নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা
![]() |
খিলক্ষেতে রেলের জমিতে বুলডোজার চালিয়ে মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ স্থানীয়দের। বৃহস্পতিবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় রেলের জমিতে গড়ে ওঠা সার্বজনীন দুর্গা মন্দির উচ্ছেদ করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার দুপুরে রেলওয়ের দুটি দপ্তরের কর্মকর্তারা বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালান।
স্থানীয়রা বলছেন, বছরজুড়ে মন্দিরটি ব্যবহার না হলেও প্রতি বছর দুর্গাপূজা এখানে আয়োজন করা হতো। পাশাপাশি ছোট আকারের অস্থায়ী মন্দিরে নিয়মিত কালীপূজাও হতো। সম্প্রতি মন্দিরের চারপাশ ঘিরে টিনের ঘেরা দেওয়া হয় এবং ইট দিয়ে স্থায়ী কাঠামোর কাজ শুরু হয়। এরপর সোমবার রাতে কিছু লোক 'মন্দিরটিকে অবৈধ দাবি' করে ভাঙচুরের চেষ্টা করে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা মন্দির কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলেন।
সরেজমিনে দেখা গেল, বৃহস্পতিবার সকালে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি দপ্তরের কর্মকর্তারা বুলডোজার নিয়ে মন্দিরটি উচ্ছেদ করেন। এ সময় মন্দিরের ভেতরে থাকা প্রতিমাগুলোও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা শুভ রায় বলেন, 'দেশের নানা জায়গায় রেলের জমিতে বড় বড় ভবন উঠেছে। কেউ সেগুলো নিয়ে কিছু বলে না। অথচ আমাদের ছোট্ট এই মন্দিরটি বিনা নোটিশে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো। এমনকি প্রতিমা সরানোর সুযোগও দেওয়া হয়নি।'
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, 'তারা কোনো কথা না শুনেই ভাঙচুর শুরু করে। বলছিল, এখানে মন্দির থাকতে পারবে না। আমরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।'
খিলক্ষেত থানার ওসি মো. কামাল হোসেন বলেন, 'রেলের জায়গায় মন্দিরটি ছিল। এত দিন টিনের ঘেরা থাকলেও এবার পাকা দেয়াল নির্মাণের চেষ্টা করলে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। আমরা কয়েক দিন ধরে সমঝোতার চেষ্টা করছিলাম। তবে উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত রেলওয়ের।'
বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, 'বুধবার দপ্তর থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়—বৃহস্পতিবারের মধ্যেই উচ্ছেদ করতে হবে। সেই নির্দেশে অভিযান চালানো হয়েছে। শুধু মন্দির নয়, আশপাশের আরও কিছু অবৈধ স্থাপনাও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।'
রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ বলেন, 'রেলের জমি দখলমুক্ত রাখতে উচ্ছেদ অভিযান নিয়মিতই চলছে। খিলক্ষেতেও সেই ধারাবাহিকতাতেই অভিযান হয়েছে।' তিনি দাবি করেন, 'কোনো প্রতিমা ভাঙা হয়নি। মন্দির কর্তৃপক্ষ নিজেরাই প্রতিমা সরিয়ে নিয়েছে।'