[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

রাজশাহীতে এবার আমের দাম কম, সময়ের আগেই মিলছে ল্যাংড়া

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি রাজশাহী

গত বছরের তুলনায় এবার আমের দাম মণপ্রতি ৭০০ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত কমেছে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

রাজশাহীতে এবার আমের ফলন ভালো হয়েছে। বাজার চার থেকে পাঁচ জাতের আমে ভরে গেছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার দাম মণপ্রতি ৭০০ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত কমেছে।

আমচাষি, কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার রাজশাহীতে আমের উৎপাদন বেশি। আমের যে পরিমাণ মুকুল এসেছিল, বেশির ভাগই থেকেছে। ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হয়নি। সামনে কোরবানির ঈদ পড়াতে বাজারে আমের দাম কিছুটা কমেছে।

এদিকে রাজশাহী জেলার ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের আগেই বেশির ভাগ আম ভাঙা হচ্ছে। হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি শুক্রবার থেকে নামানোর কথা থাকলেও ৮–১০ দিন আগেই পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে ল্যাংড়া আম পাওয়া যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ের অন্তত ১০ দিন আগে থেকে।

রাজশাহীতে এবার ঘোষিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গুটি আম ১৫ মে থেকে বাজারজাত করা যাবে। ২২ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে রানিপসন্দ ও লক্ষ্মণভোগ, ৩০ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি, ১০ জুন থেকে ব্যানানা ম্যাংগো ও ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি আম-৪, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি সংগ্রহ করা যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছরই পাকা সাপেক্ষ পাড়া যাবে। এবার রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন।

এবার প্রতিমণ ল্যাংড়া আমের দাম হাঁকা হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

রাজশাহী বিভাগের আম উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ। তিনটি জেলাতেই আমের বড় হাট রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে আমের সবচেয়ে বড় হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। গতকাল দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত এই হাটে অবস্থান করে দেখা গেছে কর্মচাঞ্চল্য। আমের দর–কষাকষি, কুরিয়ারে আম পাঠানোর জন্য প্যাকেজিং, আমের ওজন মাপাসহ নানা কাজে ব্যবসা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ব্যস্ত। গ্রামের আমচাষিরাও ভ্যানে বাজারে আম নিয়ে এসেছেন। টাটকা এসব আম কিনে নিতে অনলাইনে আম বিক্রেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরাও ভিড় করছেন।

রাজশাহীর দুর্গাপুরের চাষি আমিনুল ইসলাম হিমসাগর আম নিয়ে বানেশ্বর বাজারে এসেছেন। তিনি মণপ্রতি দাম চাচ্ছেন ১ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু ক্রেতারা দাম বলছেন দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। আমিনুল বলেন, এ বছর তাঁর গাছে আম বেশি এসেছে। গত বছর খুব কম আম ছিল। গত বছর হিমসাগরের বাজার শুরুই হয়েছিল ২ হাজার ৬০০ টাকা মণে। এবার মণপ্রতি দাম ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ পর্যন্ত দাম।

মো. মিটুল নামের এক ব্যবসায়ী বললেন, ‘এবার আম বেশি, দাম নেই। ঈদের আগে আম পাকছে। মানুষ কোরবানি দিবে, নাকি আম খাবে? একটা বাগান কেনা আছে। এবার টাকা উঠবে না। এখন বেচে উঠতি হবে।’

রাজশাহীতে আমের সবচেয়ে বড় হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

মো. সেলিম নামের এক ব্যক্তি পাঁচ ক্যারেট আম কিনলেন। হিমসাগর আম তিনি ক্যারেটপ্রতি কিনলেন ৮০০ টাকায়। প্রতি ক্যারেটে ২২ থেকে ২৩ কেজি পর্যন্ত আম। সেলিম বলেন, আত্মীয়দের বাড়িতে আম পাঠাবেন। বাজারে এসে টাটকা কাচা আম কিনলেন। দাম কম এবার। তবে কুরিয়ার খরচ একটু বেশি।

বাজারে বেশ কয়েক জায়গায় ল্যাংড়া আম দেখা গেছে। এই আম বাজারে আসার কথা ১০ জুন। তবে কয়েকটি ক্যারেটে দেখা গেল, কিছু আম গাছেই পেকেছে। কিছু আমে রং ধরেছে। সোহেল রানা নামের এক আড়তদার বলেন, দুর্গাপুরে তিনি একটি বাগান কিনেছেন। সেখানে কয়েকটি গাছে ল্যাংড়া আম পাকা ধরেছে। এই কারণে আম পাড়তে হয়েছে। একইভাবে হিমসাগরও কিছু গাছে আগেই পেকেছে।

হাটে একাধিক জায়গায় ল্যাংড়া আম দেখা গেছে। প্রতিমণ দাম হাঁকা হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এই বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে গোপাল ভোগ আমের। এই আম মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া বাজারে গুটি, লক্ষ্মণভোগসহ বেশকিছু বৈশাখী আম দেখা গেছে। এই আমগুলো মানভেদে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমের উৎপাদন বেড়েছে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

অনলাইনে আম বিক্রি করেন ‘সরদার মার্ট’–এর প্রতিষ্ঠাতা সুরুজ সরদার। তাঁকে পাওয়া গেল বানেশ্বর বাজারে। তিনি এবার ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে গোপালভোগ ও হিমসাগর আম বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, এবার আম তুলনামূলক বেশি। এ কারণে কিছুটা দাম কমেছে। তবে কুরিয়ার খরচ কিছু ক্ষেত্রে বেড়ে যাওয়াতে তাদের একটু বেশি দামেই আম বিক্রি করতে হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোছা. সাবিনা বেগম বলেন, এবার রাজশাহীতে ৯৮ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছগুলোতে আসা আমের বেশির ভাগই টিকেছে। উৎপাদনও তাই বেড়েছে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন