[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

কেজি নয়, নওগাঁয় চলছেই মন দরে আম বিক্রি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

সবুজ হোসেন নওগাঁ

নানা জাতের আমে ভরে উঠেছে নওগাঁর সাপাহার আমের হাট। আম বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন চাষিরা। নওগাঁর সাপাহার উপজেলা সদরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নওগাঁর বিভিন্ন বাজারে উঠতে শুরু করেছে গ্রীষ্মের জনপ্রিয় ফল আম। হিমসাগর, নাকফজলি, ল্যাংড়া, হাড়িভাঙ্গা, আম্রপালি এবং ব্যানানা ম্যাংগোসহ নানা জাতের আম এখন পাওয়া যাচ্ছে। তবে বাজারে পুরোপুরি গতি আসেনি। নির্ধারিত সময়সূচি ও সরকারি নির্দেশনা মানতে চাইছেন না অনেক ব্যবসায়ী, যার ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন আম চাষীরা।

বাজারে ব্যবসায়ীর সংখ্যা কম। অনেক চাষী সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বসে থেকেও কাঙ্ক্ষিত দামে আম বিক্রি করতে পারছেন না। চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতা ও পাইকার না থাকায় বিক্রি হচ্ছে ধীরগতিতে। ফলে চাষীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।

জেলার সাপাহার উপজেলা সদরে রাজশাহী বিভাগের অন্যতম বড় আমের বাজার রয়েছে। প্রায় ৩৫০টি আড়তের মধ্যে এখন পর্যন্ত চালু হয়েছে মাত্র ৮০ থেকে ৯০টি। প্রতিদিন এই বাজার থেকে ৮–১০ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হয়। এখানকার আম শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।

বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় নওগাঁর আমের স্বাদ ও মিষ্টতা বেশি। ফলে সারা দেশে এখানকার আমের চাহিদা থাকে বেশি। তবে মৌসুমের শুরুতেই নানা সমস্যার মুখে পড়েছেন আমচাষীরা। প্রচণ্ড গরমে অনেক আম গাছে পেকে ঝরে পড়ছে, আবার বাজারে গিয়ে ঠিক মতো দামও পাওয়া যাচ্ছে না।

সাপাহারের জিরো পয়েন্ট থেকে গোডাউনপাড়া পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় প্রতিবার আমের বাজার বসে। এবার শুরুতে বাজার সীমাবদ্ধ আছে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। ভ্যান, ভটভটি ও নানা যানবাহনে চাষীরা প্রতিদিন বাগান থেকে আম নিয়ে বাজারে আসছেন, কিন্তু ঠিকমতো বিক্রি হচ্ছে না।

চাষীরা বলছেন, এবার আমের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক কম। বাজারে এখন ল্যাংড়া আম প্রতিমণ ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাকফজলি ও হিমসাগরের দাম ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা। হাড়িভাঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকায়, আর আম্রপালি ও ব্যানানা ম্যাংগো মিলছে ২২০০ থেকে ২৮০০ টাকায় প্রতিমণ। তবে দাম নির্ভর করছে আমের মান ও প্যাকেটিংয়ের ওপর।

চাষীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কেজি দরে আম বিক্রির। সেই দাবির ভিত্তিতে গত ৫ জুন রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে এক বৈঠকে উপজেলা প্রশাসন, ব্যবসায়ী, আড়ৎদার ও চাষীরা মিলে সিদ্ধান্ত নেন—এ বছর থেকে কেজিতে আম বেচাকেনা হবে।

কিন্তু মাঠে সেই সিদ্ধান্ত মানা হচ্ছে না। এখনো অনেক ব্যবসায়ী ও আড়ৎদার আগের মতো ৫০–৫২ কেজিকে এক মন ধরে লেনদেন করছেন। এতে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, কারণ মন দরে বিক্রি করলে কেজি হিসেবে দাম পড়ে যায় অনেক কম।

সাপাহারের কোরালডাঙ্গা গ্রামের আমচাষী আব্দুল মতিন বলেন, 'তিন বিঘা জমিতে আম্রপালি লাগিয়েছি। গরমে গাছ থেকে আম পড়ে যাচ্ছে, তাই তাড়াতাড়ি তুলতে হচ্ছে। কিন্তু বাজারে ভালো দাম পাচ্ছি না। গত বছর মৌসুমের শুরুতে তিন হাজার টাকা মন দরে বিক্রি করেছিলাম, এবার দিতে হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়। কেজি দরে বিক্রির কথা থাকলেও কেউ মানছে না।'

বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, 'কেজি দরে বিক্রির ব্যাপারে সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু আড়ৎদার আর ব্যবসায়ীরা আগের নিয়মেই চলছেন। প্রশাসন শুধু মাইকিং করছে, বাস্তবে কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। প্রশাসন কঠোর হলে চাষীরা উপকৃত হতেন।' 

সাপাহার আড়ৎদার সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা বলেন, 'অনেক ব্যবসায়ী বাজারে আসছেন না, কারণ কেজি দরে আম বিক্রিতে ওজন নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তাই এখনো বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ৫০–৫২ কেজিতে মন ধরে কিনছেন। কেজি দরে কিনলে ভালো আম বাছাই করে নিতে হয়, এতে চাষীরা আপত্তি করেন। তাই আগের নিয়মেই লেনদেন হচ্ছে।' 

নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, 'চলতি মাসের শুরুতে কেজি দরে আম বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিছু জায়গায় এটি ঠিক মতো মানা হচ্ছে না। তাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আবারও আড়ৎদার, চাষী ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। সিদ্ধান্ত না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' 

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন