প্রতিনিধি গাজীপুর

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বারমী বাজারের সাপ্তাহিক হাটের দৃশ্য। প্রতি বুধবার এ বাজার মৌসুমি ফলে সয়লাব হয়ে যায়। সকালে বরমী হাটের ফলপট্টিতে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বরমী বাজারের সাপ্তাহিক হাটের ফলপট্টি এখন দেশি ফলে সয়লাব। এখানে প্রতি সপ্তাহের বুধবার হাট বসে। শতবর্ষী এ হাটের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে চেনা চিত্র, টিনের ছাউনি দেওয়া দোকান আর ভোরের আলো ফোটার আগেই ব্যস্ত হয়ে পড়া ফলপট্টি।

ফলের মৌসুমে এই হাট যেন রঙিন এক উৎসবে পরিণত হয়। উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু দেশি ফল, যা শুধু পেট ভরায় না, মনও ভরায়। ফলের মৌসুমে ভোর হলেই শুরু হয় কর্মব্যস্ততা। হাটে ঝুড়ি, বাঁশের ডালি, পিঠে-মাথায় বস্তা নিয়ে একে একে হাজির হন চাষিরা। বাজারের ‘ফলপট্টি’ এলাকায় সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে। কাঁঠালের মিষ্টি ঘ্রাণ, লিচুর টক-মিষ্টি সুবাস আর আমের সতেজতা যেন বাতাসকেও সজীব করে তোলে। হাটের দিনে বাজারে পা রাখাই দায়। শহর থেকে আসা ক্রেতা, স্থানীয় গৃহিণী, স্কুলছাত্র—সবাই ফল কিনতে আসেন।

বুধবার বেলা ১১টায় হাটে গিয়ে দেখা যায়, ফলপট্টিতে দেশি বিভিন্ন ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। অর্ধেকের বেশি পেশাদার বিক্রেতা। পণ্যের মধ্যে আছে আম, লিচু, জামরুল, কলা, আনারস, পেঁপে, বেল, কলা, কাঁঠাল, শুকনা বরই, বাঙ্গি, অরবরই, করমচা, আমলকীসহ নানা ফল। দেশি পাকা আমের পাশাপাশি কাচা আমও বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া হাটে কদমী, চায়না-৩, পাতিসহ কয়েক জাতের লিচু বিক্রি হচ্ছে হাটে। অনেকে হাট থেকে পাইকারি দরে ফল কিনে ঢাকায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। কাঁঠাল এখনো তেমন পাকতে শুরু করেনি। আগাম কিছু পাকা কাঁঠাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, তবে দাম চড়া।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পাকা আম আকারভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাচা আমের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। লিচু জাতভেদে ১০০টি ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আনারস ২০ থেকে ৬০ টাকা, বেল ২০ থেকে ২০০ টাকা, কাঁঠাল ১৫০ থেকে ৬০০ টাকা, বাঙ্গি ১৫ থেকে ৪০ টাকা, শুকনা বরই প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, করমচার কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা এবং প্রতি হালি কলার দাম ১০ থেকে ৬০ টাকা।

দীর্ঘদিন ধরে বরমী বাজারে স্থায়ী দোকান নিয়ে ফলের ব্যবসা করেন আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, অন্যান্য বাজারের তুলনায় বরমী হাটে ফলের দাম অনেক কম। সরাসরি কৃষকের হাত থেকে ফল কেনার সুযোগ থাকে। আশপাশের চারটি উপজেলা থেকে হাটের দিনে বিক্রেতারা ফল বিক্রি করতে আসেন।

কাপাসিয়া উপজেলা থেকে নিজের গাছের লিচু বিক্রি করতে হাটে এসেছেন সুজন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘শহরে এই লিচু ৩০০ টাকা শ-এর নিচে পাইবেন না। আমরা বেচতেছি মাত্র ১৫০ টাকায়। এই লিচুর মধ্যে কোনো ওষুধ দেওয়া হয় নাই।’

সফিকুর রহমান নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘নিজের গাছের সাড়ে ১২ কেজি করমচা এনেছি। পাইকারি মাত্র ৭০০ টাকায় সব বিক্রি করে দিয়েছি। পরে ওই পাইকার সেগুলো প্রতি কেজি ২০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। এভাবেই দাম বেড়ে যায়। আমরা দাম পাই না।’

বরমী এলাকার বাসিন্দা মো. আল আমিন বলেন, ফলের মৌসুমে বরমী হাট জমজমাট হয়ে ওঠে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এই বাজার থেকে ফল কিনতে আসেন। বরমী হাটের দেশি ফলের কদর আছে আশপাশের কয়েক জেলাজুড়ে। এ ছাড়া গ্রাম্য পরিবেশে নিরাপদ ফল সংগ্রহের জন্য বরমী হাটের সুখ্যাতি আছে।