[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

চাকরি হারানোর পর রিকশাও চুরি, বেঁচে থাকার কঠিন সংগ্রামে মূসা-অনন্যা দম্পতি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জ

প্রায় পরিত্যক্ত একটি ঘরে আশ্রয় জুটেছে মূসা–অনন্যা দম্পতির। শনিবার নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার লামাপাড়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

পোশাক কারখানায় স্টোরকিপারের কাজ করতেন মূসা আহমেদ। স্ত্রী অনন্যা ইসলাম ও ছয় বছরের ছেলে মোরসালিন সামিকে নিয়ে ছিল সুখের সংসার। চার মাস আগে দুই মাসের বেতন না দিয়েই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। নতুন কাজ না পেয়ে ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালানো শুরু করেন মূসা। কিন্তু অটোরিকশাটি চুরি হয়ে যায়। মালিক তখন তাঁকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। চাপে পড়ে ধার করে ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।

এর মধ্যে ৪ মাসের ভাড়া বকেয়া পড়ায় ১০ দিন আগে মালামাল রেখে তাঁদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন বাড়িওয়ালা। পরিচিত একজনের সহায়তায় প্রায় পরিত্যক্ত একটি বাড়ির ছোট্ট কক্ষে আশ্রয় জুটলেও সংসার চালানোর অর্থ নেই। কর্মহীন ও অসুস্থ দম্পতির পরিবারটিকে বেঁচে থাকার কঠিন সংগ্রামে পড়তে হয়েছে। অভাব–অনটনে কূলকিনারা না পেয়ে বাধ্য হয়ে কিডনি বিক্রি করতে চান তাঁরা।

মূসা আহমেদের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের রূপসা গ্রামে। সাত বছর আগে প্রেম করে অনন্যা ইসলামকে বিয়ে করেন। তিনি পরিবার নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জের পশ্চিম সানারপাড় এলাকায় জনৈক মোসলেম মিয়ার বাড়িতে ভাড়ায় থাকতেন। সেখানে এমটিএস নামের একটি গার্মেন্টসে স্টোরকিপারের কাজ করতেন এসএসসি পাস মূসা। তাঁর স্ত্রী অনার্স পাস অনন্যা ইসলাম অ্যাজমার রোগী। মূসা নিজেও লিভার ও কোমরের সমস্যায় আক্রান্ত। ছয় বছরের সন্তান মোরসালিনকে সানারপাড় ফুল কুড়ি স্কুলে শিশুশ্রেণিতে ভর্তি করা হলেও অভাবের কারণে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে।

গত শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার লামাপাড়া এলাকার জনৈক আল আমিনের মালিকানাধীন পরিত্যক্ত একটি টিনশেড বাড়ির একটি কক্ষে আশ্রয় নিয়েছেন মূসা ও অনন্যা দম্পতি। বাড়িটি নিচু হওয়ায় বৃষ্টি হলেই পানি ওঠে। এ কারণে ওই বাড়ির ভাড়াটেরা চলে গেছেন। ঘরে জিনিসপত্র বলতে একটি মাদুর, কয়েকটি থালাবাসন, ছোট একটি বৈদ্যুতিক ফ্যান আর পরনের কিছু কাপড়। রান্নার চুলাও নেই।

গত শুক্রবার রাতে পাশের ট্রাকস্ট্যান্ডের এক চালক রুটি কিনে দিয়েছিলেন বলে জানান এই দম্পতি। গতকাল বেলা আড়াইটা বাজলেও তখনো কোনো খাবারের জোগাড় হয়নি। ছয় বছরের ছোট বাচ্চা মোরসালিন খাবারের জন্য বারবার কান্নাকাটি করছিল। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা।

মূসা আহমেদ বলেন, ‘চার মাস আগেও আমাদের সংসারে অভাব ছিল না। যে গার্মেন্টসে কাজ করতাম, সেখানে ১৯ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে আমাদের তিনজনের সংসার ভালোমতোই চলত। হঠাৎ দুই মাসের বেতন না দিয়েই গার্মেন্টসটি বন্ধ হয়ে গেলে বিপদে পড়ে যাই। অনেক জায়গায় চেষ্টা করেও নতুন কাজ পাইনি।’

ভাড়ায় অটোরিকশা চালানো শুরু করলে সেটিও চোর চুরি করে নিয়ে গেছে উল্লেখ করে মূসা বলেন, কাজ না থাকায় স্ত্রীর অসুস্থতায় ঋণ করতে হয়েছে। অটোরিকশা চুরি হওয়ায় জরিমানার টাকা, ঋণের টাকা ও সংসার চালানোর খরচ মেলাতে পারছেন না। অভাব ও সমস্যায় এমনভাবে আটকে গেছেন, এখন কিডনি বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

মূসার স্ত্রী অনন্যা ইসলাম অ্যাজমার রোগী। ধুলাবালুতে সমস্যা হয়। ভারী কোনো কাজও করতে পারেন না। অনন্যা ইসলাম বলেন, ‘আশপাশের অনেক গার্মেন্টসে কাজের জন্য গিয়েছি। তারা কেউ কাজ দেয়নি। সবাই ঈদের পর কাজের জন্য যোগাযোগ করতে বলে। এই সময় আমাদের সংসার কীভাবে চলবে? ঋণের টাকার জন্য আমাদেরকে খুব চাপ দিচ্ছে।’ সংসারে অভাব ও কষ্টের কারণে রক্ত বিক্রি করতে মিটফোর্ড হাসপাতালে গেলেও তাঁর কাছ থেকে রক্ত নেয়নি।

মূসার পরিবারের কষ্টের কথা শুনে তাঁদের খাবার কিনে দেন লামাপাড়া এলাকার ট্রাকস্ট্যান্ডের চালক রোহান মিয়া। তিনি বলেন, ‘পরিবারটি খুবই কষ্টে আছে। অভাবের কারণে তাঁরা কিডনি বিক্রি করতে চাইছেন। তাঁদের কষ্টের কথা শুনে চোখে জল এসে গেছে। যদি কেউ তাঁদের একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে সংসারটি বেঁচে যেত।’

মূসার বাড়ির পাশেই নাসির উদ্দিন খোকনের চায়ের দোকান। মূসার পরিবারের সমস্যার কথা শুনে একটি পানির কোম্পানির একজনকে বলে দৈনিক ২৫০-৩০০ টাকা বেতনে লোড-আনলোডের কাজ নিয়ে দিয়েছিলেন। কোমরের সমস্যার কারণে এক দিন কাজ করার পর সেই কাজ করতে পারেননি মূসা। নাসির উদ্দিন বলেন, ছেলেটির পরিবারের অসহায়ত্বের কথা শুনে মায়া লেগে গেছে। এক জায়গায় কাজ নিয়ে দিলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে করতে পারেননি। কাজ না হলে টিকে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়বে।

মূসার সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া এমটিএস পোশাক কারখানায় হিসাব বিভাগে কাজ করতেন আবদুল হালিম। তাঁর গ্রামের বাড়িও সিরাজগঞ্জে। মূসার সর্ম্পকে তিনি জানান, ‘গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ না থাকায় মূসা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বাড়িভাড়া আটকে যাওয়ায় বাড়ির মালিক তাঁর সব মালামাল আটকে দিয়েছেন। বিষয়টি আমাকে জানালে আমি আমার এক আত্মীয়কে বলে পরিত্যক্ত ওই বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কাজ পেলে পরিবারটি বেঁচে যেতে পারে।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন