প্রতিনিধি চট্টগ্রাম

মো. শহীদুল ইসলাম ছবি: শহীদুলের ফেসবুক থেকে নেওয়া

এলাকায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেননি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তিনি পরিচিত ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে। অথচ তিনিই পেয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়কের পদ। এতে বিক্ষুব্ধ দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তাঁরা।

এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরে। পদ পাওয়া ওই ব্যক্তির নাম শহীদুল ইসলাম। নগরের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আহ্বায়ক করা হয়েছে তাঁকে। গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিও অনুমোদন করা হয়। এতে ২১ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৪৮ জনকে সদস্য করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান কমিটি অনুমোদন করেন। একই সঙ্গে নগরের চট্টগ্রাম মহানগরের আওতাধীন ১৫ থানার পূর্ণাঙ্গ ও ১২টি ওয়ার্ডের আংশিক আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করা হয়, যার মধ্যে উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডও রয়েছে।

শহীদুল ইসলামকে ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক করার প্রতিবাদে পরদিন শুক্রবার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন দলের কিছু নেতা-কর্মী। এ সময় তাঁরা ‘স্বৈরাচারের দোসরদের’ কমিটি থেকে বাদ দেওয়া না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন। আজ সোমবার বিকেলেও উত্তর পাহাড়তলীতে এ–বিষয়ক কর্মসূচি রয়েছে।

৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড নগরের আকবর শাহ থানার আওতাধীন। জানতে চাইলে আকবর শাহ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাছির আহমেদ বলেন, ‘যাঁরা মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন, কারাগারে ছিলেন, সেই ত্যাগীদের বাদ দিয়ে যাঁকে দলীয় কোনো মিছিল-সমাবেশে এলাকায় কেউ দেখেননি, তাঁকে করা হয়েছে আহ্বায়ক। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’ তিনি আরও বলেন, ‘দলের নিষ্ক্রিয় কর্মীকে আহ্বায়ক করলেও মনকে বোঝানো যেত; এমন একজনকে করা হয়েছে, যাঁকে সবাই চেনেন ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে। যাঁর সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অসংখ্য ছবি-ভিডিও রয়েছে।’ ওয়ার্ড কমিটির মতো থানা কমিটিও দায়সারাভাবে করা হয়েছে দাবি করে এর প্রতিবাদে নিজে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরাও চেনেন না ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহীদুলকে। ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক রেহান উদ্দীন বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক করা হয়েছে যাঁকে, তাঁকে কখনো দলের মিছিল সমাবেশে দেখিনি। সবাই তাঁকে চেনেন ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে। নাম আসার পর থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। বিষয়টি দলের নগর ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়েছে।’

৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মসূচিতে সক্রিয় রয়েছেন মোহাম্মদ রনি। দলের ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়কের পদপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। জানতে চাইলে মোহাম্মদ রনি বলেন, ‘যখন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেউ ছিল না, তখন মিছিল-সমাবেশে লোক নিয়ে যেতাম। নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-আপ্যায়ন সম্পাদক ছিলাম, তিন মামলার আসামি হয়েছি। অথচ যখন কমিটি ঘোষণা করা হয়, তখন নাম দেখি ছাত্রলীগ কর্মীর। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দল আমাকে যোগ্য মনে না করলে পদ না দিলেও কোনো অসুবিধা নেই। দলের অন্য কাউকে দিক। কিন্তু ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত কাউকে পদ দেওয়া দলের জন্য কতটুকু সমীচীন?’

শহীদুলকে ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক করার প্রতিবাদে গত শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল করেছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা | ছবি: স্বেচ্ছাসেবক দলের স্থানীয় এক নেতার সৌজন্যে

জানতে চাইলে ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এলাকায় থাকতাম না, এ জন্য কেউ চেনে না। তবে মহানগরের মিছিল সমাবেশে থাকতাম।’ ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য দিদারুল আলম, সাবেক কাউন্সিলর জহুরুল আলমের সঙ্গে ছবি-ভিডিও থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো সামাজিক অনুষ্ঠানে তোলা ছবি, দলীয় কর্মসূচির না। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ১৬ বছরে সতর্কতার সঙ্গে ছিলাম, তাই আমাকে পুলিশ ধরতে পারেনি, মামলাও হয়নি। ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সখ্যের বিষয়টি সত্য নয়।’

ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি নিয়ে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব জমির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। একসঙ্গে অনেকগুলো কমিটি ঘোষণা হয়েছে। কোনো কারণে হয়তো কেউ ঢুকে যেতে পারে। তদন্তে প্রমাণিত হলে বাদ দেওয়া হবে।’