প্রতিনিধি শেরপুর
![]() |
হাতির আক্রমণে নিহত এফিলিস মারাকের পরিবার | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় বন্য হাতির আক্রমণে দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে কাংশা ইউনিয়নের দরবেশতলা ও বাঁকাকুড়া এলাকায় এ দুটি ঘটনা ঘটে। নিহত দুজনই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁদের মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দুটি পরিবার।
নিহত ব্যক্তিদের একজন আজিজুর রহমান (৪২) উপজেলার গান্ধিগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ছিলেন ভ্যানচালক। তাঁর আয়ে স্ত্রী ও তিন সন্তানের সংসার চলত। অন্যদিকে নিহত এফিলিস মারাক (৪৫) বড় গজনি অবকাশ কেন্দ্র এলাকার বাসিন্দা। তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর উপার্জনেই চলত স্ত্রী ও দুই সন্তানের সংসার।
ঘটনার রাতে আজিজুর রহমান গজনি দরবেশতলা ঝুরা এলাকা থেকে বালু আনতে গিয়েছিলেন। এ সময় একদল বন্য হাতির আক্রমণের শিকার হন তিনি। স্থানীয় লোকজন মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়িয়ে তাঁকে উদ্ধার করে ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর দিকে সাড়ে ১০টার দিকে বাঁকাকুড়ার কাঁচা রাস্তা দিয়ে তিনজনকে নিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন এফিলিস মারাক। পথে হাতির দল তাঁদের ওপর আক্রমণ করে। অন্য তিনজন পালিয়ে গেলেও এফিলিসকে হাতির একটি দল ধরে ফেলে। হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
আজিজুরের পরিবার জানায়, তিনি প্রতিদিন ৩০০–৪০০ টাকা আয় করতেন। বড় মেয়ের বিয়ে দেওয়া হলেও ছোট তিন ছেলে এখনো স্কুলে পড়ে। এফিলিসের ছেলে-মেয়েও ডিগ্রি পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন। দুই পরিবারই আর্থিকভাবে অসচ্ছল।
আজিজুরের স্ত্রী শিউলী আক্তার বলেন, খুব কষ্টে তাঁদের সংসার চলত। হাতির আক্রমণে তাঁর স্বামী মারা যাওয়ায় পরিবারে আয় করার মতো আর কেউ নেই। বাড়িভিটা ছাড়া তাঁদের আর কোনো জমিজমাও নেই। ভবিষ্যতে সন্তানদের নিয়ে তিনি কীভাবে চলবেন, তা তাঁর জানা নেই।
এফিলিসের স্ত্রী প্রীতিনাস হাদিমা বলেন, ‘দিনমজুরি কাম কইরা যে টাকাপয়সা পাইত, তা দিয়ে কোনোরহম সংসার চলত। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর অহন ছেলেমেয়েরে লইয়া কেমনে চলমু? সংসারই–বা কেমনে চলব? ছেলেমেয়ে লেখাপড়া খরচ কেমনে জোগাড় অইব?’
কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান বলেন, উপার্জনক্ষম দুই ব্যক্তির মৃত্যুতে পরিবার দুটি অসহায় হয়ে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন।
বন বিভাগের গজনি বিট কর্মকর্তা মো. সালেহিন নেওয়াজ জানান, ক্ষতিপূরণ পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, দ্রুতই প্রতিটি পরিবারকে তিন লাখ টাকা করে মোট ছয় লাখ টাকার ক্ষতিপূরণের চেক দেওয়া হবে।