প্রতিনিধি রাজশাহী

কাজের ফাঁকে পানি পান করছেন এক শ্রমিক। আজ রোববার দুপুরে রাজশাহী নগরের চৌদ্দপাই এলাকায়  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

‘দুপুর একটা পার হইলে আর থাকতি পারি না। মনে হয় গা পুইড়া যাইবো; কামকাজ ছাইড়া গাছতলায় যাইয়া ঘুম দিই। যাদের ভাতের চিন্তা নাই, তারা তো এসি ছেড়ে থাইকতে পারে। যদি পেটের ভাতের চিন্তা না থাইকতো, এই রৌদে পুইড়তাম না। কিন্তু রৌদে যদি কেহ কামকাজ না করে, তখন তো সবকিছুই থাইমা যাইবো।’

কথাগুলো বলছিলেন ফাইদুল ইসলাম (৫০)। তাঁর বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার চব্বিশনগর এলাকায়। সেখান থেকে রাজশাহী নগরের চৌদ্দপাই এলাকায় এসেছেন ঢালিতে বালু ভরার কাজে। তিনি জানান, গত দুই দিনের রোদে পুড়ে আজ তিনি মাথায় মাথাল পরেছেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ঘন ঘন পানি পান করছেন।

একই এলাকায় কাজ করছিলেন আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, তীব্র গরম। সকালে গরম ভাত খেয়ে আসেন। দুপুরে কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ দিয়ে পান্তাভাত খান। আর দিনে কয়েকবার স্যালাইন পান করেন। এতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়।

চাম্পা বিশ্বাসসহ কয়েকজন নারীও কাজ করছিলেন সেখানে। চাম্পা বলেন, পেটের দায়ে কাজ করতে হচ্ছে এই রোদে। প্রতিদিন কাজ শেষ করার পর মাথা ঝিম ঝিম করে। তবু কাজ করতে হচ্ছে।

মো. জলিল নামের এক শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমাদের আল্লাহ ছাড়া আর কেউ দেখার নাই। সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কাজ করি। তাতে পাই ৪৫০ টাকা। সেখান থেকে ৫০ থেকে ৭০ টাকা গাড়িভাড়ায় চলে যায়। তাহলে বাকি যা থাকে, তা দিয়ে কী করে চলি! তাহলে আমার শরীরে ঘাম যে ঝরে যাচ্ছে, তার মূল্য পাচ্ছি কি?’

এই শ্রমিকরা যখন কাজ করছিলেন, তখন বেলা সাড়ে ১১টা। তখনই রাজশাহীর তাপমাত্রার পারদ উঠে গেছে প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা উঠে গেছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সময় শহরে মানুষের আনাগোনা কম দেখা গেছে। যাঁরা বের হয়েছেন, তাঁরা ছাতা নিয়েছেন।  

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে সর্বশেষ ৬ মে ৪৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ওই সময় তাপমাত্রা কমে যায়। এরপর ৭ মে তাপমাত্রা বেড়ে হয় ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৮ মে এই তাপমাত্রা বেড়ে হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৯ মে তাপমাত্রা আরও ২ ডিগ্রি বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গতকাল শনিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখন পর্যন্ত এটা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চলতি মৌসুমের। আজ দুপুর ১২টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহীতে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এর মধ্যেই কাজ করছেন শ্রমজীবী মানুষ। আজ রোববার দুপুরে নগরের চৌদ্দপাই এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক তারেক আজিজ বলেন, রাজশাহীতে আজ রোববার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দুপুর ১২টায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেলা ৩টার দিকে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পাওয়া যাবে।

এই তাপপ্রবাহে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হিটস্ট্রোকজনিত কোনো রোগী সরাসরি ভর্তি না হলেও কয়েক দিন ধরে ডায়রিয়া, জন্ডিস, আমাশয়–জাতীয় রোগে আক্রান্ত মানুষ কিছুটা বেড়েছে। হাসপাতালের মুখপাত্র শংকর কে বিশ্বাস বলেন, এই সময়ে রোদে বের হলে ছাতা রাখতে হবে। চেষ্টা করতে হবে ছায়াযুক্ত জায়গায় থাকতে। সঙ্গে সুতি কাপড় পরিধান করা উত্তম। ফুটপাত বা রাস্তার পাশের পানি, জুস বা শরবত পান করা থেকে বিরত থেকে সঙ্গে সুপেয় পানি রাখতে হবে। বেশি বেশি পানি পানের পাশাপাশি তেল-চর্বিযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শিশু ও বয়স্করা। তাঁদের প্রতি বেশি যত্নশীল হতে হবে।