প্রতিনিধি পঞ্চগড়
![]() |
সাংবাদিকদের দুই পক্ষের উত্তেজনার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। এ সময় সিলগালা করা হয় প্রেসক্লাবের মূল ফটক | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
পঞ্চগড় প্রেসক্লাব ঘিরে সাংবাদিকদের দুই পক্ষের মধ্যে চলমান উত্তেজনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সুমন চন্দ্র দাস এ আদেশ জারি করেন। আজ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বহাল থাকবে বলে আদেশে বলা হয়।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বেলা পৌনে ১টার দিকে পঞ্চগড় প্রেসক্লাব চত্বরে উপস্থিত হয়ে এই আদেশের বিষয়টি জানান এবং সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। এ সময় প্রেসক্লাব ভবনের দুটি কক্ষের দরজা ও মূল ফটক সিলগালা করে দেওয়া হয়। এ সময় সেনাবাহিনীর পঞ্চগড় ক্যাম্প কমান্ডার মেজর জুবায়ের হোসেন সিয়াম, পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লা হিল জামানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
১৪৪ ধারার আদেশে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পঞ্চগড় প্রেসক্লাব ও প্রেসক্লাব চত্বর এবং পঞ্চগড় শহরের চৌরঙ্গী মোড় থেকে জালাসী মোড় পর্যন্ত সব রকম জনসমাবেশ, অবৈধ প্রবেশ, মাইক বাজানো, সভা ও মিছিল পরিচালনা নিষিদ্ধ ঘোষণার কথা বলা হয়েছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসকসহ জরুরি সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা নিয়ে সাংবাদিকদের দুটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। গতকাল বুধবার রাতে প্রেসক্লাবের মূল ফটকে তালা দেওয়াকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ শহরের বকুলতলা এলাকায় পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সামনে পঞ্চগড়-টুনিরহাট সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। একই সময় অপর পক্ষটি জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে করতোয়া সেতুর সামনে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। রাত ১২টা পর্যন্ত চলা এই অবরোধের কারণে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ পথচারীরা। একপর্যায়ে প্রশাসনের সমাধানের উদ্যোগের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেন সাংবাদিকেরা।
আজ সকালে সাংবাদিকদের একটি পক্ষ তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে অবস্থান নেওয়ার কিছুক্ষণ পর ‘প্রেসক্লাব সংস্কার, গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও সব গণমাধ্যমকর্মীর জন্য উন্মুক্ত করার দাবি’সংবলিত ব্যানার নিয়ে অবস্থান কর্মসূচির জন্য প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢোকে অপর পক্ষটি। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় বাগ্বিতণ্ডা। এরই মধ্যে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি সবাইকে জানান। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
![]() |
পঞ্চগড় সদরের ইউএনও বেলা পৌনে ১টার দিকে পঞ্চগড় প্রেসক্লাব চত্বরে উপস্থিত হয়ে ১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি জানান এবং সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
গত বছরের ২১ আগস্ট দুপুরে পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ পেতে ইচ্ছুক একদল সাংবাদিক অবস্থান নেন। পরে তাঁরা পূর্বের কমিটি থাকার পরও নাগরিক টিভির পঞ্চগড় প্রতিনিধি সাইদুজ্জামান রেজাকে সভাপতি এবং বিজয় টিভির পঞ্চগড় প্রতিনিধি ইনসান সাগরেদকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে প্রেসক্লাবের মূল সদস্যরা প্রেসক্লাবে যাওয়া বন্ধ করে দেন। পরে সংকট নিরসনে জেলা বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের মধ্যস্থতায় দুটি পক্ষকে নিয়ে ২৫ আগস্ট পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মিলনায়তনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রেসক্লাবের আগের কমিটি ও স্বঘোষিত কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। সেখানে বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের পঞ্চগড় প্রতিনিধি সরকার হায়দারকে (পুরোনো সদস্য নন) আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই সঙ্গে আহ্বায়ক কমিটিকে সহায়তা করার জন্য পঞ্চগড় পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। এ সময় আহ্বায়ক কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে নতুন সদস্য সংগ্রহ করে দুই মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর আহ্বায়ক কমিটির তিনজন সদস্য পদত্যাগের জন্য আবেদন করেছিলেন।
এদিকে দায়িত্ব দেওয়ার চার মাস পার হয়ে গেলেও আহ্বায়ক কমিটি কোনো কার্যক্রম দেখাতে না পারায় গত ২ জানুয়ারি রাতে উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. আদম সুফির চেম্বারে এক সভায় মৌখিকভাবে আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে উপদেষ্টা কমিটি সব দায়িত্ব গ্রহণ করে। এরপরও বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হওয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।
প্রেসক্লাবে একটি পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাভিশন ও কালবেলার পঞ্চগড় প্রতিনিধি মোশারফ হোসেন বলেন, ‘পঞ্চগড় প্রেসক্লাব সুশৃঙ্খলভাবেই চলছিল। এর মধ্যে নতুন সদস্য নেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু ২১ আগস্ট হঠাৎ করেই একদল বহিরাগত সাংবাদিক প্রেসক্লাব দখল করেন। পরে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপে সমাধানের চেষ্টা করা হলেও দখলকারীরা কোনো কিছুই মানছিলেন না। আমাদের মূল মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকেরা সদস্য হয়েও উদ্বাস্তুর মতো বাইরে ঘুরছেন। অথচ দখলকারীরা সদস্য না হতেই কেউ সভাপতি-সম্পাদক, আবার আহ্বায়ক পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। আমরা সব সময়ই সমস্যা সমাধানের পক্ষে।’
অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ টোয়েন্টিফোরের পঞ্চগড় প্রতিনিধি সরকার হায়দার বলেন, ‘আমরা আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে প্রেসক্লাবের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার কাজ করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই একটি সভায় উপদেষ্টা কমিটি মৌখিকভাবে আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথা বললে আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসি। পরে আমাদের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা বা ভেঙে দেওয়ার কোনো লিখিত চিঠি আমি পাইনি। আজ প্রেসক্লাবে ১৪৪ ধারা জারির ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এ ছাড়া প্রেসক্লাবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কখনোই কাম্য নয়।’
![]() |
পঞ্চগড় প্রেসক্লাবে ১৪৪ ধারা জারি, পুলিশ ও সেনা মোতায়েন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |