প্রতিনিধি নাটোর
![]() |
নাটোর পুলিশ বিনা ভাড়ায় সেখানকার কর্মজীবীদের ঢাকা ও গাজীপুরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। শনিবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
টাকা খরচ করে বাসে–ট্রেনে ঢাকার কর্মস্থলে যেতে পারছেন না, এমন ১২০ জন কর্মজীবী নারী-পুরুষকে নাটোর জেলা পুলিশ আজও নিজেদের দুটি বাসে করে বিনা ভাড়ায় ঢাকায় পৌঁছে দিচ্ছে। শনিবার বিকেল সাড়ে চারটায় জেলা শহরের হরিশপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে এই সেবা চালু করা হয়েছে। শুক্রবারও পুলিশ ১২০ জনকে ঢাকায় পৌঁছে দেয়।
জেলা পুলিশ ও সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটি শেষে শত শত কর্মজীবী মানুষ ঢাকায় কর্মস্থলে ফেরার জন্য গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে হরিশপুর বাসস্ট্যান্ড ও নাটোর রেলস্টেশনে আসতে শুরু করেন। কিন্তু ট্রেনের টিকিট না পাওয়ায় এবং বাসের অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে তাঁরা কর্মস্থলে ফিরতে পারছিলেন না। সারা দিন তাঁরা বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশনে কম ভাড়ার পরিবহনের জন্য বসে ছিলেন। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে করে রওনা হন।
বিষয়টি জেলার পুলিশ সুপারের নজরে আসে। তিনি শুক্রবার বিকেল চারটায় নাটোর জেলা পুলিশের দুটি বাসে করে এসব অসহায় কর্মজীবীদের ঢাকায় কর্মস্থলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। একইভাবে আজ শনিবার বিকেল সাড়ে চারটায় পুলিশের দুটি বাস হরিশপুর বাসস্ট্যান্ডে আসে। সেখান থেকে জরুরি ভিত্তিতে ১২০ জন কর্মজীবী নারী–পুরুষকে নিয়ে গাজীপুর ও ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।
বিনা ভাড়ায় বাসে কর্মস্থলে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে স্বল্প আয়ের নারী–পুরুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। তাঁরা পুলিশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। মরিয়ম বেগম নামের এক পোশাক কারখানার কর্মী জানান, রোববার থেকে তাঁকে গাজীপুরের গার্মেন্টেসে যোগদান করতে হবে। কিন্তু তিনি ট্রেনের টিকট পাননি। বাস কাউন্টারেও টিকিট দিচ্ছে না। দালাল ধরে দু–একটা টিকিট পাওয়া গেলেও দাম দ্বিগুণ–তিন গুণ। এমন পরিস্থিতিতে তিনি ও তাঁর সঙ্গে থাকা আরও তিন নারী কর্মী হতাশ হয়ে বাস টার্মিনালে বসে ছিলেন। হঠাৎ পুলিশের দুটি বাস এসে তাঁদের বিনা ভাড়ায় ঢাকায় পৌঁছানোর খবর দেয়।
আবদুল মান্নান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘আজ রাতের মধ্যে আমাকে আশুলিয়ায় পৌঁছাতে হবে। কিন্তু যাওয়ার কোনো উপায় পাচ্ছি না। সত্যিই নাটোরের পুলিশ মানবিক পুলিশ। আমরা উনাদের জন্য দোয়া করব।’
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান, স্বল্প বেতনের বহু কর্মজীবী মানুষ সকাল থেকে বাসস্ট্যান্ড ও রেলস্টেশনে ভিড় করেছেন। কিন্তু তাঁরা টিকিট পাচ্ছিলেন না। তা ছাড়া ভাড়া পরিশোধ করার মতো অবস্থাও অনেকের নেই। অথচ তাঁদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে পৌঁছাতে হবে। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর আমি গতকাল ও আজ দুটি বাসের ব্যবস্থা করেছি। আগামীকালও দুটি বাস দেওয়ার চেষ্টা করব। বিনা ভাড়ার পাশাপাশি তাঁদের জন্য খাবারের পানিও সরবরাহ করেছি।’