প্রতিনিধি কুমিল্লা

বিএনপির রাজনীতি নিয়ে মন্তব্যের জেরে কুমিল্লার দেবীদ্বারে হাসনাতের পক্ষে ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আহত, শহীদ পরিবার ও ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলের (বাঁয়ে) পর বিপক্ষে প্রতিবাদ মিছিল করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। মঙ্গলবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বিএনপির রাজনীতি নিয়ে মন্তব্যের জেরে কুমিল্লার দেবীদ্বারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা সদরে হাসনাতের পক্ষে ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আহত, শহীদ পরিবার ও ছাত্র-জনতার’ ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলের পর বিপক্ষে প্রতিবাদ মিছিল করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

১৬ মে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘জুলাই সমাবেশে’ দেওয়া বক্তব্যে হাসনাত আবদুল্লাহ ‘বিএনপির রাজনীতিও আওয়ামী লীগের টাকায় চলে’ বলে মন্তব্য করেন। এরপর বিএনপিকে জড়িয়ে ‘অসৌজন্যমূলক’ বক্তব্য দেওয়ার প্রতিবাদে মিছিল করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। দেবীদ্বার উপজেলা বিএনপির ব্যানারে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিজভিউল আহসান মুন্সীর নেতৃত্বে কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল আহসান মুন্সীর সমর্থকেরা ওই প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেন।

এ ছাড়া গতকাল সোমবার বিকেলে কুমিল্লা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বক্তব্য প্রত্যাহারে হাসনাত আবদুল্লাহকে সাত দিনের সময় বেঁধে দেয়ে কুমিল্লা বিভাগীয় (সাংগঠনিক) বিএনপি। একই সঙ্গে তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে হাসনাত আবদুল্লাহর কুমিল্লার রাজপথে জায়গা থাকবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। মূলত এ ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আজ দেবীদ্বারে হাসনাতের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

আজ বিকেল চারটার দিকে দেবীদ্বার রেয়াজ উদ্দিন সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে হাসনাতের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কসহ উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘হাসনাত ভাইয়ের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘দেবীদ্বারের মাটি, হাসনাত ভাইয়ের ঘাঁটি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। পরে নিউমার্কেট স্বাধীনতা চত্বরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করা হয়।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জুলাই আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের স্বজন ও আহত কয়েকজন বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, গতকাল কুমিল্লায় বিএনপির নেতারা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হাসনাত আবদুল্লাহকে নিয়ে যে ধরনের কথা বলেছেন, তাঁরা তাঁর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আজ তাঁরা স্বাধীনভাবে প্রেসক্লাবে কথা বলতে পারছেন কাদের জন্য? বিগত ১৭ বছরে ১৭ সেকেন্ডও প্রেসক্লাবে তাঁদের স্থান হয়নি। আজ তাঁরা স্বাধীনভাবে সবকিছু করতে পারছেন, এটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে।

ওই কর্মসূচির পর হাসনাতের বিপক্ষে মিছিল করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি উপজেলা সদরের মুক্তিযুদ্ধ চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। এতে কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিজভিউল আহসান মুন্সীসহ স্থানীয় বিএনপির নেতারা বক্তব্য দেন।

রিজভিউল আহসান মুন্সী বলেন, ১৬ মে শিল্পকলা একাডেমিতে হাসনাত আবদুল্লাহ বিএনপিকে জড়িয়ে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেন। হাসনাতের ওই বক্তব্য বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এ বক্তব্যে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসনাত আবদুল্লাহ বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে ক্ষমা না চাইলে তাঁকে কুমিল্লায় কোনো অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

গত শুক্রবার রাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জুলাই সমাবেশে’ সভাপতির বক্তব্য দেন হাসনাত আবদুল্লাহ। প্রায় ২০ মিনিটের বক্তব্যের একাংশে হাসনাত বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলেও তাদের অর্থদাতারা এখনো অক্ষত রয়েছে। আমি এখন যেহেতু কুমিল্লা আছে, তাই কুমিল্লাকে নিয়ে বলতে চাই। কুমিল্লার অনেক উপজেলা রয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি পাশাপাশি বিএনপির রাজনীতিও আওয়ামী লীগের টাকায় চলে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, অতি দ্রুত আওয়ামী লীগের অর্থকাঠামো ধ্বংস করে দিতে হবে। আওয়ামী লীগের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। তাঁদের অর্থকাঠামো ঠিক রেখে আপনি কখনোই যথাযথ সংস্কার করতে পারবেন না।’

ওই মন্তব্যের পর সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদের (ওয়াসিম) উদ্দেশে হাসনাত বলেন, ‘আপনারা আমার কথায় ভুল বুঝবেন না। আমি আপনাদের ভালোর জন্য বলছি।’