[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

১৫ ঘণ্টার অপেক্ষা শেষে মিলল বাস, আশা এখন বাড়ি পৌঁছার

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি মির্জাপুর

১৫ ঘণ্টার অপেক্ষার পর বাসে উঠেছেন এই যাত্রীরা  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ঢাকায় পরিচিত, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মীদের অনেকের সঙ্গেই আমার একটা জায়গায় অমিল। বেশির ভাগেরই বাড়ি ঢাকার কাছাকাছি, নয়তো নাগাল পাওয়ার মতো দূরত্বে। কিন্তু আমি এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।

এ নিয়ে সহকর্মীরা কত রকম কথা বলেন। মাঝেমধ্যে রসিকতা করে তাঁদের বলি, ঢাকায় কর্মস্থল না হয়ে চীনে হলেই বরং ভালো হতো। কারণ, ঢাকার চেয়ে আমার বাড়ি থেকে চীন সীমান্ত কাছেই হবে হয়তো! নেপাল, ভুটানের দূরত্বও নিশ্চিত কয়েক ঘণ্টা কম হবে। আর ভারত তো আমার কাছে বাড়ির উঠান!

যাহোক, ভূমিকা আর বড় না করি। কিন্তু এতটুকু পড়ে হয়তো অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, ‘বাড়িটা কোথায় আপনার? বাংলাদেশে তো!’ হ্যাঁ, আমার বাড়ি বাংলাদেশেই। লালমনিরহাটের পাটগ্রামে। আমাদের জেলাটা চিলির মতো। একদম লম্বা। ডান-বাম বলে কিছু নেই, এক সড়কেই পাঁচ উপজেলা। আর ৮০ কিলোমিটারের বেশি লম্বা এই সড়কের শেষ উপজেলাটি আমার। জেলা শহর থেকে বাড়ি যেতেই লাগে চার ঘণ্টা। এই সময়ে হয়তো ঢাকা থেকে যশোরে গিয়ে ঘণ্টাখানেক ঘুমিয়ে নেওয়া সম্ভব। তাহলে বুঝুন। আমার বাড়ির দূরত্ব ঢাকা থেকে প্রায় সাড়ে চার শ কিলোমিটার। স্বাভাবিক সময়ে যানজট ছাড়া যেতে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা সময় লাগে।

তো এবার আসি ঈদযাত্রায়। ঈদের তিন সপ্তাহ আগে টিকিট করলাম। কাউন্টারে যেতেই বলল, ‘ভাই, টিকিট তো আরও এক সপ্তাহ আগে শেষ হয়েছে।’ শেষে কতজনকে ধরে টিকিট পেলাম, সেই গল্প নাহয় না-ই বলি। গাড়ির সময় ছিল ৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়, মানে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। বেলা গড়াতেই সব গুছিয়ে আমার বোনসহ রেডি হলাম। বাসা থেকে বের হব, এমন সময় কাউন্টার থেকে ফোন।

ভাবলাম, হয়তো বলবে, সময়মতো চলে আসবেন। কিন্তু না কাউন্টার থেকে যা জানাল, তাতে মাথায় যেন আকাশ পড়ল। ফোনের ওপাশের লোকটা জানাল, আগের রাতে তাঁদের যেসব গাড়ি যাত্রী নিয়ে গেছে, সেগুলো ফিরতে পারেনি। আর ফিরবে কখন, সেটাও তারা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। তবে জানাল, আশা করছে গাড়ি ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত তিন–চারটা বেজে যাবে। কিন্তু অত রাতে তো যাত্রীরা আসতে পারবেন না। তাই তারা ঠিক করেছে সকাল সাতটায় গাড়ি ছাড়বে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট। ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে মানুষ। মির্জাপুর, টাঙ্গাইল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কাউন্টার থেকে এ কথা শুনে পড়লাম মহামুশকিলে। ভাবলাম, পরদিন সকালে রওনা দিয়ে ঈদের আগে বাড়ি পৌঁছাতে পারব তো? সঙ্গে বোনও আছে। এদিকে পরিচিতিজন যারা বাড়ির পথে ছিল, তাদের সঙ্গে কথা বললাম। কেউ বলল, ১০-১২ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে যমুনা সেতু পৌঁছাতে পারেনি। জানলাম, রাস্তায় মাইলের পর মাইল যানজট। গাড়ি দীর্ঘ সময় আটকে থেকে মিনিটখানেক চলে, আবার থামে। কেউ কেউ তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকারও তথ্য দিল। বুঝলাম বিকল্প কিছু ভাবতে হবে।

ধামরাইতে যানজট। আজ শুক্রবার সকালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

অবশেষে ফেসবুকের কথা মনে হলো। জানান দিলাম, আমি এমন একটা বিপদে পড়েছি। কেউ যদি আমার সঙ্গে যাওয়ার মতো থাকেন, তাহলে একটা গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া যায়। প্রথমে যাব রংপুর। এরপর কোনো একটা উপায় বের করে বাড়ি ঠিকই পৌঁছাতে পারব। কারণ, আমি জানি, আমার বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার ঝুঁকি কোনো চালকই নেবেন না। পরিচিতজনদের মাধ্যমে বিকল্প কিছু পাওয়া যায় কি না, সেই চেষ্টাও চালালাম। কিন্তু ফেসবুক আর পরিচিতিজন সবাই নিরাশ করল।

কী আর করা। সকালে যাব ভেবে নিজেরে সান্ত্বনা দিলাম। ঘুমও হলো না। দুই ঘণ্টা ঘুমিয়ে সময়মতো কাউন্টারে এলাম। বাসা থেকে বের হয়ে সিএনজিচালকের কাছে খবর পেলাম, যানজট নাকি ধানমন্ডি ২৭ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আগের দিনদুপুরে রওনা দেওয়া আমার চাচা-চাচি জানাল, তারা রংপুরেই পৌঁছাতে পারেনি। এদিকে যমুনা সেতুর আগপর্যন্ত দীর্ঘ যানজট পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ার খবরও পেলাম। ঈদের আগে বাড়ি পৌঁছাতে পারব কি না, সেই শঙ্কা নিয়ে নানা পথ ঘুরে অলিগলি হয়ে কাউন্টারে পৌঁছালাম। এসে শুনি গাড়ি নাকি আরও এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়বে। অগত্যা কাউন্টারে বসে থাকলাম। অবশেষে সকাল ৯টায় গাড়ি ছাড়ল। দেখলাম গাবতলীমুখী সড়কজুড়ে শুধু গাড়ি আর গাড়ি। থমকে আছে। নড়েচড়ে না। সড়কদ্বীপে পিপীলিকার মতো মানুষ। গাবতলীর আধা কিলোমিটার পথ এক ঘণ্টায় পার হয়ে আমিনবাজার সেতুর কাছে এসেছি—এমন সময় এক বড় আপুর ফোন। হালহকিকত কী, তা জানতে চাইলেন। সবটা তো আর বলা গেল না। শুধু এটুকু বললাম যে ‘গাড়ি যখন ছেড়েছে একদিন না একদিন নিশ্চয় বাড়ি পৌঁছাব।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন