[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

২০ বছরের অপেক্ষায় মা হলেন, ১৪ দিনেই স্বামীর বিদায়

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি বাগমারা

রাজশাহীর বাগমারার গৃহবধূ খালেদা বিবি। ১৭ দিনের সন্তানকে কোলে নিয়ে নিজ বাড়ির সামনে। শনিবার সকাল গণিপুর গ্রাম | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

মাটির ঘরে টিনের চালা। ঘরের একটি কক্ষের সামনে ১৪ দিনের শিশু কোলে নিয়ে করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন মা খালেদা বিবি (৩৮)। সন্তান ও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি। বিয়ের ২০ বছর পর সন্তানের মা হলেও তাঁকে আনন্দ স্পর্শ করতে পারেনি। কেননা, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার ১৪ দিন পর স্বামীকে হারিয়েছেন খালেদা।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০ বছর আগে পাশের মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ গ্রামের খালেদা বিবির বিয়ে হয় বাগমারার গণিপুর গ্রামের আনেছুর রহমানের সঙ্গে। তাঁরা থাকেন রাজশাহীর বাগমারার গণিপুর গ্রামে। বিয়ের দীর্ঘ সময়েও ঘরে সন্তান আসছিল না। দিনমজুরি করে ও হাটবাজারে শ্রমিক হিসেবে পান ব্যবসায়ীদের পান কিনে দিয়ে সংসার চালাতেন আনেছুর। এসব থেকে সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে নিজেদের চিকিৎসা করাচ্ছিলেন আনেছ–খালেদা দম্পতি। দেশের বাইরে চিকিৎসা নিয়ে অনেকের ঘরে সন্তান এসেছে, এমনটা জানার পর তাঁদের ইচ্ছা ছিল বিদেশে যাওয়ার। টাকার অভাবে তা পারেননি। এরপরও হতাশ হননি। দেশেই বিভিন্ন চিকিৎসা নিতে থাকেন। এর ফল পান। বিয়ের ২০ বছর পর স্ত্রী খালেদা অন্তঃসত্ত্বা হন।

তবে এই খবরে খুশি হলেও বেশি দিন তা থাকেনি। গত মার্চ মাসে ক্যানসার ধরা পড়ে আনেছুরের। অর্থাভাবে চিকিৎসাও করাতে পারেননি। ২৭ মে আনেছ–খালেদা দম্পতির দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূর্ণ হয়ে ঘরে আগমন ঘটে ছেলেসন্তানের। অসুস্থ বাবা ছেলের নাম রাখেন সাদমান সাদিক আয়াস। অসুস্থ অবস্থায় ছেলেকে কোলে নিয়ে আদরও করেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, বসতবাড়ি বাদে একখণ্ড জমি ছিল আনেছুরের। সেই জমি বিক্রি করে চিকিৎসা করান। তবে বাঁচতে পারেননি। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার ১৪ দিন পর গত বুধবার তিনি মারা যান।

আজ শনিবার সকালে খালেদা বিবিকে ১৭ দিনের নবজাতক সাদমান সাদিককে কোলে নিয়ে বারান্দায় বসে থাকতে দেখা যায়। সন্তান ও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন স্বামীহারা এই গৃহবধূ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘২০ বছর পর বাচ্চা পাইলেও আনন্দ নাই। বাচ্চাকে কীভাবে মানুষ করব আর নিজে বাঁচব ক্যামনে, এ লিইয়্যা টেনশনে আছি।’

আর্থিক সংকটের কথা তুলে ধরে খালেদা জানান, সংসারের যে পুঁজি আর জমি ছিল, তা স্বামীর চিকিৎসায় শেষ করেছেন। এখন ভাত রান্না করার মতো অবস্থা নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর বাপের বাড়ি থেকে কিছু বাজার করে দিয়েছিল, তা দিয়ে চলছে।

খালেদা বিবির অবস্থা বলতে গিয়ে স্থানীয় হাসনিপুর গ্রামের বাসিন্দা রাশেদুজ্জামান জানান, খালেদার কষ্ট দেখে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না। স্বামীর মৃত্যুর পর নবজাতককে নিয়ে একাই থাকছেন বাড়িতে। পরিবারটি একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছে। আরেক প্রতিবেশী বেলাল হোসেন বলেন, খালেদা বিবি ১৭ দিনের শিশুসন্তানকে নিয়ে বাড়িতে একা থাকছেন। আয়রোজগারের কোনো পথ নেই। এই নবজাতক নিয়ে অন্যের কাজও করতে পারবে না।

বিষয়টি নজরে আনা হলে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম বলেন, পরিবারটির খোঁজখবর নিয়ে তিনি সহযোগিতার চেষ্টা করবেন।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন