প্রতিনিধি কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ায় মেলা বসানো নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে প্রায় দেড় শ বছরের ঐতিহ্যবাহী গাজীকালু-চম্পাবতী মেলা বসানো নিয়ে জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের হোগলা চাপাইগাছি বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। এ সময় মেলার দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। এ ঘটনার জন্য বিএনপি ও জামায়াত নেতারা পরস্পরকে দোষারোপ করেছেন।

জামায়াতের আহত কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে আছেন জগন্নাথপুর ইউনিয়ন উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও মহেন্দ্রপুর আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান, জামায়াতের কর্মী কুদ্দুস প্রামাণিক (৭০), শহিদুল ইসলামের ছেলে তুহিন হোসেন, আক্কাস আলীর ছেলে জিহাদ হোসেন, সুকচাদের ছেলে জামাত আলী, জালালের ছেলে ইউনুস আলী। তাঁরা কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

বিএনপির আহত কর্মী-সমর্থকেরা হলেন খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান, বাঁখই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক টিপু সুলতান, গফুর শেখের ছেলে সুকুর শেখ, আজিজলের ছেলে শরীফ, আসাকুর রহমান। তাঁরা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় শ বছর ধরে হোগলা চাপাইগাছি বাজারে গাজীকালু-চম্পাবতী মেলার আয়োজন করে আসছেন স্থানীয় লোকজন। ১৭ মে মেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে মেলায় অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও জুয়া খেলার অভিযোগ তুলে মেলা বন্ধের দাবি তোলেন জামায়াত ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আর প্রশাসনের অনুমতি না মিললেও বিএনপির সমর্থকেরা মেলা বসানোর চেষ্টা করেন। এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় পুলিশ দফায় দফায় টহল দেয়। একপর্যায়ে সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংঘর্ষের কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, কয়েক শ জামায়াত নেতা-কর্মীর হাতে বিভিন্ন দেশি অস্ত্র। চলছে ইটপাটকেল নিক্ষেপ।

গতকাল রাত সাড়ে সাতটার দিকে কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ভিড় করেন। তাঁদের দেখতে আসেন উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন।

হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মেলায় অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও জুয়ার আসর বসানো হয়। সে জন্য প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। তবু বিএনপি ও মেলা কমিটি মেলার আয়োজন করেছে। আমরা মেলার বিষয় জানতে গেলে প্রতিপক্ষ দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে। আমিসহ আমাদের অনেকেই আহত হয়েছেন। আমরা থানায় মামলা করব।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিএনপির সমর্থক ও খোকসা সরকারি কলেজের প্রভাষক সরাফাত সুলতান বলেন, ‘জামায়াতের শত শত লোক আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। আমরা থানায় মামলা করব।’

প্রত্যক্ষদর্শী ও বাজারের কলা ব্যবসায়ী মফি শেখের ছেলে নাদের শেখ (৬৫) বলেন, ‘শত বছর ধরে মেলা হয়ে আসছে। আজ দেখলাম দুই পক্ষের দাবড়াদাবড়ি। জামায়াতের লোক বেশি ছিল। তাঁদের হাতে দেশি অস্ত্র ছিল।’

মেলায় অস্থায়ী দোকান বসিয়েছেন পাবনার চাটমোহরের দিলবার হোসেনের ছেলে আরজ আলী। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আসরের পর থেকে জামায়াত–শিবিরের লোকজন বারবার উঠে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন। পরে সন্ধ্যার একটু আগে শতাধিক লোক জড়ো হয়ে রামদা, হাঁসুয়া, লাঠিসোঁটা নিয়ে দোকানে হামলা চালায়। ভয়ে পালিয়ে গিছিলাম। পরে এসে দেখি, মালামাল কিছুই নেই। প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
এ সম্পর্কে উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির আফজাল হোসাইন বলেন,

ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জামায়াতের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করতে গেলে মেলা কমিটির লোকজন হামলা করেছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হবে।

শতবছর ধরে চলে আসা মেলায় এবার অনুমতি মেলেনি বলে জানিয়েছেন কুমারখালী থানার ওসি সোলায়মান শেখ। তিনি বলেন, মেলা বসানো নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এলাকার পরিবেশ শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।