নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা

দুর্নীতি দমন কমিশনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ গ্রাফিক: পদ্মা ট্রিবিউন  

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেইসবুক পোস্টে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘ঘুষ দাবি’ করার অভিযোগ তুলে নেওয়ায় সংস্থাটি তা ‘যাচাই-বাছাইহীন’ ও মানহানিকর বলে খণ্ডন করেছে।

মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দুদক জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়া অনেকেই সংস্থাটির বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে, যা দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'দুদকের মহাপরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হাসনাত আব্দুল্লাহ যেসব মানহানিকর মন্তব্য করেছেন, তা কোনো প্রমাণ ছাড়াই করা হয়েছে। এই পোস্ট দুদকের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।' 

বিজ্ঞপ্তিতে দুদক আরও জানায়, 'একটি প্রতারক চক্র দুদকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরিচয়ে অবৈধভাবে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করছে। দুদকের কর্মকর্তাদের এই চক্রের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ইতোমধ্যে এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।'

সংস্থাটি সবাইকে সতর্ক করে বলেছে, 'অধিকারের বাইরে এমন প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুদককে দোষারোপ করছেন, যা আমাদের সুনাম নষ্ট করছে। এ ধরনের প্রতারণার খবর পেলে দ্রুত ১০৬ নম্বরে টোল ফ্রি হটলাইনে অথবা নিকটস্থ দুদক কার্যালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে জানাতে অনুরোধ করা হলো।' 

হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, 'স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে দুদকের চা খাওয়ার বিল এক লাখ টাকা। দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকলেও সেটার ক্লিয়ারেন্স পেতে এক লাখ টাকা দিতে হয়। সম্প্রতি মাহমুদা মিতুর কাছে দুদকের ডিজি আকতার এবং ডিডি পরিচয়ে এমন টাকা চাওয়া হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে, ‘আপনি ডাক্তার, তো টাকা আছে, এক লাখ টাকা দিয়ে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে যান।’ 

হাসনাত তার পোস্টে আরও অভিযোগ করেন, 'দুদকের সর্বনিম্ন রেট এক লাখ টাকা। টাকা দিতে অস্বীকার করলে হুমকি দেওয়া হয়। মাহমুদা মিতু রেড ক্রিসেন্টে যোগদান করেছেন ৫ আগস্টের পর, অথচ দুদক এখন আওয়ামী লীগের সময়ের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। তবু আওয়ামী লীগের বড় বড় দুর্নীতিবাজদের নাম না দিয়ে বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে। এভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় হয়, অথচ কেউ জানে না।' 

তিনি বলেন, 'দুদকের এই ধরনের আচরণ নতুন নয়। হাসিনার আমলে বিরোধী দলীয় নেতাদের হয়রানি করেছে দুদক, কিন্তু আওয়ামী লীগের দুর্নীতি নিয়ে মুখ খোলা হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর পরিবর্তন আসবে, কিন্তু তা হয়নি। বরং এখন তারা চায়ের বিল হিসেবে এক লাখ টাকা চাইছে।' 

হাসনাত শেষ করেন, 'আমরা নতুন বাংলাদেশ চাই, যেখানে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা কঠোর হবে। কিন্তু যদি আমলাদের এই চাঁদাবাজি বন্ধ না করা যায়, তাহলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হবে না। আমরা দুদকের এই দুর্নীতির বিচার চাই। আমাদের জীবন দিলাম কী শুধু এই এক লাখ টাকার চায়ের বিলের জন্য?' 

পোস্টের সঙ্গে তিনটি অডিও রেকর্ডিংও সংযুক্ত ছিল, যেখানে ওই চিকিৎসকের ফোনালাপ ধারণ করা হয়েছে।