকা, মার্চে যা বেড়ে হয় ১০ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা।

একাধিক ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রতি প্রান্তিকে যে পরিমাণ আমানত বেড়েছে, ঋণ ততটা বাড়েনি। তারল্যসংকট ও বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদ পরিবর্তনের ফলে এসব ব্যাংক ঋণ বিতরণে লাগাম টানে, যার প্রভাব পড়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং ঋণে।

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় শুরু থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে ব্যাংক এশিয়া। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সোহেল আর কে হুসেইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরের আগস্টে দেশে যে পরিবর্তন হয়েছে, তার ধাক্কা কিছুটা এই সেবায়ও লেগেছে। এ জন্য সার্বিকভাবে সেবাটির গতি কমে এসেছে। এখন আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে সেবাটির আরও বিস্তৃতি ঘটানোর পাশাপাশি নতুন কিছু করা। চলতি বছর আমরা এজেন্টের সংখ্যা ৬ হাজার থেকে ৯ হাজারে উন্নীত করব। আমরা এজেন্ট ব্যাংকিং আমানতের সঙ্গে বিমা সুবিধা যুক্ত করছি। গ্রাহকেরা বিনা খরচে এই সেবা পাবেন। এ ছাড়া কাঁচাবাজারগুলোতে আমরা এজেন্ট বাড়াচ্ছি, পাশাপাশি ভাসমান বাজারে এজেন্ট দিতে যাচ্ছি। ব্যাংকিং সময়ের বাইরে বাজারগুলোতে যে টাকার প্রয়োজন হয়, এজেন্টদের মাধ্যমে আমরা সেই সেবা দেব।’
Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন