![]() |
কার্টুন: এস এম রাকিবুর রহমান |
‘স্মল ইজ বিউটিফুল’ বা ছোটই সুন্দর—অর্থনীতিতে এই ধারণা বিখ্যাত করেছিলেন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ আরনেস্ট ফ্রেডারিক সুমাখার। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত স্মল ইজ বিউটিফুল: এ স্টাডি অব ইকোনমিকস অ্যাজ ইফ পিপল ম্যাটারড বইয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই যে বিশ্বব্যাপী বড় বড় প্রকল্প, বিশাল ব্যয়, বড় বড় কোম্পানি—এসবই কি উন্নয়ন। নাকি মানুষের কল্যাণই আসল উন্নয়ন।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের যে বাজেট পেশ করলেন, সেটিও বড় ব্যয়ের বাজেট নয়, বড় বড় প্রকল্পের কথাও তিনি বলেননি। কিন্তু এই বাজেট মানুষকে স্বস্তি দেবে কতটা সেই প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি মানুষ যে আরও দারিদ্র্য হচ্ছে, কাজ হারাচ্ছে, কমছে আয়—তা থেকে উত্তরণ ঘটানোর মতো পরিকল্পনাও তিনি দেননি। ফলে নতুন বাজেট সব অর্থেই ‘স্মল’, তবে ‘বিউটিফুল’ কি না, সেই প্রশ্ন করাই যায়।
নতুন বাজেট বক্তৃতা ছোট, বাজেটের আকার কম, প্রতিশ্রুতি স্বল্প, আকাঙ্ক্ষা সীমিত। আবার অর্থ উপদেষ্টা সম্ভবত ধরেই নিয়েছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তাঁর তেমন কিছু করার নেই, বেসরকারি বিনিয়োগের বাধা দূর করার মতো শক্তি আয়ত্তে নেই, কর্মসংস্থানের সংকট কাটবে না, যাবে না রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এ কারণে নতুন যে বাজেট তিনি দিয়েছেন, তা দিয়ে হয়তো আপাতত টিকে থাকা যাবে, সামনে খুব বেশি আগানো যাবে না।
যদিও অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতার শুরুতেই নতুন বাজেট কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিগত বাজেটের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে চেষ্টা করা হয়েছে সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিতে। তাই প্রথাগত ভৌত অবকাঠামো তৈরির খতিয়ান তুলে ধরার পরিবর্তে বাজেটে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে মানুষকে।
![]() |
বাজেট বক্তৃতা দিচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ | ছবি: বিটিভির সরাসরি সম্প্রচার থেকে নেওয়া |
নতুন যে বাজেট তিনি দিয়েছেন, তা দিয়ে হয়তো আপাতত টিকে থাকা যাবে, সামনে খুব বেশি আগানো যাবে না।
অর্থ উপদেষ্টা এসব কথা বললেও বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের বরাদ্দে, প্রস্তাবে বা পরিকল্পনায় এর তেমন কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। একমাত্র বড় ব্যতিক্রম হচ্ছে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব। কিন্তু ব্যক্তি বিনিয়োগ না বাড়লে সামগ্রিক অর্থনীতিতে যে শ্লথগতি চলছে, তা ঠেকানোর মতো উদ্যোগ অর্থনীতিতেই নেই। যদিও বিনিয়োগ পরিবেশ ভালো করা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, জ্বালানির সংকট কাটানোর দায় অর্থ উপদেষ্টার একার নয়। তা তিনি ভালো করে জানেন বলেই হয়তো ছোট বাজেট, ছোট বক্তৃতা আর ছোট আকাঙ্ক্ষার মধ্যেই থেকে গেছেন।
ফলে ব্যাংক খাতের উচ্চ মাত্রার খেলাপি ঋণ (২০ দশমিক ২০ শতাংশ), মূলধন ঘাটতি এবং ব্যাংকিং সুশাসনের অভাব বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানোর পথে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়েই থাকছে। আবার সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও সরকার অতি সতর্ক। আছে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও সংকোচনমূলক রাজস্ব নীতি। এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থছাড়ের ধীরগতি ও সামগ্রিক কৃচ্ছ্র নীতি বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধিকে সীমিত রাখবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিগত বাজেটের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে চেষ্টা করা হয়েছে সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিতে। তাই প্রথাগত ভৌত অবকাঠামো তৈরির খতিয়ান তুলে ধরার পরিবর্তে বাজেটে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে মানুষকে।
ব্যতিক্রমী বাজেটের আরও উদাহরণ
১৭ বছর পর আবারও জাতীয় বাজেট দেওয়া হলো সংসদের বাইরে। এর আগে রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে সর্বশেষ বাজেটটি দিয়েছিলেন অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ১২ বার জাতীয় সংসদের বাইরে বাজেট পেশ করা হলো। অর্থ উপদেষ্টা আরও একটি প্রচলিত প্রথা ভেঙেছেন। সাধারণত সপ্তাহের শেষ দিনে বাজেট পেশ করা হয়; কিন্তু এবার বাজেট দেওয়া হলো গতকাল কর্মদিবসের মধ্যেই। তবে এর আগেও বাংলাদেশে ৬ বার এই প্রথা ভাঙা হয়েছে। আর শেষবার ভাঙা হয়েছিল ১৯৮৬ সালে।
আরেকটি ব্যতিক্রমী ঘটনা অবশ্য ঘটিয়েছেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। আগের বছরের তুলনায় মোট বাজেটের আকার সামান্য কমিয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি অর্থবছর বাজেটের আকার বাড়ানোর যে প্রতিযোগিতা অর্থমন্ত্রীরা বছরের পর বছর ধরে চালু রেখেছিলেন, সেখান থেকে সরে এলেন তিনি।
একমাত্র বড় ব্যতিক্রম হচ্ছে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব। কিন্তু ব্যক্তি বিনিয়োগ না বাড়লে সামগ্রিক অর্থনীতিতে যে শ্লথগতি চলছে, তা ঠেকানোর মতো উদ্যোগ অর্থনীতিতেই নেই।
অর্থ উপদেষ্টা নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে আদায় হবে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে আরও ৬৫ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে প্রস্তাবিত ব্যয় হচ্ছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এই ব্যয় জিডিপির ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ঠিক করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি হবে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এই ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেওয়ার পরিকল্পনা ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। আর ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা আসবে বৈদেশিক উৎস থেকে। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, নতুন অর্থবছরে সুদ পরিশোধ খাতে মোট ব্যয় হবে ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ উপদেষ্টা একই সঙ্গে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটও সংশোধন করেছেন। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা মূল বাজেট থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং মোট ব্যয় ৫৩ হাজার কোটি টাকা হ্রাস করে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে এডিপির আকার হবে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা, যা মূল প্রস্তাবের তুলনায় ৪৯ হাজার কোটি টাকা কম। ফলে সব মিলিয়ে বাজেট ঘাটতি হচ্ছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ১ শতাংশ।
অর্থ উপদেষ্টা হাঁটলেন অনেকটা গতানুগতিক পথেই। অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ে এবারও পরোক্ষ করের ওপরই সরকারকে নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে।
মানুষ কতটা স্বস্তি পাবে
মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরাকে এবারের বাজেটের অন্যতম সাফল্য হিসেবে দেখিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। গত ডিসেম্বর মাসের ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ থেকে মূল্যস্ফীতি এপ্রিলে নেমে এসেছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে। রমজানেও পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ছিল। সরকার আশা করছে, এই জুনেই মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে।
অর্থ উপদেষ্টা উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করেননি। সাধারণ করদাতাদের জন্য সালেহউদ্দিন আহমেদ আগের মতোই বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা অপরিবর্তিত রেখেছেন। তবে ২০২৬-২৭ অর্থবছর থেকে পরের এক অর্থবছর পর্যন্ত করমুক্ত আয়সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন তিনি। অজুহাত দিয়েছেন যে আগের সরকারের সময়েই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য করহার ঠিক করে রাখা হয়েছিল। সাধারণ করদাতাদের জন্য সুখবর না থাকলেও সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করে তাঁদের ঠিকই স্বস্তি দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।
প্রস্তুতির অভাবে এবারের বাজেট দেওয়ার সময় অনেক তথ্যই দিতে পারেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থনৈতিক সমীক্ষা প্রকাশিত না হওয়ায় জানা গেল না চলতি অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ কতটা কমেছে। আবার নতুন অর্থবছরে বিনিয়োগ কত হারে বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা–ও উল্লেখ করেননি অর্থ উপদেষ্টা। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে বলেছে, নতুন অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৫ শতাংশ। যেখানে বেসরকারি বিনিয়োগের নিম্নমুখী গতি অব্যাহত থাকছে, সেখানে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ থেকে মাত্র এক অর্থবছরে কী করে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৫ শতাংশ হবে, তার কোনো রূপরেখা অবশ্য বাজেটে পাওয়া যায়নি।
ভালো কর বলে কিছুই নেই
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের একটি বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে, ‘ভালো কর বলে কিছুই নেই।’ আধুনিক অর্থশাস্ত্রের জনক অ্যাডাম স্মিথ বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক নাগরিকের উচিত রাষ্ট্রের ব্যয়ের জন্য তার সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ দেওয়া।’ সামর্থ্য অনুযায়ী নাগরিকদের কাছ থেকে কর আদায় সরকার করতে পারে না বলেই যাঁরা নিয়মিত কর দেন, তাঁদের ওপরই করের বোঝা বেশি চাপানো হয়। ফলে যেসব কর প্রস্তাব দেওয়া হয়, তাকে আর চার্চিলের ভাষায় ভালো কর বলা যায় না। অথচ রাজস্ব আদায় ও রাজস্ব খাতের সংস্কার নিয়ে গত ৯ মাসে অনেক কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু অর্থ উপদেষ্টা হাঁটলেন অনেকটা গতানুগতিক পথেই। অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ে এবারও পরোক্ষ করের ওপরই সরকারকে নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে।
অনেক সমালোচনার পরও বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। আবার আমানতকারীদের ব্যাংকমুখী করার জন্য তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক স্থিতিকে আবদারি শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যা আগে ছিল এক লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে টিআইএন থাকার বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নিতে চাইলে এসব পদক্ষেপের কারণে তা খানিকটা সহজ হবে বলেই মনে হচ্ছে।
এ ছাড়া বাজেটে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়—এমন কোম্পানির কর ব্যবধান বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে, কৃষি আয় করমুক্ত থাকবে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত, নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন—এমন ব্যক্তিদের বিদেশে পাচার করা আয়ে কর ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে, জমি নিবন্ধনের ব্যয় কমানো হয়েছে। শিল্পের কাঁচামালে আগাম কর কমিয়ে ২ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক আমদানিতে আগাম কর বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
এগুলো ভালো দিক হলেও অনলাইনে পণ্য বিক্রির কমিশনের ওপর ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাবে সংকটে পড়বেন অনেক নতুন উদ্যোক্তা। আবার ওটিটি সার্ভিসের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপেও বিপাকে পড়বেন দেশীয় উদ্যোক্তারা।
বাজেটে আরও জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংলাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, ৬৫টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাস, ৯টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার এবং ৪৪২টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করা যাবে—এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান।
নতুন কিছু ঘোষণা
নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে তহবিল গঠন ছাড়াও স্টার্টআপের জন্যও ১০০ কোটি টাকা তহবিল দেওয়ার কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা। এ ছাড়া দেশের উন্নয়নে যুবাদের গভীরভাবে সম্পৃক্ত করতে তারুণ্যের উৎসব উদ্যাপনে দেওয়া হচ্ছে আরও ১০০ কোটি টাকা। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ তহবিলে রাখা হচ্ছে ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এসব উদ্যোগ কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে বাস্তবায়িত হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বাভাবিক নিয়মে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বের হয়ে যাবে, সে কথাও বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা। স্বল্প সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়াই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।
বাজেটে আরও জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সংলাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, ৬৫টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাস, ৯টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার এবং ৪৪২টি পণ্যের সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করা যাবে—এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব কিছু পণ্যের শুল্ক কমানো নয়, বরং সামগ্রিক বাণিজ্য শুল্কব্যবস্থার বড় সংস্কার।
ঝুঁকি থাকবে; কিন্তু মানুষ কষ্ট করছে অনেক বছর ধরে। এখন তারা মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে স্বস্তি চায়, কর্মহীনেরা কাজ চায়, সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা চায়, ব্যবসায়ীরা অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি চায়। এই চাওয়া থেকেই বিপুলসংখ্যক মানুষ নিয়োজিত জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে। মানুষের আশা, নতুন অর্থবছরে অন্তত এসব চাওয়া পূরণ হবে।
ঝুঁকি কাটবে কীভাবে
ঝুঁকি থাকবে; কিন্তু মানুষ কষ্ট করছে অনেক বছর ধরে। এখন তারা মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে স্বস্তি চায়, কর্মহীনেরা কাজ চায়, সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা চায়, ব্যবসায়ীরা অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি চায়। এই চাওয়া থেকেই বিপুলসংখ্যক মানুষ নিয়োজিত জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে। মানুষের আশা, নতুন অর্থবছরে অন্তত এসব চাওয়া পূরণ হবে।
মার্কিন কবি এমিলি ডিকিনসনের ‘হোপ’ বা ‘আশা’ নামের একটি কবিতার শেষ কটি পঙ্ক্তি দিয়েই লেখাটি শেষ করা যায়। তিনি লিখেছিলেন, ‘আশা হচ্ছে পালকওয়ালা পাখি,/ যা আত্মার মধ্যে বাস করে,/ শব্দহীন গান গায়,/ আর থামে না কোনো দিন।’